Skip to main content

অপটিমিজম

- অপ্টিমিজিমের চেয়ে বিরক্তিকর কিছু আর আছে কি?

- টেস্ট ম্যাচের সকালে বৃষ্টি, লুচির পাশে স্যালাড, ঘুমের মাঝে কলিংবেল; এ'গুলো বিরক্তিকর বটে। তবে অপ্টিমিজম বড় বালাই, এ আপনি সঠিক বলেছেন গুরুদেব।

- গুরুদেব হয়েই ভুল করলাম রে ভাই, সারাক্ষণ ভক্তদের বাড়াবাড়ি বায়নাক্কা সামাল দেওয়া।  হাজার রকম দাবী। এর মনে অশান্তি, ওর পেটে টিউমার। এ চায় মেডিটেট করতে, ও চায় পরোপকারের নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে। আদেখলামির বহর দেখলে গা-পিত্তি জ্বলে যায়।

- তা তো বটেই। আপনাকে তো কম সামাল দিতে হয়না। আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে তো এই ক'বছরে কত দেখলাম। সেই ভোর ছ'টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গেরুয়া জোব্বা পরে আপনাকে লোকজনের হাউমাউ শুনতে হয়। রাত গভীর হলে তবে একটু লুঙ্গি পরে রিল্যাক্স করতে পারেন।

- তবেই বলো। কাহাতক লোকের ইন্সপিরেশনের খিদে মেটানো যায়। আরে এ জীবনে মরতেই হবে, রাস্তায় নামলে কুকুরের ইয়েতে পা ফেলতে হবেই। বন্ধুরা যে আদতে ধান্দাবাজ আর নিজেকেও ধান্দাবাজি করেই কাটাতে হবে; সে'টাও না বুঝে উপায় নেই। তবু একগাদা গদগদে 'তুমি নির্মল কর, মঙ্গল কর' মার্কা কাতুকুতু দেওয়া কথা না শুনলে লোকজনের ভাত হজম হয় না।

- সত্যি। সত্যিই তো। যত অকালকুষ্মাণ্ডের দল।

- এই যেমন উত্তরপাড়ার অনন্ত হালদার। আমায় বলে কিনা 'গুরুদেব, ব্যবসায় অনেক পাপ করেছি। এ'বার মনকে শুদ্ধ করতে চাই'। আরে বাবা চব্বিশঘণ্টা নিউজ চ্যানেলে মুখ গুঁজে গাঁজখোর গল্প না শুনলে সে ব্যাটার কন্সটিপেশন শুরু হয়ে যায়, তার মনশুদ্ধি? তার চেয়ে হাতির শুঁড়কে মাফলার হিসেবে ব্যবহার করা সহজ।  আর এ যুগে পাপ ছাড়া ব্যবসা করবে? ইচ্ছে করছিল 'নেকু' বলে জুতোপেটা করি। কিন্তু ওই, গীতা থেকে আলতুফালতু দু'লাইন আউড়ে ব্যাটাকে শান্ত করতে হল।

- জুতোপেটাই তো অ্যালোপ্যাথি।  গীতা তো মনভোলানো হোমিওপ্যাথি।

- আমিও তাই বলি। কিন্তু লোকে চায় মিছিরি মাখানো সুড়সুড়ি। যেমন কুকুর তেমনি মুগুর। যেমন ডিমান্ড তেমন সাপ্লাই। এই যেমন কুদঘাটের উমা হালদার, পাঁচবার চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সিতে ফেল করেও সিএ হওয়া সাধ যায়নি। বলে আমার আশীর্বাদ থাকলে নাকি সে অসাধ্য সাধন করতে পারবে। যোগবলে নিজের মনসংযোগ বাড়িয়ে তুলে পরের বার পাশ করতে চায়। ফেলটু স্টুডেন্ট, তার আবার কত রঙিন শখ। নিজে ব্রিলিয়ান্ট নয়, সে'টা বুঝেও না বোঝার জন্য কী আপ্রাণ টালবাহানা।

-  সব অখাদ্য। ছ্যাহ্। সবাই এক! এই যেমন ধরুন, রোজ যে বৃদ্ধা ঘরের কোণে পড়ে থাকেন। রোজ, গোটাদিন।ওই যে, যার মুখ দিয়ে সচরাচর বাক্যি সরে না! উফ, গোটাদিন শুধু ফ্যাঁচফোঁচ কান্না। বহুদিন আগে তার ছেলে নাকি প্রেমে লেঙ্গি খেয়ে ঘরসংসার ছেড়ে হাওয়া...খোয়া ছেলেকে ফিরে পাওয়ার সে কী আকুতি। এত বছরেও বুড়ির অপটিমিজম গেল না। বিরক্তিকর তো বটেই, তাই না গুরুদেব?

- আমার বিড়ি প্যাকেটটা কই হে?

- গুরুদেব? সে বৃদ্ধাকে আপনার কাছে কোনো সদুপদেশ কোনোদিন চাইতে দেখিনি। গোটাদিন শুধু আপনি খাওয়াদাওয়া করেছেন কিনা, সেই খোঁজ নিয়েই দিন কাবার করেন তিনি। কী অদ্ভুত, তাই না গুরুদেব?

- অপ্টিমিজমের চেয়েও বিরক্তিকর একটা ব্যাপার আছে দেখছি৷ তোমার বাজে বকা। চটপট বিড়ির প্যাকেটটা দিয়ে কেটে পড়ো দেখি বাছাধন। এ'বার একটু জিরিয়ে নেব।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু