Skip to main content

অপচয়

- হোয়াই শুড উই হায়্যার ইউ?

- কারণ...কারণ আমি জানপ্রাণ লাগিয়ে কাজ করব স্যার৷ দেখবেন! যে কোনো কাজ! প্রয়োজনে দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে না খেয়ে...অনবরত কাজ করে যাব। ফ্যাক্টরি থেকে কোথাও বেরোব না....।

- মিস্টার সেন। ফ্যাক্টরি ফ্লোরে প্রাণপাত করার জন্য ক্যান্ডিডেট কম পড়েনি। আপনার মত অন্তত হাজারখানেক মানুষের আবেদনপত্র জমা পড়েছে। চাকরীটা তাদেরও জন্যেও ততটাই দরকারী মিস্টার সেন। যাকগে, অন্য প্রশ্নে আসি। আগের চাকরীটা গেল কী করে?

- বিশ্বাস করুন, দোষ আমার ছিল না৷ যন্ত্রটা আপনা থেকেই স্লো ডাউন করেছিল; আমার অপারেট করার ভুলে নয়। তা'তে প্রডাকশন গ্রোথ পয়েন্ট ফাইভ পার্সেন্ট কমে গেছিল চার মিনিটের জন্য। তবে জবাবদিহি করার কথা ছিল মেন্টেনেন্স টীমের, অপারেটর হিসেবে আমার কিছুই করার ছিল না।

- আপনার এই ঘ্যানঘ্যান করার স্বভাবটা কি পুরনো?

- স্যর, বিশ্বাস করুন...।

- আজকের ইন্টারভিউতে যদি কিছু একটা করে না উঠতে পারেন মিস্টার সেন...।

- আমার বেকারির তিরিশ দিন পূর্ণ হবে। আর তা'হলে কাল ভোরে ফায়্যারিং স্কোয়্যাড। সরকারী  মেমো এসে গেছে।

- ভাবতে অবাক লাগে, একশো দশ কি বারো বছর আগেও আপনারই মত বেকার মানুষগুলোকে দিনের পর দিন বাঁচিয়ে রাখা হত। এমন কী অবসরপ্রাপ্ত প্রতিটা মানুষকেও বাঁচতে দেওয়া হত। সেই দিনগুলো সম্বন্ধে আপনার কী মতামত মিস্টার সেন?

- অপচয়।  রিসোর্সের তীব্র অপচয়। যার ফলে মানুষকেই ভুগতে হয়েছে। আর সেই সময় শুধু বেকার বা বৃদ্ধরাই নন, অনেক মানুষ এমন সব খেলো জীবিকায় নিজেদের গা ভাসিয়ে রেখেছিলেন যে'খানে তাদের সমাজে নেট প্রডাকশন-ওয়াইজ কন্ট্রিবিউশন ছিল জিরো, অনেক ক্ষেত্রে নেগেটিভ। 

- তেমন কিছু প্রফেশনের উদাহরণ দিতে পারেন?

- কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, অভিনেতা...এ'রকম আরো দু'শো বত্রিশ রকমের জীবিকায় থাকা যত মানুষ; যাদের ইভল নিউক্লিয়াস বলা হত। দ্য গ্রেট পার্জিং অফ টু থাউজ্যান্ড অ্যান্ড সেভেন্টিটুতে এ'দের সবাইকে...। এ'দের সবাইকে ফায়্যারিং স্কোয়্যাডের সামনে রেখে...।

- আপনার গলা কাঁপছে মিস্টার সেন, আপনিও কি আন্ডারগ্রাউন্ড কবিতা অ্যাক্টিভিস্টদের মত এদের প্রতি সিম্প্যাথেটিক?

- না! না! বিশ্বাস করুন স্যার ও'দের আমি ঘেন্না করি। যারা এক দানা সম্পদও নষ্ট করে তাদের আমি সহ্য করতে পারিনা। আমি আমাদের কন্সটিটিউশনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, আর পাঁচটা সৎ নাগরিকের মতই। 

- আই মাস্ট সে মিস্টার সেন, আপনাকে আমার তেমন অপছন্দ হয়নি।

- রিয়েলি স্যর?

- রিয়েলি! এই ফ্যাক্টরিতে আপনি একদম বেমানান হবেন না। হিউম্যান রিসোর্সকে বলে দিচ্ছি আপনার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করতে। ওই ম্যান্ডেটরি বেসিক ব্যাপার। আপনার দুই জেনারেশনের মধ্যে যদি কোনো ইভল স্কোয়্যাডের মানুষ ছিল কিনা; ফর্ম্যালিটি মাত্র। আর তারপর আপনার একটা শপ ফ্লোর প্রডাক্টিভিটি টেস্ট হবে। আজকেই। কঙ্গ্র‍্যাচুলেশনস মিস্টার সেন। 

- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। থ্যাঙ্কিউ। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু