Skip to main content

স্টীমার, পর্দা ও জিলিপি।



গিন্নী পর্দার কাপড় আর বালিশের ওয়াড়ের দোকানে; জবরদস্ত দরদামে ব্যস্ত। খোকা টিনের স্টীমারওলা কাঁধের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে ডেমো দেখছিল।

অনেক চেষ্টাচরিত্র করে নিজের মেজাজটায় কপিবুক তিরিক্ষি ভাব আনার চেষ্টা করছিলেন অনন্তবাবু। 

"শোনো, এমন দুম করে হাফডজন বালিশের ওয়াড় কেনার দরকারটা কী শুনি? গত বছরে যে টেবিলক্লথখানা কিনলে, সে'টা তো এখনও আলমারির অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারল না! মেলায় এলেই বাহারের যত কাপডিশ কেনা হয় এ'দিকে সকালে চা খাওয়ার সময় লর্ড ক্লাইভের আমলের হাতলভাঙা কাপ। কোনো দরকার নেই এখন পর্দা আর ওয়াড় কিনে টাকা জলে দেওয়ার। বাজারে নতুন ফুলকপি উঠেছে, তাই একজোড়া কিনে বাড়ি ফিরি চলো। আর এই যে নবাবপুত্তুর সর্দার অঙ্কেসাড়েবাইশ খাঁ! লজ্জা করে না রে? ফের টিনের স্টীমার কিনবি? ফের দু'দিনের মাথায় ভাঙবি? ফের আঙুল কেটে টিটনাস? এখুনি এ'দিকে আয় রাস্কেল"।

এই ডায়লগটা মনেমনে রিহার্স করার চেষ্টা করেছিলেন অনন্তবাবু। গোলমাল হয়ে গেল সেই আলোর দিকে চোখ রেখে। সোনালী আলোর ঝর্নাধারা বয়ে চলেছে একথালা অমৃতির গা বেয়ে। স্বাভাবিকভাবেই বড্ড কবিতা পেলো অনন্তবাবুর। নেহাত মুদির ফর্দর বাইরে কোনো লেখালিখির দিকে ঝোঁকা হয়নি, কবিতা তো দূরের কথা। অন্যের লেখা দু'চারটে লাইন আবৃত্তি করতে পারলেও একটু অমৃতিগুলোকে একটা স্যালুট ঠোকা যেত বটে। কিন্তু কী জ্বালা; 'জনগণমন' আর 'জেহের হ্যায় কি পেয়ার হ্যায় তেরা চুমা' ছাড়া কোনো লাইন কিছুতেই মনে এলো না। গ্র‍্যাভিটি ব্যাপারটা বোধ হয়ে এমনই, মৃদু টানে দু'চার পা এগিয়ে অমৃতির থালার পাশে এসে এক মায়াবী অর্বিটে বাঁধা পড়লেন ভদ্রলোক।

মিনিট দশেকের মাথায় সেই মায়াবী আলোর কিছু কণা হৃদয়বন্দী করে বাড়িমুখো হলেন অনন্তবাবু। তাঁর একহাতে এককিলো টাটকা ভাজা অমৃতি। অন্য হাতে একটা ঢাউস ব্যাগে বেশ কিছু নীল-কমলা প্রিন্টের পর্দার কাপড় আর একটা প্লাস্টিকের প্যাকেটে সবুজ টিনের স্টিমার।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু