Thursday, December 20, 2018

অপটিমিজম

- অপ্টিমিজিমের চেয়ে বিরক্তিকর কিছু আর আছে কি?

- টেস্ট ম্যাচের সকালে বৃষ্টি, লুচির পাশে স্যালাড, ঘুমের মাঝে কলিংবেল; এ'গুলো বিরক্তিকর বটে। তবে অপ্টিমিজম বড় বালাই, এ আপনি সঠিক বলেছেন গুরুদেব।

- গুরুদেব হয়েই ভুল করলাম রে ভাই, সারাক্ষণ ভক্তদের বাড়াবাড়ি বায়নাক্কা সামাল দেওয়া।  হাজার রকম দাবী। এর মনে অশান্তি, ওর পেটে টিউমার। এ চায় মেডিটেট করতে, ও চায় পরোপকারের নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে। আদেখলামির বহর দেখলে গা-পিত্তি জ্বলে যায়।

- তা তো বটেই। আপনাকে তো কম সামাল দিতে হয়না। আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে তো এই ক'বছরে কত দেখলাম। সেই ভোর ছ'টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গেরুয়া জোব্বা পরে আপনাকে লোকজনের হাউমাউ শুনতে হয়। রাত গভীর হলে তবে একটু লুঙ্গি পরে রিল্যাক্স করতে পারেন।

- তবেই বলো। কাহাতক লোকের ইন্সপিরেশনের খিদে মেটানো যায়। আরে এ জীবনে মরতেই হবে, রাস্তায় নামলে কুকুরের ইয়েতে পা ফেলতে হবেই। বন্ধুরা যে আদতে ধান্দাবাজ আর নিজেকেও ধান্দাবাজি করেই কাটাতে হবে; সে'টাও না বুঝে উপায় নেই। তবু একগাদা গদগদে 'তুমি নির্মল কর, মঙ্গল কর' মার্কা কাতুকুতু দেওয়া কথা না শুনলে লোকজনের ভাত হজম হয় না।

- সত্যি। সত্যিই তো। যত অকালকুষ্মাণ্ডের দল।

- এই যেমন উত্তরপাড়ার অনন্ত হালদার। আমায় বলে কিনা 'গুরুদেব, ব্যবসায় অনেক পাপ করেছি। এ'বার মনকে শুদ্ধ করতে চাই'। আরে বাবা চব্বিশঘণ্টা নিউজ চ্যানেলে মুখ গুঁজে গাঁজখোর গল্প না শুনলে সে ব্যাটার কন্সটিপেশন শুরু হয়ে যায়, তার মনশুদ্ধি? তার চেয়ে হাতির শুঁড়কে মাফলার হিসেবে ব্যবহার করা সহজ।  আর এ যুগে পাপ ছাড়া ব্যবসা করবে? ইচ্ছে করছিল 'নেকু' বলে জুতোপেটা করি। কিন্তু ওই, গীতা থেকে আলতুফালতু দু'লাইন আউড়ে ব্যাটাকে শান্ত করতে হল।

- জুতোপেটাই তো অ্যালোপ্যাথি।  গীতা তো মনভোলানো হোমিওপ্যাথি।

- আমিও তাই বলি। কিন্তু লোকে চায় মিছিরি মাখানো সুড়সুড়ি। যেমন কুকুর তেমনি মুগুর। যেমন ডিমান্ড তেমন সাপ্লাই। এই যেমন কুদঘাটের উমা হালদার, পাঁচবার চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সিতে ফেল করেও সিএ হওয়া সাধ যায়নি। বলে আমার আশীর্বাদ থাকলে নাকি সে অসাধ্য সাধন করতে পারবে। যোগবলে নিজের মনসংযোগ বাড়িয়ে তুলে পরের বার পাশ করতে চায়। ফেলটু স্টুডেন্ট, তার আবার কত রঙিন শখ। নিজে ব্রিলিয়ান্ট নয়, সে'টা বুঝেও না বোঝার জন্য কী আপ্রাণ টালবাহানা।

-  সব অখাদ্য। ছ্যাহ্। সবাই এক! এই যেমন ধরুন, রোজ যে বৃদ্ধা ঘরের কোণে পড়ে থাকেন। রোজ, গোটাদিন।ওই যে, যার মুখ দিয়ে সচরাচর বাক্যি সরে না! উফ, গোটাদিন শুধু ফ্যাঁচফোঁচ কান্না। বহুদিন আগে তার ছেলে নাকি প্রেমে লেঙ্গি খেয়ে ঘরসংসার ছেড়ে হাওয়া...খোয়া ছেলেকে ফিরে পাওয়ার সে কী আকুতি। এত বছরেও বুড়ির অপটিমিজম গেল না। বিরক্তিকর তো বটেই, তাই না গুরুদেব?

- আমার বিড়ি প্যাকেটটা কই হে?

- গুরুদেব? সে বৃদ্ধাকে আপনার কাছে কোনো সদুপদেশ কোনোদিন চাইতে দেখিনি। গোটাদিন শুধু আপনি খাওয়াদাওয়া করেছেন কিনা, সেই খোঁজ নিয়েই দিন কাবার করেন তিনি। কী অদ্ভুত, তাই না গুরুদেব?

- অপ্টিমিজমের চেয়েও বিরক্তিকর একটা ব্যাপার আছে দেখছি৷ তোমার বাজে বকা। চটপট বিড়ির প্যাকেটটা দিয়ে কেটে পড়ো দেখি বাছাধন। এ'বার একটু জিরিয়ে নেব।

No comments: