- দত্ত, এসো। এসো।
- কী ব্যাপার স্যর? এত জরুরী তলব?
- রাজনীতি হে দত্ত। তিষ্ঠোবার উপায় আছে? সারাক্ষণ মাথায় স্ট্র্যাটেজি কিলবিল করছে। যাক গে। চটপট কাজে লেগে পড়ো।
- কাজ? কীসের কাজ?
- বাহ্! আজ বাদে কাল অনশনে বসব। কত আয়োজন করতে হবে।
- অনশন?
- অনশন।
- কেন?
- তোমায় ডেকেছি কি আমার মুখ দেখতে? কীসের জন্য অনশন করব তার একটা যুতসই কারণ খুঁজে বের করো দেখি। অপোনেন্টরা ভেবড়ে যাবে এমন একটা কিছু। আর যে'টা মিডিয়া আর পাবলিক খাবে। প্রতিবাদি। সত্যাগ্রহী গোছের। চটপট একটা মোটিভ খুঁজে বের করো। আগামীকাল আমি অনশনে বসছি। ক্যুইক দত্ত। ক্যুইক। হাতে সময় খুব কম। আজ সন্ধের মধ্যে মিডিয়াকে বাইট দিতে হবে।
- আমরণ?
- ব্রেকফাস্ট ডিনার লাঞ্চ টিফিন বাদ দিলে জীবনটাই তো আমরণ অনশন। তবে এ'ক্ষেত্রে আমরণ না। টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স।
- ও, আচ্ছা।
- আমার সঙ্গে পার্টির ছেলেছোকরারাও উপোস করবে।
- উপোস?
- আহ্, অনশন। ওদের জন্য পরের দিন দুপুরে মাংস ভাতের ফীস্টি অর্গানাইজ করতে হবে। আর পার হেড হাফ বোতল ব্লেন্ডার্স প্রাইড। নোট করে নাও। তুরন্ত।
- ভেন্যু?
- অনশনের জন্য একটাই তো জায়গা ভাই। গান্ধী মূর্তির পাদদেশ। সে'টা নড়চড় হওয়ার উপায় নেই।
- সে'খানে আবার আগামীকাল ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প আছে।
- ও আমি পুলিশকে বলে দেব। পারমিশন উইথড্র করে নেবে। তুমি ওখানেই শামিয়ানা খাটাও। লাউডস্পিকার চাই। কারার ওই লৌহকপাট। মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় গোছের গান বাজবে। পরের দিন ফিস্টিতে অবশ্য তাম্মা তাম্মা চাই। ছেলেদের মনোবল নুয়ে পড়লে চলবে না।!
- আজ্ঞে। নোটেড।
- আরো চাই। ফেস্টুন। ব্যানার। শহরজুড়ে প্রতিবাদি পোস্টার।
- পার্টি ফান্ডের একটু টানটান অবস্থা। সামনেই আবার ইলেকশন।
- সিংঘানিয়ার কারাখানার লাইসেন্স হয়ে গেছে না?
- আজ্ঞে। গতকাল পার্টি অফিসে মিষ্টির বাক্স নিয়ে ঘুরে গেল।
- ন্যাকা, কোটি কোটি ব্ল্যাক টু হোয়াইট করবে আর আমাদের বেলায় এক বাক্স ক্ষীরকদম? ওকে বলে দাও। আমার অনশন স্পন্সর করবে। ইয়ে, আমিই বলে দেব'খন। পুরনো হিসেবেও কিছু একটা বাকি আছে; ঝালিয়ে নিতে হবে।
- বেশ। চিন্তা নেই স্যর, হয়ে যাবে। দত্ত থাকতে আপনার কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু ইয়ে, স্যর। কালকেই অনশনটা করতে হবে কেন?
- গিন্নী পঞ্জিকা দেখে নিজে রেকমেন্ড করেছে। নির্জলা উপোস করতে হবে। কালকেই। সন্তোষী মা না শেতলা কিছু একটা ব্যাপার আছে। গেরস্তের মঙ্গল অমঙ্গল বলে কথা। রিফিউজ করি কী করে বলো দত্ত। তাই ভাবলাম রিলিজিয়াস উপোসটাকে যদি অপ্টিমাইজ করে রিভোলিউশনারি অনশনে কনভার্ট করা যায়।
- নোশনাল অনশন। দিব্যি। তা পরশুর ব্লেন্ডার্স প্রাইডে আপনি থাকছেন কি?
- নাহ্ দত্ত। আমার জন্য সুইট লাইম সোডা। অনলি। তবে তাম্মা তাম্মা থেকে আমায় আবার বঞ্চিত কোরো না, কেমন?
- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না। - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো। - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত। - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র। - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...। - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা
Comments