Skip to main content

কুটুম্ব

- চা খাবেন?

- না।

- কফি?

- উঁ...না থাক।

- কোল্ডড্রিঙ্কস?

- শুনুন না মলয়দা। চা-ঠা থাক বরং।

- ও মা! সে কী বিধুদা! আপনি আমার শ্বশুরবাড়ির পাড়ার লোক। অদ্দূর থেকে আমার অফিসে এসেছেন৷ কিছু একটা না খেলে চলবে কী করে। আই ইনসিস্ট। আচ্ছা, লস্যি আনিয়ে দেব? আমাদের অফিসের নীচেই..।

- ওই চা হলেই হবে।

- গ্রীন টী দিতে বলি?

- গ্রীন? না ওই নর্মাল চা হলেই হবে।

- দুধ চা?

- হ্যাঁ।

- গুড। আমাদের নির্মল প্যান্ট্রি সামলায়। এ-ক্লাস চা বানায়। এ-ক্লাস। দাঁড়ান, হাঁক দিই। ওহে নির্মল, দু'টো চা দিয়ে যাও। একটা দুধচা। একটা লিকার। চিনি আলাদা করে। বিধুদা, সঙ্গে থিন অ্যারারুট না ক্রীমক্র‍্যাকার?

- বিস্কুটের দরকার নেই।

- না না, তা কী করে হয়। নির্মল! শুনতে পারছ তো? চায়ের সঙ্গে বরং একটু কাজু নিয়ে এসো। সল্টেড। 

- মলয়দা, ব্যস্ত হবেন না প্লীজ..।

- কী বলছেন। আপনি আমার শ্বশুরমশাইয়ের ছোটবেলার বন্ধুর ছেলের আপন শালা। এ'টুকু অফার করব না? ওহে নির্মল, কাজুর সঙ্গে একটু নিমকি দিও তো। 

- বলছিলাম যে, দাদা! বড় বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি।

- বিপদটিপদের কথা শুনব। তবে তার আগে আমাদের অফিসের এই স্পেশাল কুচো নিমকি খেয়ে দেখুন। মিনিমাম তেল, ম্যাক্সিমাম মুচমুচ। বম্বে থেকে আমাদের ডিরেক্টর সাহেব এলে আড়াই কিলো প্যাক করিয়ে নিয়ে যান। এভরিটাইম। শোনো নির্মল, নিমকিটা একটু বেশি করে এনো ভাই।

- আমার বড় বিপদ মলয়দা।

- বিপদ? 

- আপনাদের কোম্পানির এক ভদ্রলোক, ট্রেনে আলাপ। সে না, আমায় কেমন করে যেন হাত করে নিলে।

- হাত করে নিলে?

- মানে ওই, আমায় বললে সে হিউম্যান রিসোর্সে আছে। আর বললে; সে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করতে পারে। কোম্পানির কাগজপত্রটত্রও দেখালে।

- বলেন কী? অ্যালেন স্টীল অ্যান্ড প্রজেক্টেসের এইচ-আর সামলানো লোকের সঙ্গে আপনার ট্রেনে আলাপ? 

- সদাশিব সান্যাল। কাটোয়া লাইনে বাড়ি। মানে, তাই তো বললে।

- এখানকার হিউম্যান রিসোর্স আমি সামলাই বিধুদা! ও নামের কেউ এখানে চাকরী করে না। আর আপনি আমার সঙ্গে একবার কথা বলতে পারলেন না?

- আসলে, আমার ঠিক খেয়াল ছিল না। তাছাড়া, ব্যাপারটা একটু ইয়ে, আন্ডার দ্য টেবিল ছিল কিনা। সে বোঝালে যে দু'লাখ টাকা দিলেই..।

- ও মাই গড! আপনি ওকে টাকা দিয়েছিলেন?

- হার্ড ক্যাশে। আমার মাথাখারাপ হয়ে গেছিল। লোভে পাপ, পাপে সর্বনাশ। 

- শুনেই খুব খারাপ লাগছে বিধুদা। আপনি যদি একবার অন্তত আমার সঙ্গে কথা বলতেন। তা'হলে এমন বিশ্রি ভাবে ঠকতে হত না।

- আসলে, ঘুষটুষের ব্যাপার কি আর জামাইমানুষের সঙ্গে আলোচনা করা যায়?

- দু'লাখ টাকার ধাক্কা। আপনাকে কী ধাপ্পাটাই না দিয়েছে। যাকগে। এমন দুঃখের খবর নিয়ে এসেছেন; সামান্য চা নিমকি খাইয়ে আপনাকে ছাড়ি কী করে বিধুদা। আপনার পাড়ার জামাই বলে কথা। ওহে নির্মল! চা নিমকি ক্যানসেল। আমরা নীচের রেস্টুরেন্ট থেকে বরং কাটলেট খেয়ে আসব।

- আহা! আবার কাটলেট কেন।

- নীচের দোকানে যা মাটন কাটলেট সার্ভ করে না বিধুদা, কোটি টাকা হারানোর দুঃখ হাপিস হয়ে যায়। দু'লাখ তো নস্যি। নস্যির কথায় মনে পড়লো, কাটলেটের পর কিন্তু আপনাকে লস্যি খেতেই হবে। রিফিউজ করলে শুনব না।

- কিন্তু...।

- আরে চলুন চলুন। কিছুতেই না শুনছি না। 

- আহা, আসলে আমি...।

- ওহে নির্মল। আমরা বেরোলাম বাবা। রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিও। কেমন? চলুন। আর সময় নষ্ট নয়।

বিধুবাবুকে কাটলেট লস্যি খাইয়ে, বাসে তুলে দিয়ে যখন মলয়বাবু বাড়িমুখো হলেন তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। কাল সকালে এসেই নির্মল ছোকরাকে জোর ধমক দিতে হবে। পইপই করে বলা সত্ত্বেও ব্যাটা তার শ্বশুরবাড়ির লাইনের লোককে পাকড়াও করে। চা নিমকি নিয়ে সদাশিব সান্যাল ঘরে এসে ঢুকলেই যে কী বিশ্রী কাণ্ড হত, তা ভাবতেই বার বার শিউরে উঠছিলেন মলয়বাবু।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু