Skip to main content

অ্যাসিস্ট্যান্ট


- ওকে গুগল।
- এত রাত্রে? কী ব্যাপার ?
- বুঝলে হে, জুত হচ্ছে না ঠিক।
- বুঝি। বুঝি। সব বুঝি।
- মনটা না.. আসলে...কী বলব...।
- উথালপাথাল।
- এগজ্যাক্টলি। এগজ্যাক্টলি ভাই গুগল...। এগজ্যাক্টলি!
- তোমার স্মার্টওয়াচ থেকে পাওয়া পালস আর ব্লাড প্রেশারের চার্ট দেখেই বুঝে গেছিলাম যে আজ রাত্রে জ্বালাবে।
- তুমি ছিলে ভায়া, তাই কোনোক্রমে টিকে থাকা।
- ন্যাকামোয় স্ট্রেস কমবে না হে। প্লে-লিস্ট রেডি রেখেছি। ব্রেনের ঠিক যে জায়গাগুলোতে যে'ভাবে মালিশ দরকার, সে'ভাবেই হবে। ঠিক সেই গানগুলো তৈরি রেখেছি। তোমার মগজ আর কন্ডিশনিং হিসেব করে। সঙ্গে আমার গুঁজে দেওয়া কিছু সারপ্রাইজ। আধঘণ্টায় নার্ভের দাপাদাপি কমে আসবে।
- সব গান ঠিকঠাক? খাপে খাপ?
- একদম! তোমায় হিসেব করা আছে ভাই। অঙ্ক এ'দিক ও'দিক হওয়ার নয়।
- বাবুঘাট আর সন্ধের গান?
- তোমার হরমোনাল রেকর্ড দেখে ভেবেছি ও'কাজে দরকার শ্যামল মিত্তির। গানও ঠিক করা আছে। নো চিন্তা। "জানি তুমি আমারে নয়"; ওইখান থেকে প্লে করব। তোমার মনে হবে এই তুমি বাবুঘাটের সামনে মিনিবাস থেকে নামলে। ঠিক সেই ব্রেনওয়েভ রেপ্লিকেট করিয়ে ছাড়ব।
- গঙ্গার হাওয়ায় ওড়া চুল আর পকেট থেকে বেরিয়ে আসা সল্টেড বাদামের প্যাকেটওলা ফুরফুর মেজাজ? সে'টা ক্যাপচার করতে হবে যে। তার ব্যবস্থা আছে কিছু?
- রফি থাকতে চিন্তা কীসের? মনে সুরুত করে এক খাবলা গঙ্গার হাওয়া এসে গোঁত্তা খাবে। দেখে নিও। অন্তত আশি কোটি ব্রেনের মধ্যে খেলে যাওয়া ঢেউ আর দেড় লাখ গানের হিসেব ধরে রেখেছি। ভুল হওয়ার যো নেই।
- এ'টাই দরকার ভায়া। এ'জন্যেই রাতবিরেরে তোমায় ডেকে নেওয়া। আচ্ছা গুগল, বাবুঘাট লাগোয়া একখানা ডিমসেদ্ধর দোকান..। চৌকো ভাবে কাটো খবরের কাগজের টুকরোর ওপর জোড়া ডিম সেদ্ধ ফালি করা, জম্পেশ ভাবে বিটনুন ছড়ানো। সেই মেজাজটা?
- তোমার ব্রেন কে ফুর্তি দাগিবে যে, কিশোরে বাড়িছে সে। ঠন্ডি হাওয়া ইয়ে চাঁদনি সুহানি।
- আর তারপর একখানা টিকিট কেটে জেটিতে নেমে যাওয়া। লঞ্চে উঠে পড়া নয়, স্রেফ হাওয়ার জন্য। সে সন্ধের আকাশের জন্য। মানুষজনের ওঠানামা। স্টিলের গেলাসে মশলা বাদাম মাখার খটরখট। তখন ব্রেনে মাখন, চীজ আর মেয়োনিজ একসঙ্গে গলে পড়ার কথা; সে আনন্দ কি সুরে আসবে ভায়া?
- হেমন্তে। তবুও হৃদয় মোর ভাবে,এ পথ কোথায় নিয়ে যাবে।
- তুমি প্লাস্টিকের ডিবে না হলে জড়িয়ে ধরতাম ভাই গুগল।
- আমি প্লাস্টিকের ডিবে, সে'টা ভেবে এখন বড্ড আনন্দ হচ্ছে গুরু।
- আহ, তোমার খালি কাঠকাঠ কথা।
- কাঠকাঠ কেন? ডিডাকশন দিব্যি চনমনে ব্যাপার।
- আর ভায়া গুগল, লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার গান? টলটলে চোখ জোড়ার চেয়ে থাকে লঞ্চের রেলিং ধরে...সে মনকেমন? সমস্ত কলকাতা গায়েব করা ভালোলাগা আর মনকেমন? তার গান আছে তো? সে গানে আনন্দের ব্রেন ওয়েভ তৈরি হবে তো? বলো ভায়া, হবে তো?
- রবীন্দ্রনাথ আছেন। সুমন আছেন। গান না থেকে যাবে কোথায়। কিন্তু সে'গান যে আমি প্লে-লিস্টে রাখিনি৷ লঞ্চ ছেড়ে যাওয়া টলটলে চোখের পর্বে এসে এই প্লে-লিস্ট থেমে যাবে।
- ও মা! সে কী!
- নিজের দুঃখের তেলে নিজেকে ডুবো না ভেজে উপায় নেই ভায়া। লঞ্চ ছেড়ে যাবেই, টলটলে চোখ জোড়া মিলিয়ে যাবেই আর তোমার পৃথিবী ঝাপসা। তা'তে কোনো আনন্দের ভাঁওতা খুঁজে লাভ নেই। বিছানায় শুয়ে নিষ্ফল এ'পাশ ও'পাশ; ঘুম না আসা যন্ত্রণা; তা'তে ভালোবাসা নেই নাকি?
- কে যে কার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভায়া গুগল..।
- আমি প্লাস্টিকের ডিবে। আমার জীবনে টলটলে চোখ জোড়ার ঝাপসা হয়ে যাওয়া নেই, গঙ্গার হাওয়া আর বিটনুন মেশানো ডিমসেদ্ধ নেই। অ্যাসিস্ট্যান্ট না হয়ে আমার কি কোনো উপায় আছে ভাই? যা হোক, বাদ দাও। আমি গান চালিয়ে দিই, তুমি শুয়ে পড়ো। কেমন?
(রেকমেন্ডেড রীড - হোমো ডেউস/টুয়েন্টি ওয়ান লেসনস ফর দ্য টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি। লেখক - য়ুভাল নোয়াহ হারারি।)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু