Skip to main content

মিঠে পান সাদা পান

- একটা মিঠে পান দেবেন।

- বরফ পান না প্লেন মিষ্টি?

- বরফ নয় দাদা। বরফ নয়৷ নরমে গরমে চাই। মিঠে কিন্তু গুলকন্দ কম।

- বেশ। সুপুরি?

- মিষ্টি ভাজা সুপুরি একটু। আর কুচনো সুপুরি দু'চার টুকরো।

- আসুন। পনেরো টাকা।

- আহা। বড় ভালো বানিয়েছেন। চমনবাহার আর মশলার এই পরিমিত ব্যবহার...। উপযুক্ত মিঠে পান একেই বলে।

- সিগারেট দিই?

- রাবড়ির পরে আবার মুলোচচ্চড়ি কেন? এই ভালো। তার চেয়ে বরং আর একটা পান দিন। এ'টা সাদা পান । খয়ের ছাড়া, অল্প চুন। চমনবাহার, বাড়তি এলাচ, মৌরি।  ডুমো ডুমো করে কাটা সুপুরি বেশি করে। আর দেখবেন ভাই, বাংলা পাতা দেবেন না। মিঠে পাতা। এই পানটা একটু সেনসিটিভলি বানানো দরকার। আর সাদা কাগজে মুড়ে দেবেন, কেমন? এ'বার বানান। একটু সেনসিটিভলি বানাবেন। কেমন? একেবারে জানপ্রাণ লড়িয়ে। পানটাকে ক্যানভ্যাসের মত দেখবেন, প্লীজ।

- সেনসিটিভলি বানাবো? পান?

- যত্ন করে। চুন  সময় নিয়ে পানের গায়ে মাখান, যেমন ভাবে প্রবলে যত্নে গোলাপচাষের মাটি তৈরি করতে হয়। এলাচ মৌরি চমনবাহার সুপুরি দিন, কিন্তু সার্জেনের মত হিসেব করে। নরম ভাবে ভাজ করুম। মন দিয়ে, কেমন?

- তা এত যত্ন করে বানাতে হবে কেন?

- বাহ, এ পান আমার পিসেমশাইয়ের জন্য যে।

- ওহ, উনি পানের খুব ভক্ত?

- উনি পানের পিকাসো। প্রাণ উজাড় করে পান বানান, খান ও খাওয়ান। নিজে অন্তত বত্রিশ রকম ভাবে পান খিলি করতে পারেন। পানের প্রতি অযত্ন ওঁকে দুঃখ দেয়। তাছাড়া আজকের দিনটা ডবল স্পেশাল, তাই ডাবল যত্ন করে।

- আজকের দিনটা স্পেশাল কেন?

- পিসেমশাইয়ের কাছেই আমরা দু'জনে মানুষ। ও ছাড়া কোনো গার্জেন আমাদের। কোনোদিন ছিল না। পিসেমশাইয়ের অপারেশনটা খুব জরুরি ছিল।  সে জন্য দু'জনেই লোনের অ্যাপ্লাই করেছিলাম। আজ দু'জনেরই লোনটা রিজেক্ট হয়ে গেল, জানেন? পিসেমশাই অবিশ্যি অভিযোগ করা মানুষ নন, এদ্দিন যতই মুখচোপা করে থাকুন; ভদ্রলোক আদ্যোপান্ত ভালোবাসার। পানদাদা, আমরা দু'জন এ'বার সত্যিই অনাথ হব।

- আপনারা দু'জন? দু'জন কারা? আর আপনাকে চেনা চেনা ঠেকছে কেন?

- আমরা? আমি ভোঁদা। আর সে হাঁদা।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু