Skip to main content

চিলেকোঠা কনভেনশন


- তুই পারলি কী করে রে বিলু? তোর পিসির ছাদে রাখা বয়াম থেকে চালতার আচার চুরি করতে গিয়ে নন্তু ধরা পড়ল। তুইই পাকড়াও করলি। তা বেশ করেছিস, গীতায় বলেছে ছাদের আচার রক্ষা করতে গিয়ে বন্ধুদের শায়েস্তা করা যেতেই পারে। নিজের পিসির আচার প্রটেক্ট করেছিস, আপত্তির কিছু নয়। সে অধিকার তোর আছে। কিন্তু তাই বলে যে'টুকু আচার নন্তু হাতে খাবলে নিয়েছিল, সে'টাও ওকে ফেরত দিতে বাধ্য করলি? আচার আক্রমণ করতে গিয়ে বন্দী হয়েছে, তাই বলে এমন ইনসাল্ট? আর তার চেয়েও বড় কথা..সে খবরটা তুই নন্তুর মেজকার কানে তুলতে গেলি রে?

- আমার কোনো উপায় ছিল না পুলুদা। পিসি এমন কড়া সুরে বললে...।

- শাট আপ! অক্টোবরে চিলেকোঠা কনভেনশনে স্পষ্ট বলা আছে আচার এবং আম চুরি অভিযানে কেউ বন্দী হলে তাকে অকুস্থল থেকে বের করে দেওয়া হবে ঠিকই কিন্তু তার হাত থেকে আচার বা আম কেড়ে নেওয়া কিছুতেই চলবে না। আর গার্জেনের কাছে কম্পলেইন তো নৈবচ। চিলেকোঠা কনভেনশনের কাগজে পাড়ার আরো চুয়ান্নটা ছেলের সঙ্গে তুই সই করিসনি? সেই চিলেকোঠা কনভেনশনের ডেক্লারেশনের প্রিয়াম্বেলে কি স্পষ্ট ভাবে লেখা ছিল না যে পাড়ার সীমানার মধ্যে কেউ সেই ডেক্লারেশনের বেয়াল্লিশটা ক্লজের খেলাপ করবে না? ক্লজ নম্বর তিনের সাবসেকশন ছয় বেমালুম ভুলে মেরে দিলি রে ব্যাটা কুইসলিং?

- মানছি ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু সে'টা পিসির চাপে বাধ্য হয়ে। তুমি আমার পিসিকে চেনো না পুলুদা! আমার বাবা অমন জাঁদরেল উকিল, কিন্তু পিসি একবার 'ভোম্বল' বলে ডাকলেই বাবা লেবুজল ভেজানো গলায় মিউমিউ করেন।

- চাপ সবারই থাকে চাঁদু। নন্তুর চাপ নেই? নন্তুর ওই মেগা-অসুর মার্কা মেজকার কাছে জ্যামিতি শেখে; রোজ এক ঘণ্টা করে। সেই এক এক ঘণ্টা এক একটা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মত। কিন্তু তাই বলে চিলেকোঠা কনভেনশনকে কাঁচকলা দেখাবে সে? আর আমি সে'টা হতে দেব ভেবেছিস? আমাকে কি সাধে কেউ কেউ ইউএন-দাদা বলে ডাকে রে? আমার দায়িত্বজ্ঞান নেই?

- তুমি ইউএন? ছাই! তুমি নিজের ধান্দায় থাকো, যে তোমায় তেল দেবে তুমি তারই দলে।  নন্তু নিশ্চয়ই তোমায় হাত করেছে।

- শাট আপ বিলু! শাট আপ! কনভেনশন ডকে তুলে আবার গলাবাজি? তুই জানিস কনভেনশনের অ্যানেক্সচার থেকে সতেরো নম্বর ক্লজ ইনভোক করে আমি তোকে আগামী এক মাসের জন্য পাড়ার ক্রিকেট টীম থেকে বের করে দিতে পারি? সে'সব স্যাংশন ঘাড়ে চাপলে তোর কী দশা হবে ভেবেছিস?

- পুলুদা! পুলুদা গো। এ'বারের মত ম্যানেজ করে দাও প্লীজ। প্লীজ। সবে ব্যাট হাতে একটু ফর্মে এসেছি। ম্যানেজ দাও, প্লীজ।

- ম্যানেজ করব? বাহ্, সে'টাই করি আর কী; ম্যানেজ। আজ তুই এ'টা করলি, কাল কেউ চিলেকোঠা কনভেনশনের বাইশ নম্বর ক্লজ লঙ্ঘন করে অন্যের প্রেমিকাকে গোপন চিঠি দেবে। পরশু কেউ উনচল্লিশ নম্বর ক্লজকে পাশ কাটিয়ে পাশের পাড়ার ছেলেদের পিকনিকে চাঁদা দিয়ে মাংস ভাত খেতে যাবে হ্যাংলাচন্দ্র হয়ে। গোটা পাড়া গোল্লায় যাক আর এ'দিকে আমি বসে ম্যানেজ করি। তাই না?

- পুলুদা! গত ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি করেছি, এমতাবস্থায় আমায় বাদ দেবে? তাও ওই নন্তুর জন্য? নন্তু যে তোমার নামে কেচ্ছা রটায় পুলুদা। সেদিনের ম্যাচে তুমি ক্যাচ ফেলার পর কী বলছিল জানো ব্যাটা নন্তু? বলে পুলুদার নাম ইউএন কেন? কারণ সে ইউজলেস নিনকমপুপ। আর তাই শুনে সবার সে কী অট্টহাসি। আমি শুধু মুখ গোমড়া করে এককোণে বসেছিলাম। মা কালী বলছি।

- চিলেকোঠা কনভেনশনের  বেয়াল্লিশ নম্বর ক্লজটা নন্তু ভুলে গেছে বোধ হয়। পুলু মল্লিকের কথাই শেষ কথা।  তোকে একটা চান্স আমি দেবো! কিন্তু একটা শর্তে। তোর পিসির চালতার আচার দু'শো গ্রাম আমার চাই। পারবি?

- খুব পারব।

- বেশ তা'হলে স্যাংশন মাফ। কিন্তু আচার ট্রান্সফার ঘটবে গোপনে। মিডিয়ায় বাইট দিয়ে ব্যাপারটা ছড়িয়ে ফেলো না যেন বিলুকুমার। যাক গে! আমি যাই এখন, নন্তুর মেজকার কাছে গোপনে নন্তুর বিড়ি খাওয়া নিয়ে একটা গুজব ট্রান্সফার করতে হবে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু