Monday, February 18, 2019

ভবিষ্যতের ভূতের তান্ত্রিক



- কী ব্যাপার বলুন তো দাদা, বাসে উঠে থেকে দেখছি আপনি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন।

- দেখুন মশাই, দৃষ্টিতে যে কাম নেই, সে'টা আশা করি বুঝতে পারছেন।

- তাই বলে জানা নেই, আলাপ নেই; অমন বিশ্রী ভাবে তাকিয়ে থাকবেন?

- কচু দেখে শুয়োর থমকে দাঁড়াবে না?

- কী? কী বললেন? আমি কচু?

- ওহ, মন্দ লাগল? বেশ,  হিরের ঝিলিক দেখে জহুরির ড্যাবড্যাবে চাউনিটা স্বাভাবিক।

- আপনার মতলবটা কী বলুন দেখি?

- বলছি, তার আগে নিজের পরিচয় দিই। আমি অঘোর দাসমুন্সি।

- আমার নাম..।

- আপনার নামে আমার তেমন দরকার নেই।

- আজ্ঞে?

- আপনার নাম তো এই নশ্বর দেহ আর এই জাগতিক পরিচিতির।  ও দিয়ে কী হবে। বরং আপনার আত্মারামটিকে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি। ভেরি ইম্প্রেসড। আপনার আত্মার মধ্যে জেনুইন কোয়ালিটি আছে।

- বাপ থেকে বস আজ পর্যন্ত কেউ একবারও বললে না আমার মধ্যে কোয়ালিটি আছে। আর আপনি দেখছি এক্কেবারে আত্মায় ঢুকে পড়লেন। আপনি কি তান্ত্রিকটান্ত্রিক নাকি?

- করেক্ট। উনচল্লিশ বছর ধরে সাধনা করছি। আর জমানোর  শখ অবশ্য গত বাইশ বছরের। নেপালের জঙ্গলে এক কাপালিকের চ্যালা হয়ে তিন বছর ছিলাম। তাঁর আশীর্বাদেই যে'টুকু যা রপ্ত করতে পেরেছি।

- শখ?

- ওই, হবি আর কী। স্টাম্প বা দেশলাই বাক্স  জমানোর মত।

- কী জমানোর শখ? আপনার?

- ওই যে। আপনার মত স্যাম্পেল। রেফারেন্স সহ ডায়েরিতে টুকে রাখি।

- ঝেড়ে কাশুন, আর একটা স্টপেজ পর টালিগঞ্জ, আমি শেখানেই নামব।

- আমার শখ হচ্ছে জ্যান্ত মানুষের আত্মার কোয়ালিটি চেক করে ভবিষ্যতের ভূত চিহ্নিত করা এবং তাঁদের উত্তরণকে ট্র‍্যাক করা।

- এক্সকিউজ মি?

- জার্নাল রেখেছি মশাই। নাইনটি সেভেনে প্রথম ভবিষ্যতের ভূত আইডেন্টিফাই করেছিলাম মেচেদা লোকালে। সে ভদ্রলোক ভূতে কনভার্ট হয়েছিলেন দু'হাজার সাতে। বর্তমানে ন্যাশনাল লাইব্রেরির ডর্মিটরিতে আছেন।

- ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে ডর্মিটরি?

- ভূতের অফ কোর্স। সে খোঁজ পেতে আমায় কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি।

- আপনি গাঁজা দিচ্ছেন?

- কোয়ালিটি কল্কে পকেটে রাখি, তবে তা নেহাতই সাধনার স্বার্থে। ইন্টক্সিকেশন নিয়ে আদেখলামো আমার নেই।

- তা আমি যে কোয়ালিটি ভূত হতে চলেছি সে'টা কী করে বুঝলেন স্যার?

- আত্মা ভেঙেচুরে নরম না হয়ে এলে কোয়ালিটি ভূত জেনারেট করা মুশকিল। টানটান ত্যাঁদড় প্রতিবাদী আত্মাকে ভূতে কনভার্ট করা চাট্টিখানি কথা নয়। মৃত্যুর পরেই ত্যাঁদড় তেঁনারা ছটফট করেন মুক্তির জন্য, ফসকে বেরিয়েও পড়েন। কিন্তু মাখনের মত ভূত বনে যান আপনাদের মত ন্যাতপেতে আত্মা।

- ন্যাতপেতে?

- ওই। বাপ টু বস টু নেতা; চোখ বুজে সক্কলকে 'ইয়েস স্যার, আজ্ঞে স্যার' ফায়্যার করে করে যে আত্মা পান্তা ভাতের দলা বনে গিয়েছে। ফ্রীডম অফ এক্সপ্রেশনকে যে আত্মা ডেমোক্রেসির বইয়ে বুকমার্কের মত ঢুকিয়ে রেখে সেই বইকে কিলো দরে বেচে দিয়েছে। স্পষ্ট দেখতে পারছি সে সব গুণই আপনার আত্মার রয়েছে। 

- যত্তসব বাজে বাতেলা। সরুন দেখি, এ'বার আমি নামবো।

- চিন্তা নেই মশাই, ইতিমধ্যে যথেষ্টই নেমে পড়েছেন। আপনার রেফারেন্স টুকে রাখলাম। ভবিষ্যতে ভূতের ডর্মিটরিতেই দেখা করতে আসব, কেমন?

No comments: