Skip to main content

অমলকান্তির অফিসে


সকাল সকাল বসের তলব। 

অমলকান্তি তড়িঘড়ি ছুট দিলেন বসের ঘরের দিকে। পৌঁছে দরজায় একটা মোলায়েম টোকা। তারপর গুলকন্দ মেশানো গলায় শুধোলেন
"স্যার, আসব"?

উত্তর এলো টিনের ওপর ইটপাটকেল পড়া বাজখাঁই সুরে।

"আপনাকে নিশ্চয়ই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নজরুলগীতি গাওয়ার জন্য ডাকিনি। ভিতরে এসে উদ্ধার করুন"।

অমলকান্তি বুঝলেন হাওয়া সুবিধের নয়। নিজের গোবেচারা না-ঘরকা-না-ঘাটকা হাসিখানা মুখে সেঁটে ঘরের মধ্যে পা রাখলেন।

"আচ্ছা অমলকান্তিবাবু, আপনি কি আমায় বোকা ভাবেন? ডু ইউ থিঙ্ক আই অ্যাম আ ড্যাম ফুল"?

ভেবড়ে গেলেন অমলকান্তি। এই ধরণের প্রশ্নের সামনে অধোমুখ নেকুসম্রাট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কোনও উপায় থাকেনা৷ কিন্তু সকাল সকাল এই রাফায়েল-বোফর্স মেশানো আক্রমণের কারণটা ধরতে পারলেন না৷ 
শর্মা অ্যান্ড শর্মার ফাইলটা জমা হয়ে গেছে৷ 
গতকাল সন্ধ্যেয় ঘণ্টা দুই বাড়তি বসে গতমাসের স্টেটমেন্টখানাও রিকনসাইল করা হয়ে গেছে। 

তবে? 

সেই 'তবে'র তল আর পেলেন অমলকান্তি। কী একটা অতি-খুচরো প্রসঙ্গ তুলে উত্তমমধ্যম শুরু করলেন বস। মিউমিউ করে দু'চারটে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন বটে কিন্তু সেই মিউমিউ বসের মেজাজের আগুনে কেরোসিন হয়ে  ঝরে পড়ল। ঝাড়া মিনিট দশেক কথায় কথায় খড়মপেটা করে তবে অমলকান্তিকে মুক্তি দিলেন বস। 

ইস্তিরি করা পরিপাটি শার্ট প্যান্টের আড়ালে ভাঙচুর হয়ে যাওয়া মনটাকে লুকিয়ে কোনওক্রমে নিজের চেয়ারে এসে গা এলিয়ে দিলেন অমলকান্তি। কড়া করে এক কাপ ব্ল্যাক কফি না পেলেই নয়। সোজা হাঁক পাড়লেন;

- অ্যাই শিবু!

- এই যে অমলদা।

- কথা কি কানে যায় না? অফিসে আসিস কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোতে? মাইনেটা কি কোম্পানি মাগনা দেয়?

- সে কী অমলদা। সাড়া দিলাম তো।

- চোদ্দবার ডাকার পর।

- কই...আমি তো প্রথম ডাক শুনেই..।

- আমি কি মিথ্যে বলছি? অ্যাঁ? ইয়ার্কি হচ্ছে?

- ছি ছি। আপনি মিথ্যে বলবেন কেন।

- তুই কি আমায় বোকা ভাবিস? ডু ইউ থিঙ্ক আই অ্যাম আ ড্যাম ফুল?

- না না..সে কী!

- দ্যাখ শিবু, বাজে কথায় নষ্ট করার মত সময় আমার নেই। সামান্য এক কাপ কফির জন্য যদি এত কথা বলতে হয়, তা'হলে কাজ হয়েছে আর কী।

- আমি এখুনি কড়া করে এক কাপ ব্ল্যাক কফি নিয়ে আসছি অমলদা।

- কে চেয়েছে কড়া করে কফি? কে চায় ব্ল্যাক?

- ইয়ে..আপনি তো ওই কড়া ব্ল্যাক কফিই পছন্দ করেন..।

-  যত আজেবাজে কথা! ব্ল্যাককফি নাকি আমার পছন্দ। ইডিয়ট। বেশি দুধ বাড়তি চিনি দিয়ে এক কাপ নিয়ে আয় এখুনি। চট করে। ক্যুইক। আমার অত সময় নেই। বড়সাহেব একটা জরুরী কাজ দিয়েছেন।

শিবু কফি আনতে যেতেই খানিকটা শান্ত বোধ করলেন অমলকান্তি। 

ও'দিকে ওভেনে কফির সসপ্যানটা চাপাতেই শিবুর পকেটের ফোনটা বেজে উঠল। 
বাবা।

- হ্যালো।

- শিবু, শোন একটা জরুরী কথা ছিল..।

- কতবার বলেছি, অফিসে আমায় ফোন করবে না! হাজার রকমের দায়িত্ব আমার কাঁধে। অমলদা একটা জরুরী কাজ দিয়েছে। এখন ফোনে খেজুর করার সময় আমার নেই।

বলে ফোনটা খটাস্ করে কেটে দিলো শিবু।

Comments

Anonymous said…
Office life ki etotai sick and sucking? If yes, then office chere boi likhlei to paro

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু