Skip to main content

হ্যাপা

- দারোগাবাবু, রসগোল্লা খাবেন?

- স্পঞ্জ?

- না না, অর্থোডক্স টেক্সচারের। মাঝারি মিষ্টি।

- উঁ, খান চারেক আনাও তা'হলে। টেস্ট করে দেখি। যা বুঝছি, হাতে বেশ কিছুটা সময় আছে।

- তা আছে। গোডাউনের চাবি রাখা থাকে আমার বাড়ির দেরাজে। দিবাকর সাইকেল নিয়ে গেছে বটে, তবে তার হাঁটুতে যা ব্যথা। দু'মাইল যেতে অন্তত কুড়ি-পঁচিশ মিনিট। তারপর গিন্নীর থেকে চাবি নিতে পাঁচ দশ মিনিট। সব মিলে প্রায় ধরুন গিয়ে এক ঘণ্টা। বরং এক কাজ করি। সঙ্গে দু'টো নিমকি বলে দিই। বেশ খাস্তা করে। এই পাশেই দোকান।

- আনাবে?

- চট করে। আপনি আর আপনার দুই হাবিলদার,  সক্কলের চোখ মুখ বসে গেছে এক্কেবারে। বড্ড কাজের চাপ, তাই না দারোগাবাবু?

- কী আর বলব মিত্তির। সর্ষের তেলের ব্যবসা নিয়ে থাকো, পুলিশের ঝামেলা আর কী বুঝবে। গোটা সকাল কাটলো জোড়াচোর বিধু নিধুকে ধাওয়া করে। জান কয়লা করে দিলো ছোকরা দু'টো। তারপর থানায় ফিরে কাতলার ঝোল, পোস্তর বড়া আর জলপাইয়ের চাটনি দিয়ে দু'মুঠো ভাত খেয়েছি কি খাইনি; সদর থেকে ইন্সট্রাকশন এলো তোমার গোডাউন রেড করার। এ'খানে তুমি নাকি গোলমেলে কিছু শুরু করেছে।

- আমি? গোলমেলে? আমি? হরিহর মিত্র? প্রতি বছর কালীপুজোয় কত টাকা চাঁদা দিই জানেন? আর দুর্গামণ্ডপের চাতালটা গত বছর কত টাকা খরচ করে বাঁধিয়ে দিয়েছি সে খবর জানেন?

- আরে আমি তো বড়সাহেবকে তাই বললাম। মিত্তির অতি সজ্জন মানুষ। একটু জুয়ার নেশা ছিল এক কালে। তা অনেকটা এখন কমে গিয়েছে। আর গোপন তেজারতির কারবার নিয়ে আমাদের মাথা না ঘামালেও চলবে। তাছাড়া আজ গা'টাও একটু ম্যাজম্যাজ করছিল। গোডাউন রেডে বড় ঝক্কি।  কিন্তু কী আর করি বলো। তুমি বরং এক কাজ করো। রসগোল্লা নিমকির সঙ্গে দু'টো পানতো জুড়ে দিও। গরম দিলে ভালো হয়। গা ম্যাজম্যাজে গরম পানতো খুব হেল্প করে।

- বেশ বেশ। তা'হলে চারটে করে রসগোল্লা, দু'টো পান্তুয়া, দু'টো নিমকি আর একটা জলভরা। পার প্লেট। আনতে বলি?

- মিষ্টির প্রপোরশন বড্ড বেশি হে মিত্তির।

- শিঙাড়া জুড়ে দিই তা'হলে। বাজারে ফুলকপিও এসে গেছে।

- তাই বলে দাও। বেশি বাড়াবাড়ির দরকার নেই। দিবাকর চাবি নিয়ে আসার আগে একটু জিরিয়ে নেওয়া আর কী।

- আর চা?

- সামান্য কফি হলে দিও বরং। বাতাসে অল্প শীত শীত ভাব।

- বেশ বেশ। হারাধন, শুনে নিয়েছিস। এ'বার চট করে সব নিয়ে আয় দেখি। আর শোন, এক কিলো রাবড়ি আলাদা করে নিয়ে এসে দারোগাবাবুর জীপে রাখিয়ে দিস্। যা যা, চট করে।

- আবার রাবড়ি কেন।

- ওই আমার এক রোগ দারোগাবাবু। মাঝেমধ্যে গুণী মানুষজনকে ভালো রাবড়ি না খাওয়ালে আমার ভালো লাগে না। অ্যাই হারু, দাঁড়িয়ে আছিস কেন। জলদি জলদি।

- তা হ্যাঁ হে মিত্তির, বলি গোডাউনে কিছু গোলমাল করেছ নাকি?

- গোডাউনে গোলমাল? আমার গোডাউনে? জানেন বছরে অন্তত তিনবার তীর্থে যাই আমি? তাও সপরিবারে। তারপর ধরুন হপ্তায় তিন দিন নিরামিষ। আর শনিবার হাফবেলা উপোস, একদম নির্জলা। আমার তেলের গোডাউনে গোলমাল?  এ'টা যে দত্তদের কারবার তা কি আমি জানি না? ওদের চোখ টাটায়। চোরাকারবার ওরা করে। এ'দিকে আমার গোডাউনে স্রেফ ঝাঁজালো খাঁটি সর্ষের তেল। আঙুলের ডগায় নিয়ে নাকের কাছে নিয়ে যান, অমনি চোখের জলে নাকের জলে একাকার হয়ে যাবে।

- খাঁটি তেলে বুঝলে মিত্তির, মাছ ভাজার স্বাদই আলাদা হয় যায়।

- বটেই তো। বটেই তো। আমি বরং প্রতি মাসে আপনাকে দু'টিন করে তেল পাঠিয়ে দেব।

- ও মা! না না, তা আমি নিই কী করে।

- এ'তো স্যাম্পেল টেস্টিংয়ের জন্য দারোগাবাবু। নিয়মিত আমার তেলে মাছ ভাজলেই বুঝবেন পিউরিটি কাকে বলে। স্যাম্পেল টেস্টিং মাত্র।

- তা বটে। পাঠিও মাসে তিন টিন করে তেল। তবে গোপনে পাঠিও হে। ঢাকঢোল পিটিয়ে স্যাম্পেল টেস্ট করা যায়না।

- আলবাত। তিন টিন মাসে। হিংসেয় কত লোকে কত কিছু রটায়। মাঝখান থেকে আপনাদের যত ছোটাছুটি আর হেনস্থা।

- আর বলো কেন। যাকগে, তোমার গোডাউনে তেমন কিছু গোলমেলে নেই বলছ?

- ওই দেওয়ালে যে মাকালীর ক্যালেন্ডার ঝুলছে, সে'টা ছুঁয়ে বলব? আমার গোডাউনে যদি এক ফোঁটাও ভেজাল তেল পাওয়া যায় তা'হলে আমার জিভে এমন ঘা হবে যা সতেরো বছরেও সারবে না।

- আহ্, আমি সন্দেহ করিনি। তবে ডিউটির ব্যাপার তো। বুঝতেই পারছ।

- কর্মই ধর্ম দারোগাবাবু। আপনাকে দেখলে কি সাধে ভক্তি ভাব জাগে।

- তা ইয়ে, তোমার নামে কে যেন বদনাম ছড়াচ্ছে বললে?

- আজ্ঞে ওই দত্তর ব্যাটা। মাছের পাইকারি ব্যবসা।

- ওই বিনোদ মল্লিক লেনে যাদের অফিস? সরোজ দত্ত?

- মহাধুরন্ধর। তার পেটে পেটে যে কত। আমি নিজের মুখে বলতে চাই না। তবে তার গুদামে যে স্রেফ বরফচাপা মাছই নেই, সে'টা সবাই জানে।

- কী সর্বনাশ!

- রীতিমত। তবে আমি আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে চাইনা। আমি সাদামাটা মানুষ দারোগাবাবু। সামান্য তেল বেচে দু'পয়সা আয়। ওই, হারু মিষ্টি নিয়ে এসে গেছে।

- আর দিবাকর? সে এলো চাবি নিয়ে?

- তার আসতে যে দেরী আছে...।

- তবে আজ তোমার গোডাউন রেডটা থাক। সে'সব পরে হবে'খন। তুমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছ না। মিষ্টি খেয়ে আমি বরং বিনোদ মল্লিক লেন থেকে একটু ঘুরে আসব।

- আজ্ঞে? যাবেন?

দারোগাবাবু বিষন্ন ভাবে হেসে মাথা নাড়লেন। জীবনে হ্যাপা কি কম? মাসে মাসে তিন'টিন খাঁটি সর্ষের তেল আসবে বাড়িতে। কড়াই ভর্তি তেলে নিয়ম করে ছাড়ার মত মাছের ব্যবস্থাও তো করতে হবে। ব্যস্ত হয়ে মিষ্টি শিঙাড়ার প্লেটটা নিজের দিকে টেনে নিলেন দারোগাবাবু।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু