Skip to main content

প্রমোশন


এই গতকালের ব্যাপার। স্প্রেডশিটের দিকে চোখ রেখে আনমনে আন্দুলের কথা ভাবছিলাম। আন্দুল কেন? তেমন নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। স্কুলের বন্ধু নাড়ু একটা ফ্ল্যাট কিনেছে আন্দুলে, বহুদিন যাব যাব করেও যাওয়া হয়নি। আন্দুলের বদলে জর্জ অরওয়েল নিয়েও ভাবা যেত, ভাবা যেত খৈনি আর গঙ্গার ঘাট নিয়ে। মোদ্দা কথা এ মড়া স্প্রেডশিট থেকে মনকে লেভিটেট করে উঠিয়ে নেওয়াটাই জরুরী।

"তোমার তো পামিস্ট্রিতে বেশ ন্যাক আছে, তাই না নির্মল"?

টেবিলের ও'পাশ থেকে ভেসে আসা তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর আর অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নে সামান্য চমকে উঠতে হল। বসের প্রশ্ন। পার্সেন্টেজ আর প্রজেকশন বাদ দিয়ে পামিস্ট্রি? আন্দুলের আলুথালু ভাব থেকে মনটাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে টানটান হয়ে বসতে হলে।

"আগ্রহ। পড়াশোনা। দু'টোই। কিন্তু কী ব্যাপার স্যর? মার্কেট শেয়ারের ট্রেন্ড বুঝতে জ্যোতিষের অ্যাসিস্টেন্স নেওয়ার কথা ভাবছেন নাকি"?

"প্রমোশন এক্সপেক্ট করছি হে নির্মল। হেডঅফিস থেকে হিন্ট একটা এসেছে। রীতিমত পসিটিভ। তাই ভাবছিলাম তোমার জ্যোতিষবিদ্যের দৌড় একবার বাজিয়ে দেখি"।

"হেডঅফিস যখন বলেইছে..."।

" অলমোস্ট শ্যিওর। কালকেই সুখবরটা পাওয়া উচিৎ। তবু। চাপা টেনশন তো থাকবেই। আমার মুখ দেখে কিছু প্রজেক্ট করতে পারছ কি"?

"মুখ দেখে ভাগ্য বিচার? সে'সব বিজ্ঞাপনি বুজরুকিতে আমি নেই। আপনার রাশিটা কী স্যর? বাংলা মতে"?

" বলে রাখি; আমার এ'সবে আদৌ তেমন ফেথ নেই। জাস্ট একটা কিউরিওসিটি মাত্র। আমার রাশি...ইয়ে...মেষ.."।

"মেষ..? হুঁ। হুমমম"।  জ্যোতিষ আমার নেশা এবং অধ্যাবসায়ের ক্ষেত্র; মগজ ও হৃদয় দুইই চট করে চনমনে হয়ে উঠল। চোখের সামনে গ্রহ-নক্ষত্রের জটিল নক্সা ছড়িয়ে পড়ল নিমেষের মধ্যে।

" কী ব্যাপার নির্মল? জটিল ক্যালকুলেশন শুরু করলে মনে হচ্ছে"?

"জটিল বটে। তবে স্পষ্ট। প্ল্যানেটারি মুভমেন্ট যা দেখছি স্যর; ইয়ে..."।

" ইয়ে মানে কী"?

"হবে না। আপনার প্রমোশন এ'বারে কিছুতেই হবে না"।

" হোয়াট"?

"হেডঅফিস গাঁজা ছেলেভুলোনো খবর পাস করেছে। আপনার প্রমোশন হতে হলে বেস্পতির অর্বিট চেঞ্জ করতে হয়। সে'টা ইম্পসিবল"। গলার মধ্যে থেকে আত্মবিশ্বাস ও দিব্যদৃষ্টি মেশানো একতাল ইস্পাত উঠে এলো যেন৷

আর তখনই বসের মুখের অন্ধকার আর আচমকা শক্ত হওয়া চোয়ালে ঘরের তাপমাত্রা একধাক্কায় চার ডিগ্রী নেমে গেলো।

" যত্তসব ইডিয়টিক মাম্বোজাম্বো। প্ল্যানেটারি মোশনস না কাঁচকলা। আর তোমার আধঘণ্টাতেও রিপোর্ট শেষ হয়নি নির্মল? আর কতক্ষণ "?

***

আজ চারপাশটা কেমন ঘোলাটে ঠেকছে। হেডঅফিস থেকে খবর এসেছে, বসের প্রমোশনটা হয়নি। 'লাস্ট মোমেন্ট এমার্জেন্সি'র অজুহাতে আটকে গেছে। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই ভদ্রলোক আমার ওপর অকারণ খ্যাঁচম্যাচ করে চলেছেন।

এইমাত্র মনে পড়ল এ'বছর আমারও প্রমোশনটা হওয়ার কথা, খবর আসবে সামনের সপ্তাহে। মোটের ওপর নিশ্চিন্তই ছিলাম; সদ্য ধারণ করা গোমেদটা যে কাজ করবেই তা নিয়ে কোনো সন্দেহ গতকাল পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু আজ বসের মেজাজ দেখে নিজের জ্যোতিষবিদ্যের ওপর কনফিডেন্সটা বেশ নড়ে গেছে। বসকে চ্যাটাং সুরে কথা বলার প্রভাব সম্ভবত গ্রহ-নক্ষত্রকে বিশ্রীভাবে ভড়কে দিচ্ছে। এখন টেনশন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে।

ভাবছি আগামীকাল হাফছুটি নিয়ে আন্দুলে নাড়ুর ফ্ল্যাট থেকে একটু ঘুরে আসব। নাড়ু বরাবর বলে বেস্পতির মুভমেন্টের চেয়ে সিঙ্গল মল্টের কোয়ালিটি হৃদয়ে বেশি প্রভাব ফেলে; আজ আমার খুব নাড়ুকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু