Friday, November 2, 2018

সান্যালের দাওয়াই

অন্ধকার গলিটায় ঝুপ করে উদয় হলেন সুমন সান্যাল। জমাট নিস্তব্ধতা  ভেদ করে একটা ফস্ শব্দ; সিগারেট ধরালেন ভদ্রলোক। ইলেক্ট্রিক বাতি আর আকাশে চাঁদ সত্ত্বেও এ অন্ধকার বেশ সমীহ করার মত।

হাতঘড়ির দিকে ঘনঘন তাকিয়েও লাভ হচ্ছে না, সময় চলছে কলকাতার ট্র‍্যাফিক জ্যামে পড়া মিনিবাসের গতিতে। রাত সোয়া দু'টো বাজতে এখনও মিনিট তিনেক দেরী।

উফ। তর সইছে না।

'মিস্টার সানিয়াল'! ঘড়ঘড়ে কণ্ঠস্বরটা পরিচিত; রোবুনকেম্প। সেও যেন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে হুট করে, 'প্লীজ মিস্টার সানিয়াল, স্মোকিং ব্যানঢো ক্রুন'। রোবুনকেম্পের বাংলা বোঝা চাট্টিখানি কথা নয়, তবে সান্যালবাবু অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সদ্য জ্বালানো সিগারেটটা ফেলে দিয়ে রোবুনকম্পের হাত টেনে সামান্য ঝাঁকুনি দিলেন তিনি "ওয়েলকাম টু আর্থ রোবুনকেম্প মশাই, ওয়েলকাম"।

- সানিয়াল, অনেক ডিন পরে দেকা হল।

- তা অনেকদিনই বটে। অন্তত সাড়ে বাইশ বছর তো বটেই।

- ঠুমি তো এখুনও জোয়ান ডেকচি।

- জোয়ান ডেকচি?

- ডুক্কিতো। তোমায় দেকে একুনও জোয়ান মনে হয়।।

- আপনাদের সেই উন্নত গ্রহের ওষুধ। জোয়ান না থেকে উপায় আছে? অবশ্য জোয়ান থাকার চেয়েও বড় সুবিধে হল হুটহাট যে কোনো জায়গায় উড়ে যেতে পারছি৷ ট্রেন বাস রিক্সার খরচ নেই বললেই চলে। আপনার ওষুধের জবাব নেই রোবুনকেম্পবাবু। অনেস্টলি বলছি। স্রেফ সে'টার জোরেই এই দু'শো বাহাত্তর বছর বয়সেও দিব্যি দিনে অন্তত বারো মাইল হাঁটছি।

- ডুরোন্টো। টবে আমরাও টুমার কাচে কৃটজ্ঞ। টুমি সাপ্লাই না ডিলে আমরা বিপডে পড়টম। আমাডের ঘ্রহ ডকে উটতো। টুমাকে এ অষুড ডিটে পেরে আমরা আনন্ডিট।

- আরে ও কিছুই নয়৷ যাক গে, এনেছেন? আপনাদের ওষুধের শিশি?

- হুঁ। এইকানে আচে। আর টুমার সাপ্লাই? সেটা?

- এনেছি। এ'বার একটু বেশি করে এনেছি। আগামী তিরিশ চল্লিশ বছর কেটে যাবে। কোনো  ধুমকেতু আপনাদের গ্রহকে ছুঁতে পারবে না। অব্যর্থ মাদুলি।

- ডোন্নোবাড সানিয়াল্।

- আরে ধুর। আমি এ'টুকু করব না? 

- এ'টা অনেক। লাইফ অ্যান্ড বার্থ-য়ের সাইকেল বন্দ হওয়ার পর আমাদের ঘ্রহ টেকে প্রটেকশন গেল উটে। রোবটের হাটে টেকনলজি আচে, অ্যান্টি ডুমকেটু প্রটেকশন নেই। 

- আহা রে। পৃথিবীর মানুষ যদি জানত, কী ম্যাজিকে পৃথিবী আর সৌরমণ্ডল উবে যাচ্ছে না৷ সবাই শুধু জানে ফিজিক্স।

- পিজিক্স। ও টো আউটডেটেড জ্ঞানের গুডাম। আমাডের ঘ্রহের সবাই সেটা জানে।

- আমরাও জানব রোবুনকেম্পদাদা। আর শ'খানেক বছর যাক। তবে বেশি জেনে ফেলে আবার যেন আপনাদের হাল না হয়।

- টাই যেন হয় সানিয়াল।

- এই যে এই ডিবেতে রয়েছে আপনার সাপ্লাই। আপনার গ্রহের মাদুলি। ফিরে গিয়ে ছড়িয়ে দেবেন গ্রহের চারদিকে। তিরিশ চল্লিশ বছরের জন্য ধুমকেতু বাবাজীরা জব্দ। এফেক্ট কমে এলে আমায় সিগন্যাল পাঠাবেন, তখন ফের এ গলিতে দেখা হবে। কেমন? 

এক কৌটা ভরা "আমি মায়ের কাছে যাব"র আকুতি রেকর্ডিং রোবুনকেম্পের হাতে গুঁজে দিলেন সান্যালবাবু। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ভাষায় যা সংগ্রহ করা। বেচারাদের গ্রহে মা নেই কিনা, সুমন সান্যালের দেওয়া মাদুলি ছাড়া রোবুনকেম্পেরা টিকে থাকবে কী করে?

No comments: