Skip to main content

সুইসাইড পয়েন্ট


- সুইসাইডটা কি ঠিকঠাক হয়নি?

- আজ্ঞে?

- না মানে, স্পষ্ট ঝাঁপ দিলাম। ওভার ব্রীজ থেকে ডায়রেক্ট লাইনের ওপর। ট্রেন দেখেই ঝাঁপিয়েছি। টাইমিংয়েও ভুলচুক করিনি বলেই মনে হয়। অথচ...।

- কচুকাটা হয়ে পড়ে থাকার বদলে এই অদ্ভুত এলাকায় কী করে এসে পড়লেন...সে'টাই ভাবছেন তো?

- আজ্ঞে। ঠিক তাই। মানে, এতটা ভেবড়ে গেছি না..। আপনাকে দেখতে পেয়ে ভাবলাম জিজ্ঞেস করেই ফেলি।

- মরেও মরেননি। 

- সর্বনাশ! মরেছি? কিন্তু মরিনি?

- বাহ্। বেশ চট করে বুঝে গেলেন দেখছি।

- ও মা! না! এ কী! কিস্যু বুঝিনি। আর এই জায়গাটাই বা কোথায়..মাটি নীল, আকাশ নীল...এক্কেবারে বিতিকিচ্ছিরি।

- প্রাহ্যাজামস্ক্বহ।

- প্রাহ্যা...?

- জামস্ক্বহ।

- নরকটরক নাকি?

- ধুর। সে'সব থ্রিলিং কিস্যু নয়। পাতি একটা গ্রহ। তাও পৃথিবীর চেয়ে বহু দূরের একটা গ্যালাক্সিতে। ভীষণ মোনোটনাস ব্যাপার।

- এ'খানে কারা থাকে?

- যারা থাকে তারা নিজেদের ভারি গালভরা নামে ডাকে।  বশ্রুজ্বক্বজ।

- বশ্রু?

- জ্বক্বজ। তবে নাম শুনে ঘাবড়াবেন না। ব্যাটারা আদতে বেঢপ বিটকেল সব বেড়াল। এক্কেবারে গায়েপড়ার দল।

- বেড়াল! যাহশ্লা! বেড়াল?

- বেড়াল। ল্যাজ গোঁফ মিউ সব আছে। অথচ বিটকেল। ভোট দেয়, সফটওয়্যার প্রগ্র‍্যামিং করে, রান্নায় নুন বেশি দেয়, কেউ না দেখলে রাস্তায় থুতু ফেলে, কথায় কথায় বানান ভুল করে। অখাদ্য, প্রায় মানুষের মতই।

- কী কাণ্ড। কী কাণ্ড। আচ্ছা, মরেও মরিনি কেসটা কী?

- পৃথিবীর ওই সুইসাইড পয়েন্ট, যে'খান থেকে আপনি টুক করে ঝাঁপ দিলেন। ও'টা একটা এই-আছে-এই-নেই-ওয়ার্মহোল। ঠিকঠাক মোমেন্টামে ঝাঁপ দিলে রেললাইনের ওপরে না পড়ে সোজা এই...।

- প্রাহ্যাজামস্ক্বহে?

- প্রাহ্যাজামস্ক্বহে। কাজেই পৃথিবীর লোকে আপনাকে গায়েব ভাবলেও, এ'খানে আপনি বহাল তবিয়তেই থাকবেন। 

- থাকব? খাবো কী?বেঁচে থাকব কী করে? 

- সে চিন্তা এ'খানকার মাতব্বর বেড়ালদের। এই কেউ একটা এলো বলে। আপনাকে রাস্তায় ফেউফেউ করে ঘুরে বেড়াতে দেখলেই তুলে নিয়ে যাবে। তারপর আপনার থাকা খাওয়া মৌরুসিপাট্টা সমস্ত কিছুর দায় সে বেড়ালের।

- যত্নআত্তি করবে তা'হলে? 

- আদরযত্নের চোটে প্রাণ আইঢাই করবে মশাই। খতরনাক আদেখলামো। গায়ে গা ঘষবে, কাতুকুতু দেবে আর গাণ্ডেপিণ্ডে গেলাবে। সে'সব তাও ঠিক আছে; মাঝেমধ্যেই রকমারি ছবি তুলবে। দিনে বারো হাজার বাইশটা ছবি গড়ে। গা জ্বলে ছারখার হয়ে যায় মাইরি। আমি তো ব্যাটাগুলোকে তেড়ে খিস্তি করি।

- খিস্তি করেন? সর্বনাশ!

- আরে ওরা বোঝেটোঝে না। ভাবে খুব মিষ্টি কোনো শব্দ করেছি বোধ হয়। আদর আরো এক ডিগ্রি বেড়ে যায়। তবে কী জানেন মশায়, পৃথিবীর চেয়ে এই প্রাহ্যাজামস্ক্বহই ভালো। বেড়ালরা দিব্যি জামাই আদরে রেখেছে। ওরা ভাবে ওরা আমাদের চালাচ্ছে এ'দিকে জানেনা যে তলেতলে ওদের আমরা চালাচ্ছি। কবি তো বলেই গেছেন; শখের প্রাণ, গড়ের মাঠ।

- তা'হলে ভালোই থাকব, তাই তো?

- আলবাত্। আরে মশাই আপনার ইয়ে পেলেও বেড়ালেরা আপনাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে 'বসতে আজ্ঞা হোক, করতে আজ্ঞা হোক' বলে কাকুতিমিনতি করবে। 

- টেরিফিক।

- তা নতুন এসেছেন যখন, আমার সঙ্গেই যাবেন নাকি? আমি যে বশ্রুজ্বক্বজদের সঙ্গে আছি তারা আরো খান কয়েক মানুষ পেলে মিউমিউ করে আত্মহারা হয়ে যাবে।

- তাই চলন। তবে দাদা, একটা প্রশ্ন মাথায় এলো। এই গ্রহেও কি বেড়ালদের জন্য কোনো গোলমেলে সুইসাইড পয়েন্ট আছে? 


Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু