Skip to main content

যুদ্ধটুদ্ধ


কিছু বই শুরু করে ফাঁপরে পড়তে হয়। এই যেমন উইলিয়াম শিরার সাহেবের লেখা দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ থার্ড রাইখ; আ হিস্ট্রি অফ নাজি জার্মানি। এ মলাট থেকে ও মলাটের মধ্যে অর্ধেক রাশিয়া ঢুকে যায়; এমন সাইজ সে বইয়ের। বইয়ের এক-চতুর্থাংশই পড়া হয়েছে, কাজেই এ বই সম্বন্ধে বিশদভাবে লেখা মুশকিল। শিরার সাহেবের একটা গোলমেলে দিক হচ্ছে তিনি বেশ সোজাসুজি ভাবে হোমোসেক্সুয়ালিটির বিরুদ্ধে; তাঁর লেখায় সে বায়াসের আভাস মাঝেমধ্যে ফুটে উঠেছে। তবে বইয়ের গুরুত্ব অন্য জায়গায়, নাৎসি জার্মানীর শুরুর দিনগুলো থেকে  দুর্দান্ত ডিটেলে লেখা হয়েছে, কোট করা হয়েছে প্রচুর জরুরী দলিল দস্তাবেজ এবং কাগজপত্র। আগ্রহীদের জন্য এ বইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

যতটুকু পড়েছি, তা'তে দু'টো ব্যাপার বেশ ইন্টারেস্টিং।

এক নম্বর।
যুদ্ধ থেকে যেনতেন প্রকারেণ গা বাঁচাতে গিয়ে অনেক সময় অনেক দেশ এবং নেতা আরো ভয়াবহ বিপদ এবং খুনোখুনির অন্ধকার ডেকে এনেছেন। ভার্সেই চুক্তিকে হেলায় পাশ কাটিয়ে যখন নাৎসিবাহিনী রাইনল্যান্ডে ঢুকে পড়ে, তখন নাকি জার্মানি কিছুতেই পালটা আঘাত হজম করার পরিস্থিতিতে ছিল না। কিন্তু যুদ্ধবিগ্রহের ঝামেলা থেকে গা বাঁচাতে চুপটি করে বসে রইল ফ্রান্স। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলিনও স্পীকটি নট। সে'ভাবেই বেদখল হল অস্ট্রিয়া। এরপর হিটলারের দুঃসাহস আরো মজবুত হল, নজর গিয়ে পড়ল চেকোস্লোভাকিয়ার ওপর। গায়ে পড়া ভালোমানুষির নেশায় চেম্বারলিন সাহেব উঠেপড়ে লাগলেন হিটলারকে তোয়াজ করে যুদ্ধ আটকাতে। প্রায় নিজেই মধ্যস্ততা করে অসহায় চেকোস্লোভাকিয়াকে হিটলারের শ্রীচরণে নিবেদন করলেন, ফের চুপ থাকলে ফ্রান্স। ইতিহাস বলছে তখনও যদি হিটলারকে সম্মুখসমরে আটকানো হত; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা দিব্যি রুখে দেওয়া যেত। কাজেই  যুদ্ধের কথা শুনলেই কানে তুলো গুঁজতে হলে মুশকিল; চেম্বারলিন সাহেব তা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিলেন।

দু'নম্বর।
যুদ্ধ ভয়াবহই। আত্মরক্ষার খাতিরে যুদ্ধের প্রয়োজন পড়ে, তেমনই দেশের সেনাবাহিনীর প্রয়োজন দেশের এবং দশের সমর্থন; নয়ত তারা প্রাণপণ লড়বেন কী'ভাবে? কিন্তু এই প্রয়োজনের খাতিরে যুদ্ধ ও তার সমর্থন যাতে যুদ্ধ-যুদ্ধ নেশার উদ্রেক না করে, সে ব্যাপারে সচেতন হওয়াও জরুরী।  সামরিক প্রয়োজন অতি সহজে সামরিক জিগিরে পরিণত হতে পারে; ইতিহাসে তার অসংখ্য উদাহরণ ছড়িয়ে আছে। সে জিগির যে কী খতরনাক হতে পারে তা টের পেয়েছিল জার্মানরা। প্রয়োজনের যুদ্ধ অচিরেই পরিণত হয়েছিল খুনে আগ্রাসী হুঙ্কারে।  প্রসঙ্গত,  মহাভারতে কৃষ্ণ বলেছেন প্রয়োজনে যুদ্ধ করতেই হবে। কিন্তু যুদ্ধ যে ফুর্তি আর সেলিব্রেশনের ব্যাপার; তেমন কোনো হিন্ট তিনি সম্ভবত ড্রপ করেননি।

যা হোক, এ বইটা শেষ করা দরকার। যে গতিতে পড়ছি (শুনছি), মার্চের আগে শেষ করতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু