Skip to main content

ব্যস্ত নাকি?

"ব্যস্ত নাকি"?

অফিস-পরিসরে এই প্রশ্নটা অত্যন্ত বিপদজনক। মামুলি দায়সারা উত্তর দিয়ে এ'সব প্রশ্ন পাশ কাটাতে গিয়ে বহু রথী-মহারথী ধরাশায়ী হয়েছেন৷ মনে রাখবেন, এই প্রশ্ন যাঁরা করেন তাঁরা উত্তর নয়, সুযোগসন্ধানে ব্যস্ত। 

হয়ত সত্যিই আপনি কোনও জরুরী কাজে ব্যস্ত। সাদা মনে কাদা নেই তাই টপাৎ করে বলে দিলেন "হ্যাঁ দাদা, ব্যস্ত আছি বটে। শ্বাস ফেলবার সময় নেই মাইরি"। আবারও বলি, প্রশ্নকর্তাটি আপনার ব্যস্ততা বুঝতে চেয়ে প্রশ্ন আদৌ করেননি৷ তিনি আপনার সহকর্মী,  পাড়ার বন্ধু নয় যে আপনি ব্যস্ত না থাকলে আপনাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে স্টেশন রোডের ধারের মহেশদার চাইনিজ স্টল থেকে মোমো খাওয়াবে। আপনি কাজে ব্যস্ত না মনে মনে টুয়েন্টিনাইনের স্ট্র‍্যাটেজি সাজাতে ব্যস্ত, তা জেনে আপনার সহকর্মীর কোনও লাভ নেই৷ প্রশ্নটা নেহাতই প্রি-কাঁঠালভাঙা-মাথায়-হাতবুলোনো। কোনও দরকারেই আপনার কথা তাঁর মনে পড়েছে। কাজেই আপনি ব্যস্ত আছেন, সে'টা শুনলে ওঁর হাড় জ্বলবে৷ আর তিনি যদি 'ওপরওলা' হন, তা'হলে সেই হাড় জ্বলা গন্ধ আপনার নাকেও এসে ঠেকবে। তিনি মুখে হয়ত বলবেন " ওহ, আই সী" কিন্তু মনে মনে ভাববেন "কী এমন আমার ব্যস্তবাগীশ খাসনবিশ এলেন হে। খালি বাতেলা। ইনএফিশিয়েন্ট নিনকমপুপ"। আর তারপর আপনার ব্যস্ততার লেবুজলে কেরোসিন ঢেলে নিজের কাজের হ্যারিকেনটি আপনার হাতে ধরিয়ে নির্দ্বিধায় কেটে পড়বেন। ওই যে, আপনার ব্যস্ততায় কারুর কিছু এসে যায় না।

আর হ্যাঁ। যদি আপনি ভুলক্রমে ভালোমানুষির পালক-বোলানো সুরে বলে ফেলেন " না, না! ব্যস্ত আর কী৷ বলুন না৷ হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ" - জানবেন আপনি আপনি ফাইভস্টার চকোলেট ভেবে মৌমাছির চাকে কামড় দিয়েছেন। প্রশ্নকর্তা সেই সুযোগে কাজ, অকাজ যত আছে সব আপনার ঘাড়ে চাপিয়ে খানিকক্ষণ দেখনাই বাজে গপ্প ফাঁদবেন। আর সবচেয়ে বড় কথা, তিনি মনে মনে আপনার সম্বন্ধে ভাববেন "একটা ইউজলেস ইডিয়ট। কাজকম্ম নেই, সবসময় ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে"। জানবেন, ভালোমানুষদের নিয়ে বড়জোর সঞ্জীবের গল্প-উপন্যাস হতে পারে, অফিসের পেল্লায় সব কাজে তারা অচল। 

অতএব?

অফিসের " ব্যস্ত নাকি" মার্কা প্রশ্নের কি আদর্শ উত্তর নেই?

আছে। তবে মাছ ধরবেন উইদাউট টাচিং দ্য ওয়াটার। 

"ব্যস্ত? ওই আর কী"।

"ইকনমিকে রিভাইটালাইজ করতে গেলে তো আমাদের সবাইকেই সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হবে। তাই না"?

"আর বলবেন না..ব্যস্ততাটাই তো এখন নর্ম"।

অর্থাৎ বাজে প্রশ্নের মোকাবিলা বাজে উত্তরের মাধ্যমেই হওয়া উচিৎ।  তবেই অফিসের সম্পর্কগুলো সুন্দর ও মজবুত হয়৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু