Skip to main content

ভবিষ্যতের ভূতের তান্ত্রিক



- কী ব্যাপার বলুন তো দাদা, বাসে উঠে থেকে দেখছি আপনি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন।

- দেখুন মশাই, দৃষ্টিতে যে কাম নেই, সে'টা আশা করি বুঝতে পারছেন।

- তাই বলে জানা নেই, আলাপ নেই; অমন বিশ্রী ভাবে তাকিয়ে থাকবেন?

- কচু দেখে শুয়োর থমকে দাঁড়াবে না?

- কী? কী বললেন? আমি কচু?

- ওহ, মন্দ লাগল? বেশ,  হিরের ঝিলিক দেখে জহুরির ড্যাবড্যাবে চাউনিটা স্বাভাবিক।

- আপনার মতলবটা কী বলুন দেখি?

- বলছি, তার আগে নিজের পরিচয় দিই। আমি অঘোর দাসমুন্সি।

- আমার নাম..।

- আপনার নামে আমার তেমন দরকার নেই।

- আজ্ঞে?

- আপনার নাম তো এই নশ্বর দেহ আর এই জাগতিক পরিচিতির।  ও দিয়ে কী হবে। বরং আপনার আত্মারামটিকে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি। ভেরি ইম্প্রেসড। আপনার আত্মার মধ্যে জেনুইন কোয়ালিটি আছে।

- বাপ থেকে বস আজ পর্যন্ত কেউ একবারও বললে না আমার মধ্যে কোয়ালিটি আছে। আর আপনি দেখছি এক্কেবারে আত্মায় ঢুকে পড়লেন। আপনি কি তান্ত্রিকটান্ত্রিক নাকি?

- করেক্ট। উনচল্লিশ বছর ধরে সাধনা করছি। আর জমানোর  শখ অবশ্য গত বাইশ বছরের। নেপালের জঙ্গলে এক কাপালিকের চ্যালা হয়ে তিন বছর ছিলাম। তাঁর আশীর্বাদেই যে'টুকু যা রপ্ত করতে পেরেছি।

- শখ?

- ওই, হবি আর কী। স্টাম্প বা দেশলাই বাক্স  জমানোর মত।

- কী জমানোর শখ? আপনার?

- ওই যে। আপনার মত স্যাম্পেল। রেফারেন্স সহ ডায়েরিতে টুকে রাখি।

- ঝেড়ে কাশুন, আর একটা স্টপেজ পর টালিগঞ্জ, আমি শেখানেই নামব।

- আমার শখ হচ্ছে জ্যান্ত মানুষের আত্মার কোয়ালিটি চেক করে ভবিষ্যতের ভূত চিহ্নিত করা এবং তাঁদের উত্তরণকে ট্র‍্যাক করা।

- এক্সকিউজ মি?

- জার্নাল রেখেছি মশাই। নাইনটি সেভেনে প্রথম ভবিষ্যতের ভূত আইডেন্টিফাই করেছিলাম মেচেদা লোকালে। সে ভদ্রলোক ভূতে কনভার্ট হয়েছিলেন দু'হাজার সাতে। বর্তমানে ন্যাশনাল লাইব্রেরির ডর্মিটরিতে আছেন।

- ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে ডর্মিটরি?

- ভূতের অফ কোর্স। সে খোঁজ পেতে আমায় কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি।

- আপনি গাঁজা দিচ্ছেন?

- কোয়ালিটি কল্কে পকেটে রাখি, তবে তা নেহাতই সাধনার স্বার্থে। ইন্টক্সিকেশন নিয়ে আদেখলামো আমার নেই।

- তা আমি যে কোয়ালিটি ভূত হতে চলেছি সে'টা কী করে বুঝলেন স্যার?

- আত্মা ভেঙেচুরে নরম না হয়ে এলে কোয়ালিটি ভূত জেনারেট করা মুশকিল। টানটান ত্যাঁদড় প্রতিবাদী আত্মাকে ভূতে কনভার্ট করা চাট্টিখানি কথা নয়। মৃত্যুর পরেই ত্যাঁদড় তেঁনারা ছটফট করেন মুক্তির জন্য, ফসকে বেরিয়েও পড়েন। কিন্তু মাখনের মত ভূত বনে যান আপনাদের মত ন্যাতপেতে আত্মা।

- ন্যাতপেতে?

- ওই। বাপ টু বস টু নেতা; চোখ বুজে সক্কলকে 'ইয়েস স্যার, আজ্ঞে স্যার' ফায়্যার করে করে যে আত্মা পান্তা ভাতের দলা বনে গিয়েছে। ফ্রীডম অফ এক্সপ্রেশনকে যে আত্মা ডেমোক্রেসির বইয়ে বুকমার্কের মত ঢুকিয়ে রেখে সেই বইকে কিলো দরে বেচে দিয়েছে। স্পষ্ট দেখতে পারছি সে সব গুণই আপনার আত্মার রয়েছে। 

- যত্তসব বাজে বাতেলা। সরুন দেখি, এ'বার আমি নামবো।

- চিন্তা নেই মশাই, ইতিমধ্যে যথেষ্টই নেমে পড়েছেন। আপনার রেফারেন্স টুকে রাখলাম। ভবিষ্যতে ভূতের ডর্মিটরিতেই দেখা করতে আসব, কেমন?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু