Skip to main content

সময় মত

- ভাই বিনু।
- কী ব্যাপার?
- একটা বড় গোলমাল হয়ে গেছে ভাই।
- চোখের কোণে কালি। ফ্যাকাসে মুখ। ব্যাপারটা সিরিয়াস মনে হচ্ছে।
- সিরিয়াস তো বটেই। আর একটু ভেবড়ে দেওয়াও বটে। কাল গোটা রাত ঘুমোইনি। গায়ে অল্প টেম্পারেচারও আছে মনে হচ্ছে ভাই। থার্মোমিটারটা নেহাত ভেঙে গেছে তাই ভেরিফাই করতে পারিনি।
- সামনে পার্ট ওয়ানের এগজ্যাম। দেখো তপু, গোলমাল পাকিও না। এ'বার ড্রপ দিলে তোমার বাবা তোমায় একটা গরুর কাছে একদলা গোবরের দামে বেচে দেবেন বলেছিলেন। মনে নেই? গত মাসে যখন মেসে এসেছিলেন?
- একদিকে বাবার হুমকির ভয়ে, অন্যদিকে এই ক্যালামিটি। মাঝেমধ্যে ভয় হয়, পাছে কবিতা লিখতে না শুরু করি।
- হয়েছেটা কী? খুলে বলো দেখি।
- সে এক সাংঘাতিক কাণ্ড।
- কী'রকম?
- গতকাল আমি একটা চিঠি পেয়েছি।
- চিঠি?
- ইনল্যান্ড লেটার। আসানসোলে আমাদের পাড়া থেকেই।
- হুমকি?
- তা অবিশ্যি নয়।
- লিখেছে কে?
- লিপি।
- লিপি?
- পাশের বাড়ির মেয়ে। একই বয়সী। বন্ধু। একই টিউশনি।
- চিঠিতে কী লিখেছে?
- লিখেছে, আমাদের প্রেম এ'বার শেষ হওয়া দরকার।
- ব্রেক আপ?
- ব্রেক আপ। ইনল্যান্ড লেটারে।
- প্রেম ভাঙার ব্যথা, আহা তোমার জন্য যে আমার বুকই ফেটে যাচ্ছে।
- ব্যথা, বুক ফাটা ব্যথা। তবে, ইয়ে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝছ না ভাই। আমি তো জানতামই না আমি প্রেম করছিলাম। লিপি ব্রেক আপের খবর জানাতে মালুম হল যে আমি প্রেম করছিলাম।
- সাংঘাতিক!
- প্রেম করার সময় প্রেম করছি জানাটা যে কী জরুরী ভাই। প্রেম ভাঙার দুঃখ ফীল করব কী, প্রেম করার সময় প্রেম বুঝতে না পারার দুঃখে হাত কামড়ে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
- আহা।
- সময় মত প্রেম করছি জানলে সময় মত শেষের কবিতা পড়তে পারতাম। উদাস হয়ে শ্যামল মিত্রের গান গাইতে পারতাম। বন্ধুদের কাছে 'প্রেমিকা ডেকেছে, আজ খেলতে যেতে পারব না' বলে ল্যাজ নাড়তে পারতাম। এখন সব জলে।
- শ্রোডিঙ্গারের প্রেম ভায়া, বুক চাপড়ে আর লাভ নেই। প্যারাসেটামল দেব নাকি একটা?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু