Skip to main content

ভবদুলালের ভোর

নভেম্বরের ভোরগুলোয় অমন একটু শীতশীত ভাব থাকেই। আর ছুটির ভোরগুলোতে ট্রেনও খালিখালি থাকবেই। ভোরের শীতশীত আমেজ আর ট্রেনের ফাঁকাফাঁকা ভাব; ভবদুলালের মনে হচ্ছিল যেন তার বুকের মধ্যে কেউ দু'ঘটি আনন্দ-শরবত ঢেলে দিয়েছে।

আর মনের মধ্যে আনন্দ চাগাড় দিয়ে উঠলেই একটু গড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করে তাঁর। এমনিতেই চোখ ঢুলঢুল করছিল; সেই অন্ধকার থাকতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্টেশনমুখো ছুটতে হয়েছে। কামরাটা দিব্যি ফাঁকা; কাজেই সীটের ওপরেই লম্বা হতে দ্বিধা করেনি ভবদুলাল। হাওয়ায় শিরশিরানি ভালোই আছে, তবু জানালার কাচ সামান্য তুলে রেখেছিল সে। ট্রেনের ঝুকুরঝুকুর শব্দ আর দুলুনিতে আমেজ জমাট বাঁধে বেশ। বিভিন্ন ঝকঝকে স্মৃতির টুকরো আপনা থেকেই বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে গেল। জানালা বেয়ে গড়িয়ে আসা হাওয়ার কনকনে যখন দু'চোখে ঘুম জড়িয়ে এলো; তখন সেই সে'দিনের কথা মনে ভাসতে লাগল; অফিসের বড়সাহেব বলছেন "কঙ্গ্রাচুলেশন ভবদুলাল, ইউ হ্যাভ বিন প্রমোটেড"।

তড়াক করে ঘুমটা গেল কেটে। ঝুকুরঝুকুর শব্দ আর ট্রেনের দুলুনি সব গায়েব, সামনে একটা বিকট টেবিল। টেবিলের ও'পাশে বড়সাবেব; তার চোখজোড়া কটমটে;

"তোমায় আমি প্রমোশনের খবর দিচ্ছি ভবদুলাল, আর তুমি ঝিমোচ্ছ"? 

" সরি স্যর, সরি। না না, ঝিমিয়ে পড়িনি। খুব মন দিয়ে শুনছিলাম আপনার কথা, তাই চোখটা বুজে এসেছিল"। 

"ইউ হ্যাভ বিন প্রমোটেড। এক্সেকিউটিভ টু সিনিয়র এক্সেকিউটিভ। উইথ ইমিডিয়েট এফেক্ট। এবং তার সঙ্গে তোমায় দু'টো বাড়তি দায়িত্বও দেব"।

" দু'টো কেন বড়বাবু? চারটে দেবেন", জোর করে ঝিমুনিভাব ঝেড়ে ফেলতে চাইল ভবদুলাল। আমতাআমতা করে আরো কিছু বলতে যাবে, এমন সময় চনমনে খাস্তা কচুরির সুবাস নাকে বুকে টের পেল সে। আহা, বাতাসে সে গন্ধ যেন নেচে নেচে বেড়াচ্ছে; তার অপূর্ব আবেশে নিজের অজান্তেই ফিক করে হেসে ফেলল আর পরক্ষণেই নিল সামলে। কী না কী ভেবে বসবেন বড়বাবু। 

"থ্যাঙ্কিউ, থ্যাঙ্কিউ সো মাচ স্যার"। বড়সাহেবের দিকে কৃতজ্ঞতা ভরা আপ্লুত দৃষ্টিতে তাকানোর চেষ্টা করল ভবদুলাল। ও মা! বড়সাহেবের কাঁধে ওই ঢাউস ঝুড়িটা এলো কেন? আর সেই ঝুড়ি বোঝাই বর্ধমান লাইন-খ্যাত খাস্তা কচুরি যে! ঝুড়ির এক কোণে শালপাতা আর জোলো কাসুন্দির ডিবে।

"ঘুমের মধ্যেই কচুরি বলে হাঁক দিলেন দেখছি দাদা! আসুন, জোড়া দশটাকা" দু'টো কচুরি মোড়া শালপাতাটা তখন ভবদুলালের নাকের কাছে প্রায়।

"দু'টো কেন বড়বাবু? চারটে দেবেন"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু