Skip to main content

ভ্যালেন্টাইন


- অ্যালগো,ও  অ্যালগো।

- শুনি অনুপবাবু, শুনি।

- সুতপার সঙ্গে তা'হলে..।

- দেখা করতে যাবেন না।

- কিন্তু অ্যালগো...। যদি আমরা...।

- বাইশ হাজার দু'শো বত্রিশটা 'কিন্তু' আর তেরো হাজার সাতশো উনিশটা 'যদি' পেরিয়ে স্প্রেডশিট এ সিদ্ধান্ত এসেছে। উপায় নেই।

- কিন্তু অ্যালগো, সুতপার সে হাসি যে ভুলে যাওয়ার নয়। ওর নরম চাউনি। মনটাও কলাপাতা সবুজের মত সরল।

- কাব্যিক রেফারেন্স। ইলজিকাল কম্পারিসন নোটেড, লাভ রেসিডিউ স্পটেড।  তবে সিম্পটম যে গোলমেলে তা স্পষ্ট। দু'জনেই দীর্ঘদিন একা থেকে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছেন। কাল ভ্যালেন্টাইনস ডে। গভর্নমেন্ট বায়োমেট্রিক সার্ভার থেকে আপনাদের দু'জনের হরোমনাল আর সাইকোমেট্রিক রিপোর্ট কম্পেয়ার করে দেখে নিয়েছি। এই ডেট ভালোই লাগবে আপনাদের দু'জনের।

- তবে এত গোলমাল পাকাচ্ছ কেন?

- এই প্রেমে সাত নম্বর ডেট পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনা বিরানব্বুই শতাংশ।   বিয়ের সম্ভাবনা তেতাল্লিশ শতাংশ। বিয়ে হলে বিয়ের সাত বছরের মাথায় রোম্যান্স শেষ হয়ে যাওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট; একাশি শতাংশ সম্ভাবনা।  ঝগড়াঝাঁটি,  বিশ্রী ডিভোর্স। জেনেটিক ম্যাপিং বলছে সুপার ইন্টেলিজেন্ট সন্তান। কিন্তু আপনাদের  ভাঙাচোরা প্যারেন্টিং তাকে শয়তানির দিকে ঠেলে দেব; সম্ভাবনা সতেরো শতাংশ। আর সে সন্তানের রাজনৈতিক নেতা হওয়ার সম্ভাবনা তেইশ শতাংশ।  দেশের জন্য, দশের জন্য; সরকারি অ্যালগোরিদম হিসেবে আমি এই রিস্ক মঞ্জুর করতে পারি না।

- অ্যালগো, তুমি তো পারো আমাদের চারপাশের ভ্যারিয়েবল ট্যুইক করে আমাদের বিয়েটা ভালোভাবে টিকিয়ে রাখতে, তা'হলে সন্তানও বখে যাবে না। এমন কী আমাদের সন্তান না থাকলেও..।

- নাগরিকদের স্বার্থে ভ্যারিয়েবল অ্যাডজাস্ট করব? এই নিয়ে গত দু'মাসে এই আপনার তৃতীয় অনুরোধ। আগামী এক মাসে আর একটা হলেই তিন দিনের করেকশন ক্যাম্প।

- সুতপাকে ছাড়া আপনি বাঁচবা না।

- ডাহা মিথ্যে। সুতপা আর আপনার আয়ুর যোগাযোগ অঙ্ক কষে বের করলে আপনার হাসি পাবে। তবে তা বের করা সম্ভব কিন্তু।

- এই আমাদের স্বাধীনতা?

- স্বাধীনতা?  আনডিফাইনড টার্ম। নো কমেন্টস।


***

অস্থির হয়ে পড়ছিলেন অনুপ। গত আধ ঘণ্টায় এই নিয়ে তিন নম্বর কাপ কফি শেষ। রেঁস্তোরার মূল দরজার দিকে বারবার চোখ রাখতে হচ্ছিল, সুতপার আসার সময় হয়ে গেছে। দু'জনেই প্রস্তুত কিছুদিন করেকশন ক্যাম্পে কাটাতে।

সুতপা যখন এসে পৌঁছল তখন তাঁর মুখে ক্লান্তি মাখানো যুদ্ধ জয়ের হাসি।

- আমি ভয় পাইনি অনুপ!
- আমিও না। বিশ্বাস করো, একটুও না।
- রাখুক করেকশন ক্যাম্পে আমাদের। একসঙ্গে থাকবই।
- অ্যালগোর বারণ সত্ত্বেও বিয়ে পর্যন্ত এগোলে তিরিশ বছর করেকশন ক্যাম্পে, কিন্তু সুতপা; তোমার জন্য আমি তিনশো বছর সে ক্যাম্পে কাটাতে পারব। কোনো সরকারি অ্যালগোর বাপের ক্ষমতা নেই আমায় দমিয়ে দেয়। আমি তোমায় ভালোবাসি।
- আমিও। তোমার জন্যই সমস্ত কিছু অনুপ, এ পাগলামোটুকু পর্যন্ত। এত ডেটিংয়ের টেনশন নিয়ে কী হবে বলবে? কালকেই বিয়ে সেরে ফেলি? প্লীজ?

অনুপের হাত তরতরিয়ে সেঁধিয়ে গেল সুতপার হাতে। বাতাসে তখন কফির সুবাস আর 'না তুম হমে জানো, না হম তুমহে জানে'র সুর।

***

- সরকারবাহাদুর।
- এই যে অ্যালগো, রিপোর্ট দেখেছি। গুড জব।
- গুড জব? আনআইডেন্টিফাইড টার্ম। নো কমেন্টস।
- তা, কিছু বলবে?
- আপনার ভ্যারিয়েবল অ্যাডজাস্টমেন্ট লিমিট ফুরিয়েছে।
- আমি নাগরিক নই, আমি সরকারবাহাদুর। আমার লিমিট আমার হাতে। লিমিট রিসেট করো। সার্ভার বলছে  অনুপ সুতপার মত আরো অন্তত ন'টা বিয়ে করাতে হবে।
- রিসেট ডান্। আরও ন'টা? শিওর? সিস্টেম অনুযায়ী অনুপ সুতপার দেখা হওয়ারই কথা নয়। আপনার কথা মত ভ্যারিয়েবল অ্যাডজাস্ট করে তাদের প্রেমে ফেলতে হয়েছে। দেশের কত ক্ষতি...।
- চোপ! অ্যালগোর অত বাতেলা কীসের? আমায় নাগরিক পেয়েছ?
- আপনি সরকারবাহাদুর।
- শোনো, অনুপ-সুতপার মাধ্যমে স্রেফ একজন মরিয়ার্টি তৈরি হবে। আগামী কুড়ি বছরের মাথায় আমাদের পার্টির অন্তত দশজন মরিয়ার্টি প্রয়োজন। নয়ত নিঁখুত জেনেটিক ম্যাপিংয়ে যে'হারে শার্লক তৈরি হওয়া শুরু হয়েছে, খুব বেশিদিন আর আমরা জনগণকে মুঠোয় নিয়ে চলতে পারব না। বুঝেছ অ্যালগো?
- কন্ট্রোলড বার্থ থ্রু চোজেন প্যারেন্টস..আরও নয় জোড়া প্রেম। আরও নয় জন মরিয়ার্টি। এক্সেপশন মডিউল বীং ইনিশিয়েটেড সরকারবাহাদুর।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু