Friday, November 2, 2018

কুটুম্ব

- চা খাবেন?

- না।

- কফি?

- উঁ...না থাক।

- কোল্ডড্রিঙ্কস?

- শুনুন না মলয়দা। চা-ঠা থাক বরং।

- ও মা! সে কী বিধুদা! আপনি আমার শ্বশুরবাড়ির পাড়ার লোক। অদ্দূর থেকে আমার অফিসে এসেছেন৷ কিছু একটা না খেলে চলবে কী করে। আই ইনসিস্ট। আচ্ছা, লস্যি আনিয়ে দেব? আমাদের অফিসের নীচেই..।

- ওই চা হলেই হবে।

- গ্রীন টী দিতে বলি?

- গ্রীন? না ওই নর্মাল চা হলেই হবে।

- দুধ চা?

- হ্যাঁ।

- গুড। আমাদের নির্মল প্যান্ট্রি সামলায়। এ-ক্লাস চা বানায়। এ-ক্লাস। দাঁড়ান, হাঁক দিই। ওহে নির্মল, দু'টো চা দিয়ে যাও। একটা দুধচা। একটা লিকার। চিনি আলাদা করে। বিধুদা, সঙ্গে থিন অ্যারারুট না ক্রীমক্র‍্যাকার?

- বিস্কুটের দরকার নেই।

- না না, তা কী করে হয়। নির্মল! শুনতে পারছ তো? চায়ের সঙ্গে বরং একটু কাজু নিয়ে এসো। সল্টেড। 

- মলয়দা, ব্যস্ত হবেন না প্লীজ..।

- কী বলছেন। আপনি আমার শ্বশুরমশাইয়ের ছোটবেলার বন্ধুর ছেলের আপন শালা। এ'টুকু অফার করব না? ওহে নির্মল, কাজুর সঙ্গে একটু নিমকি দিও তো। 

- বলছিলাম যে, দাদা! বড় বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি।

- বিপদটিপদের কথা শুনব। তবে তার আগে আমাদের অফিসের এই স্পেশাল কুচো নিমকি খেয়ে দেখুন। মিনিমাম তেল, ম্যাক্সিমাম মুচমুচ। বম্বে থেকে আমাদের ডিরেক্টর সাহেব এলে আড়াই কিলো প্যাক করিয়ে নিয়ে যান। এভরিটাইম। শোনো নির্মল, নিমকিটা একটু বেশি করে এনো ভাই।

- আমার বড় বিপদ মলয়দা।

- বিপদ? 

- আপনাদের কোম্পানির এক ভদ্রলোক, ট্রেনে আলাপ। সে না, আমায় কেমন করে যেন হাত করে নিলে।

- হাত করে নিলে?

- মানে ওই, আমায় বললে সে হিউম্যান রিসোর্সে আছে। আর বললে; সে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করতে পারে। কোম্পানির কাগজপত্রটত্রও দেখালে।

- বলেন কী? অ্যালেন স্টীল অ্যান্ড প্রজেক্টেসের এইচ-আর সামলানো লোকের সঙ্গে আপনার ট্রেনে আলাপ? 

- সদাশিব সান্যাল। কাটোয়া লাইনে বাড়ি। মানে, তাই তো বললে।

- এখানকার হিউম্যান রিসোর্স আমি সামলাই বিধুদা! ও নামের কেউ এখানে চাকরী করে না। আর আপনি আমার সঙ্গে একবার কথা বলতে পারলেন না?

- আসলে, আমার ঠিক খেয়াল ছিল না। তাছাড়া, ব্যাপারটা একটু ইয়ে, আন্ডার দ্য টেবিল ছিল কিনা। সে বোঝালে যে দু'লাখ টাকা দিলেই..।

- ও মাই গড! আপনি ওকে টাকা দিয়েছিলেন?

- হার্ড ক্যাশে। আমার মাথাখারাপ হয়ে গেছিল। লোভে পাপ, পাপে সর্বনাশ। 

- শুনেই খুব খারাপ লাগছে বিধুদা। আপনি যদি একবার অন্তত আমার সঙ্গে কথা বলতেন। তা'হলে এমন বিশ্রি ভাবে ঠকতে হত না।

- আসলে, ঘুষটুষের ব্যাপার কি আর জামাইমানুষের সঙ্গে আলোচনা করা যায়?

- দু'লাখ টাকার ধাক্কা। আপনাকে কী ধাপ্পাটাই না দিয়েছে। যাকগে। এমন দুঃখের খবর নিয়ে এসেছেন; সামান্য চা নিমকি খাইয়ে আপনাকে ছাড়ি কী করে বিধুদা। আপনার পাড়ার জামাই বলে কথা। ওহে নির্মল! চা নিমকি ক্যানসেল। আমরা নীচের রেস্টুরেন্ট থেকে বরং কাটলেট খেয়ে আসব।

- আহা! আবার কাটলেট কেন।

- নীচের দোকানে যা মাটন কাটলেট সার্ভ করে না বিধুদা, কোটি টাকা হারানোর দুঃখ হাপিস হয়ে যায়। দু'লাখ তো নস্যি। নস্যির কথায় মনে পড়লো, কাটলেটের পর কিন্তু আপনাকে লস্যি খেতেই হবে। রিফিউজ করলে শুনব না।

- কিন্তু...।

- আরে চলুন চলুন। কিছুতেই না শুনছি না। 

- আহা, আসলে আমি...।

- ওহে নির্মল। আমরা বেরোলাম বাবা। রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিও। কেমন? চলুন। আর সময় নষ্ট নয়।

বিধুবাবুকে কাটলেট লস্যি খাইয়ে, বাসে তুলে দিয়ে যখন মলয়বাবু বাড়িমুখো হলেন তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। কাল সকালে এসেই নির্মল ছোকরাকে জোর ধমক দিতে হবে। পইপই করে বলা সত্ত্বেও ব্যাটা তার শ্বশুরবাড়ির লাইনের লোককে পাকড়াও করে। চা নিমকি নিয়ে সদাশিব সান্যাল ঘরে এসে ঢুকলেই যে কী বিশ্রী কাণ্ড হত, তা ভাবতেই বার বার শিউরে উঠছিলেন মলয়বাবু।

No comments: