Skip to main content

কলকাতা আর উলের বোঝা


ক্যালেন্ডারের দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তিন প্যাকেট সল্টেড বাদাম খেয়ে ফেললেন শুভময় সাহা।
নভেম্বরের শেষ দিন আগামীকাল, পরশু থেকে ডিসেম্বর। অথচ গায়ে স্রেফ একখানা স্যান্ডোগেঞ্জি চাপিয়ে সন্ধে থেকে বসে। ক্যালেন্ডারের মাকালী যেন জিভ বের করে মস্করা করছেন; "আরো কেন ব্যাটা গলা বন্ধকরা ঢাউস সোয়েটার"।
প্রতি বছর এ'দিনটায় শীতের পোশাকের ট্রাঙ্কটা নামিয়ে আনেন শুভময়। শীতের পোশাকগুলো উল্টেপাল্টে দেখেন; পাশে থাকে বৌ৷
"মনে পড়ে এ'টা সে'বার গ্যাংটক যাওয়ার আগে কিনেছিলাম? নিউমার্কেট থেকে? কী সস্তায় পেয়েছিলাম এই হাই কোয়ালিটির সোয়েটার। পাঁচ বছরেও রঙ একটুও এ'দিক ও'দিক হয়নি"।
হবে কী করে? সেই পাঁঁচ বছর আগে শেষ এ সোয়েটার গায়ে দেওয়া হয়েছিল গ্যাংটকে। তারপর থেকে প্রতি বছর শুধু ট্রাঙ্ক থেকে বের করে রোদে দেওয়া আর ন্যাপথালিন পালটে ফের ট্রাঙ্কে চালান করা। শুভময় বুকের ভিতরে হুহু টের পান।
" এই মাফলারটা মেজপিসি এনে দিয়েছিল থিম্পু থেকে। জব্বর জিনিস"। শুভময় জানেন সে জব্বরের বহর, আড়াই বছর আগে কাটোয়ায় এক বন্ধুর বিয়েতে বরযাত্রি যাওয়ার সময় শেষ ব্যবহার করেছিলান। কলকাতায় মিনিবাসের ভিড়েই কাজ চলে যায়, এমন জব্বর ভুটানী মাফলারের দরকার তেমন হয়না।
"বুবলুর পুলওভারগুলো ছোট হয়ে গেছে। আসছে রোববার, একটা নতুন কিনব। কেমন"?
নতুন আসে। ট্রাঙ্কে ঢোকে। বুবলু তরতরিয়ে বেড়ে চলে আর হাফসোয়েটার পরে স্কুল যাতায়াত করে; তাও বছরে সাড়ে তিন হপ্তা। ও'দিকে ট্রাঙ্কের আড়ালে আর ন্যাপথালিনের স্নেহগন্ধে সে পুলওভার ছোট হয়ে আসে; আপনা থেকেই বাতিল হয় পড়ে। ফের নতুন কেনা হয়। গলা শুকিয়ে আসে শুভময়ের, নিজের অজান্তেই খামচে ধরেন ন্যাপথালিনের নতুন প্যাকেটটা।
একে একে বেরিয়ে আসে বিয়ের শাল, ডিসকাউন্টে কেনা জ্যাকেট, শৌখিন উলের মোজা, চামড়ার তৈরি গাবদা দস্তানা। শুধু কলকাতায় শীত আসে না।
যে'ভাবে বইয়ের তাক ফাঁকা আছে বলে কালচার-প্রিয় মানুষ বই কেনে, যে'ভাবে দাড়ি কামানোর ব্লেড নেই বলে কেউ কেউ কফি হাউসে যায়, যে'ভাবে বাড়িতে বাড়তি রসুন পড়ে আছে বলে কেউ কেউ ব্যাগ হাতে মাংসের দোকানের দিকে ছুটে যান; ঠিক তেমন ভাবেই;
এক ট্রাঙ্ক শীতের পোশাকের দায়ভার কাটাতেই; মাঝেমধ্যে কলকাতা টু হিলস্টেশনের টিকিট কেটে ফেলেন শুভময়। ভ্রমণের নেশাটেশা বুর্জোয়া ব্যাপার। নাথুলা পেলিং যেতে হয় নেহাত বাধ্য হয়ে; কারণ ট্রাঙ্কে রাখা সোয়েটারের ওজন হৃদয় বইতে পারে না।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু