Skip to main content

কানমলা

- ব্রাদার, জব ডান। 
- যাক। ক'টা খরচ হল?
- তিনটে। 
- সে কী! দু'টো মানুষের জন্য তিনটে। 
- একটা বুলেট মাথার ডান দিক ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। ব্লিডিং যা হচ্ছিল তা'তে রিস্ক নেওয়াই যেত, তবে...। আইপিএলের ম্যাচ চলছিল। গেইল প্যাঁদাচ্ছিল। তাই আর অপেক্ষা করতে ইচ্ছে হল না। দিলাম তিন নম্বর মাঠে নামিয়ে। 
- অপচয় হে জুনিয়র, অপচয়। নাইনটি থ্রীর দুর্ভিক্ষ দেখনি তো, তাই এত মেজাজ। গেইলের ব্যাটিং দেখতে গুলি নষ্ট। অথচ নাইনটি থ্রীতে আমরা মার্ডার টার্গেটের ইন্টারভিউ নিতাম, সে গুলির জন্য কোয়ালিফাই করছে কিনা দেখতে। নয়ত স্রেফ বাঁশ-পেটা করে কাজ সারতে হত। 
- ভয়ানক সময় তো। হিউমান রাইটস বলতে কিস্যু ছিল না ব্রাদার। 
- আর এখন আমরা গেইলের ব্যাটিং দেখতে খরচ করছি বাড়তি গুলি। 
- সরি ব্রাদার। 
- যাক গে, এক্সেল শিট আপডেট করে দাও। এ মাসের ট্যালি কত দাঁড়াল?
- বাহাত্তর জন। খরচ একাশি। 
- ওয়েস্ট। ওয়েস্ট। তা এ'টা কি গেইলের এ মাসের ন'নম্বর সেঞ্চুরি ছিল?
- তা কেন ব্রাদার। প্রেম করছি। তাড়া থাকে মাঝেমধ্যে। 
- ফের সেই নাইনটি থ্রির মন্বন্তরের গল্পই করি। তখন তুমি হামা দিচ্ছ। আমি তখন ওই আকালেও টপাটপ লাশ ফেলে বেড়াচ্ছি। রাঘববোয়ালের জন্য জমিয়ে রাখতে হয় বুলেট। তা একদিন আমার প্রেমিকা...। 
- তোমার প্রেমিকা ব্রাদার?
- কেন?
- তোমার দেখলে কেমন টেবিল চেয়ার মনে হয়। তোমার আবার প্রেম। 
- তখন দেখলে নার্ভাস হয়ে পড়তে জুনিয়র। সর্বক্ষণ বুকপকেটে রক্তের ছিটে। বুলেটের অভাবে সমস্ত সুপারিকিলার ছটফট করছে অথচ আমার পকেটে আধপেটা খাওয়া জোড়া পিস্তল। মাঝেমধ্যে নিজেকে আয়নার দেখে নিজেই ঢোক গিলতাম। 
- তা প্রেমিকার কেসটা কী হল?
- বারুইপুরে একটা পুরনো পেয়ারাবাগান কিনেছিলাম, লাশগুম করার একটা নতুন জায়গা দরকার ছিল। সে পেয়ারাবাগান প্রথমবার দেখতে গেলাম প্রেমিকাকে নিয়ে। প্রেমে কেমন লোকে মাথায় চড়ে বসে দেখো জুনিয়র, সে আমায় বলে কিনা বুলেটে ছুঁড়ে পেয়ারা পেড়ে দিতে? ওই বুলেট আকালের বাজারে? তবে প্রেমিকার কথা। ফেলতে পারিনি। পত্রপাঠ খরচ করেছিলাম একটা বুলেট। 
- একটা বুলেটে ক'টা পেয়ারা?
- জিরো। 
- সে কী! তুমি ক্র্যাকশট। এক বুলেটে পেয়ারা পাড়তে পারলে না?
- একটা বুলেট। জিরো পেয়ারা, একটা পেয়ার। 
- হুঁ? 
- প্রেমিকাকে দিয়েই সে লাশগুমস্থান পেয়ারাবাগানের উদ্বোধন করেছিলাম জুনিয়র। বললামই তো, দুর্ভিক্ষে মানুষ ক্যানিবালিজমের পর্যায় কী ভাবে নেমে আসে তা সে'বার বেশ টের পেয়েছিলাম। 
- আইব্বাস ব্রাদার। 
- তাই তো বলি জুনিয়র, রিসোর্স নষ্ট কোরো না। রিসোর্স নষ্ট কোরো না। তা সে বুলেট হোক বা প্রকৃতি। অনিষ্টকারীর কানমলা খেতে দেরী  হয় না। বুঝলে? 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু