Skip to main content

সান্যালের দাওয়াই

অন্ধকার গলিটায় ঝুপ করে উদয় হলেন সুমন সান্যাল। জমাট নিস্তব্ধতা  ভেদ করে একটা ফস্ শব্দ; সিগারেট ধরালেন ভদ্রলোক। ইলেক্ট্রিক বাতি আর আকাশে চাঁদ সত্ত্বেও এ অন্ধকার বেশ সমীহ করার মত।

হাতঘড়ির দিকে ঘনঘন তাকিয়েও লাভ হচ্ছে না, সময় চলছে কলকাতার ট্র‍্যাফিক জ্যামে পড়া মিনিবাসের গতিতে। রাত সোয়া দু'টো বাজতে এখনও মিনিট তিনেক দেরী।

উফ। তর সইছে না।

'মিস্টার সানিয়াল'! ঘড়ঘড়ে কণ্ঠস্বরটা পরিচিত; রোবুনকেম্প। সেও যেন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে হুট করে, 'প্লীজ মিস্টার সানিয়াল, স্মোকিং ব্যানঢো ক্রুন'। রোবুনকেম্পের বাংলা বোঝা চাট্টিখানি কথা নয়, তবে সান্যালবাবু অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সদ্য জ্বালানো সিগারেটটা ফেলে দিয়ে রোবুনকম্পের হাত টেনে সামান্য ঝাঁকুনি দিলেন তিনি "ওয়েলকাম টু আর্থ রোবুনকেম্প মশাই, ওয়েলকাম"।

- সানিয়াল, অনেক ডিন পরে দেকা হল।

- তা অনেকদিনই বটে। অন্তত সাড়ে বাইশ বছর তো বটেই।

- ঠুমি তো এখুনও জোয়ান ডেকচি।

- জোয়ান ডেকচি?

- ডুক্কিতো। তোমায় দেকে একুনও জোয়ান মনে হয়।।

- আপনাদের সেই উন্নত গ্রহের ওষুধ। জোয়ান না থেকে উপায় আছে? অবশ্য জোয়ান থাকার চেয়েও বড় সুবিধে হল হুটহাট যে কোনো জায়গায় উড়ে যেতে পারছি৷ ট্রেন বাস রিক্সার খরচ নেই বললেই চলে। আপনার ওষুধের জবাব নেই রোবুনকেম্পবাবু। অনেস্টলি বলছি। স্রেফ সে'টার জোরেই এই দু'শো বাহাত্তর বছর বয়সেও দিব্যি দিনে অন্তত বারো মাইল হাঁটছি।

- ডুরোন্টো। টবে আমরাও টুমার কাচে কৃটজ্ঞ। টুমি সাপ্লাই না ডিলে আমরা বিপডে পড়টম। আমাডের ঘ্রহ ডকে উটতো। টুমাকে এ অষুড ডিটে পেরে আমরা আনন্ডিট।

- আরে ও কিছুই নয়৷ যাক গে, এনেছেন? আপনাদের ওষুধের শিশি?

- হুঁ। এইকানে আচে। আর টুমার সাপ্লাই? সেটা?

- এনেছি। এ'বার একটু বেশি করে এনেছি। আগামী তিরিশ চল্লিশ বছর কেটে যাবে। কোনো  ধুমকেতু আপনাদের গ্রহকে ছুঁতে পারবে না। অব্যর্থ মাদুলি।

- ডোন্নোবাড সানিয়াল্।

- আরে ধুর। আমি এ'টুকু করব না? 

- এ'টা অনেক। লাইফ অ্যান্ড বার্থ-য়ের সাইকেল বন্দ হওয়ার পর আমাদের ঘ্রহ টেকে প্রটেকশন গেল উটে। রোবটের হাটে টেকনলজি আচে, অ্যান্টি ডুমকেটু প্রটেকশন নেই। 

- আহা রে। পৃথিবীর মানুষ যদি জানত, কী ম্যাজিকে পৃথিবী আর সৌরমণ্ডল উবে যাচ্ছে না৷ সবাই শুধু জানে ফিজিক্স।

- পিজিক্স। ও টো আউটডেটেড জ্ঞানের গুডাম। আমাডের ঘ্রহের সবাই সেটা জানে।

- আমরাও জানব রোবুনকেম্পদাদা। আর শ'খানেক বছর যাক। তবে বেশি জেনে ফেলে আবার যেন আপনাদের হাল না হয়।

- টাই যেন হয় সানিয়াল।

- এই যে এই ডিবেতে রয়েছে আপনার সাপ্লাই। আপনার গ্রহের মাদুলি। ফিরে গিয়ে ছড়িয়ে দেবেন গ্রহের চারদিকে। তিরিশ চল্লিশ বছরের জন্য ধুমকেতু বাবাজীরা জব্দ। এফেক্ট কমে এলে আমায় সিগন্যাল পাঠাবেন, তখন ফের এ গলিতে দেখা হবে। কেমন? 

এক কৌটা ভরা "আমি মায়ের কাছে যাব"র আকুতি রেকর্ডিং রোবুনকেম্পের হাতে গুঁজে দিলেন সান্যালবাবু। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ভাষায় যা সংগ্রহ করা। বেচারাদের গ্রহে মা নেই কিনা, সুমন সান্যালের দেওয়া মাদুলি ছাড়া রোবুনকেম্পেরা টিকে থাকবে কী করে?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু