Skip to main content

লুঠ

- কোনো ত্যান্ডাইম্যান্ডাই নয়। এই যে রিভলভারটা আপনার কপালে ঠেকানো, এ'তে চারটে গুলি আছে। দু'টো কাল খরচ হয়ে গেছে। এক মাল বটুয়া দিতে দু'সেকেন্ড দেরী করে ফেলেছিল। কাজেই, বেশি চালাকি নয়।
- কম চালাকি কী ব্যাপার?
- দেব নাকি? ঠুকে?
- নিজে ভুল বলবে তারপর আবার মেজাজ। বেশি চালাকি নয়; এ আবার কেমন কথা। অপটিমাম চালাকি মাপার কোনো উপায় আছে নাকি? কোনো চালাকি নয়; সে'টা বরং বলতে পারতেন। আকাট গাধামো তাও চেষ্টা করলে ডিফাইন করা যায়।
- মানিব্যাগ দেখি। চটপট।
- আসুন। এই যে।
- আর কী আছে?
- বলছি। তার আগে মানিব্যাগের ফয়সালা হয়ে যাক।
- মানে?
- বাইশ'শো আছে। আমায় তিরিশ টাকা দেবেন প্লীজ? ফেরাটা রিক্সায় হলে একটু সুবিধে। রাহাজানির পর হেঁটে বাড়ি ফেরা যে কী ট্যাক্সিং। সে'বার জসিডিতে এ'রকম একটা সিচুয়েশনে পড়েছিলাম। সে'টা অবশ্য ঠিক ডাকাতি নয়, পকেটমারি। কাজেই মিষ্টি হেসে রিক্সার ভাড়া চাওয়ার স্কোপ পাইনি।
- এই নিন, পঞ্চাশ। যত বাজে কথা। এ'বার আর যা আছে...।
- এই সেরেছে। পঞ্চাশের ভাঙানি দেবে ভেবেছেন অত সহজে? ব্যাটাদের কথায় কথায় তর্কের অভ্যাস।
- এই যে। তিনটে দশটাকার নোট। শান্তি?
- এ মা! আপনি নিজের মানিব্যাগ বের করে আমায় খুচরো দিলেন? বড্ড মাইডিয়ার তো। এই লাইনে পোষাচ্ছে?
- দেব খুলি উড়িয়ে?
- খুচরো দিয়ে খুলি উড়িয়ে কী লাভ বলুন। জুতো মেরে গোদানের চেয়েও লোয়ার লেভেলের কথা বলে ফেললেন তো।
- উফফফফ!
- আহ্। পেশেন্স। যাক গে, মানিব্যাগ ছাড়া রয়েছে হাতঘড়ি। বিয়েতে শ্বশুরমশাই গিফট করেছিলেন। ভিন্টেজ এইচএমটি।
- খুলবেন না মালাইচাকিতে গুলি করব?
- আদেখলার ঘটি হল, জল খেতে খেতে প্রাণ গেল। একটা পিস্তল যোগাড় করে কী তম্বি।  যাকগে, এই রইল ঘড়ি। ওহহো। এক মিনিট, ঘড়িটা পাঁচমিনিট স্লো চলছে। ঠিক করে দিই।
- চোপ! কিচ্ছু করতে হবে না। দেখি ঘড়ি। আমার হাতে দিন।
- বাস ট্রেন মিস হলে আবার আমায় বাপান্ত করবেন না যেন। ও, শুনুন। মানিব্যাগে আমার বৌয়ের দু'টো পাসপোর্ট সাইজ ফটো আছে। কাইন্ডলি বের করে দিন।
- আচ্ছা ভোগান্তি হল মাইরি। এই। এই যে। আপনার বৌয়ের পাসপোর্ট সাইজ ছবি। এ'টা আদেখলাপনা নয়?
- আমি তো আর আমার বৌকে আপনার কপালে ঠেকিয়ে আপনার মানিব্যাগ চেয়ে বসিনি। আমার আদেখলাপনায় গাজোয়ারি নেই।
- ছবি দেখে মনে হল বৌদির শুগার আছে।
- পরস্ত্রীর চোখের কোলের দাগ অমন মন দিয়ে দেখতে নেই।
- আহ, আমি মোটেও সে ভাবে দেখিনি।
- আই সী। তা বলছিলাম যে; একটা আংটি আছে। অল্প সোনা, বড্ড বেশি খাদ। চাই?
- থাক বরং।
- ক্যাশেই সুবিধে, তাই না?
- তা তো বটেই। ঠিক আছে। ঘড়িটাও ফেরত নিন। কত আর পেতাম ও'টা বেচে।
- এহ্, এ'বার আমার খারাপ লাগছে। আমি ওই ভাবে বলিনি। ঘড়িটা রাখুন না।
- ধ্যার! বলছি ফেরত নিতে। নিন রাখুন।
- মোস্ট কাইন্ড অফ ইউ।
- ইয়ে, শুনুন। মেজাজ নড়ে গেল। ধুত। এই নিন আপনার মানিব্যাগ। যত্তসব আপদ।
- ছিঃছিঃ! প্রফেশনাল কম্প্রোমাইজ করাটা বাড়াবাড়ি। মানিব্যাগটা অন্তত রাখুন না প্লীজ। নয়ত আমি মরমে মরে থাকব।
- দেব? ট্রিগার টেনে?
- বলেছি না। আদেখলার ঘটি। যাক গে। থ্যাঙ্কিউ ফর দ্য মানিব্যাগ। আর সাবধানে যাবেন, কেমন? দিনকাল ভালো নয়।

***

মনোহর বুঝলে আজ আর ডাকাতির চেষ্টা করে লাভ নেই। তাই সোজা গিয়ে বসল শেষ শান্তিপুর লোকালটায়। আজ বড় মনকেমন, আজ বড় মনভালো।

কদ্দিন পর মিনুর দেখা পেল। কদ্দিন পর। মিনু কি তাকে মনে রেখেছে? নিশ্চয়ই রেখেছে। ঘাটের ধারে বাদাম ভাজা খাওয়া আর সিনেমার গল্প করা কি অত সহজে ভোলার? তবে মিনুর বাবা বিচক্ষণ, ভাগ্যিস মনোহরের হাতে তুলে দিয়ে মেয়েটাকে ভাসিয়ে দেননি।

মিনুর বর বড় ভালো, মাটির মানুষ; ওকে খুব ভালোবাসে।
কিন্তু মিনু নিজের শরীরের এত অযত্ন করে কেন? এই বয়সে হাই-শুগার, এ'টা কোনো কাজের কথা নাকি?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু