Skip to main content

হরিহরবাবুর ডানা



১। 

- গোবিন্দদা! বড্ড বিপদে পড়ে এলাম এত রাত্রে। 
- হরিহর নাকি?
- হ্যাঁ। 
- তা কী ব্যাপার? তোমার গলা শুনতে পাচ্ছি দেখতে পাচ্ছি না কেন?
- কারণ আমি আকাশে! উড়ছি। এই দেখুন। 
- উড়ছ? সে কী ! সত্যিই ভাসছ তো দেখছি। 
- দিব্যি ছাতে গিয়ে পায়চারি করছিলাম। আচমকা কথা নেই বার্তা নেই দুই বগলের নিচ দিয়ে দু'টো ডানা বেরিয়ে এলো। চমকে গিয়ে যেই ঝটপট করেছি অমনি ভেসে উঠলাম আকাশে। সেই থেকে উড়ছি। 
- তা সমস্যাটা কোথায়?
- মানুষ হয়ে উড়ব গোবিন্দদা? 
- তা ঠিক। তবে...। 
- তবে কী গোবিন্দদা?
- বুঝে গেছি হরিহর! কোনও চিন্তা নেই। 
- কী বুঝলেন?
- এ'টা স্বপ্ন। স্বপ্ন ছাড়া মানুষ উড়তে পারে না। 
- কার স্বপ্ন? 
- আমার। আমি আসলে জানালার ধারে বসে বিড়ি খাচ্ছি না। ঘুমিয়ে আছি। স্রেফ স্বপ্নে এমনটা মনে হচ্ছে। 
- বলছেন? আমি রিয়েলি উড়ছি না?
- মানুষ তো। উড়বে কী করে?

২। 
- পঞ্চা! আজ স্কুল ছুটি!
- গরম গরম রুটি রে বিশু। 
- কিন্তু ইয়ে, নোটিশ ঠিক পড়লাম তো?
- আলবাত! আর তা ছাড়া হেডস্যার নিজে আমায় বললেন তো। হরিহর কাকা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। মানুষ কি উড়তে পারে? তা'হলে নিশ্চয়ই এ'টা স্বপ্ন। কার স্বপ্ন এ'টা নাকি এখনও বোঝা যায়নি। অনেকে দাবী করছে এ স্বপ্ন তাঁদের। কিন্তু যা হোক, স্বপ্নই যখন; তখন স্কুল খুলে রেখে কী হবে! 
- স্বপ্ন হলেও। ফুটবল খেলতে তো ক্ষতি নেই রে পঞ্চা। চ' ভাই। 

৩। 

- কী মুশকিল বলো হাবিলদার! স্বপ্নেও ডিউটিতে আসতে হলো! 
- যা বলেছেন দারোগা স্যার। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মালদহের হরিহর পুরকায়স্থ আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে ডানা ঝাপটিয়ে। খবরের কাগজে পর্যন্ত পড়লাম যে হরিহরের উড়ে চলাই প্রমাণ করছে যে আমরা সবাই স্বপ্নের মধ্যে আছি। তবুও সকালে উঠে বাজারে যেতে হল। মাগুর মাছ কিনে আনতে হল। ডিউটিতে আসতে হল। 
- সব ব্যাগার খাটুনি। কোন ব্যাটা যে স্বপ্ন দেখছে কে জানে। দেশ শুদ্ধু লোককে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে। যাক গে, হাজতের দরজা খুলে দাও। কেউ তো আর আদত আসামী নয়। সব স্বপ্ন। 
- যো হুকুম। 

৪। 

- প্রধানমন্ত্রীজী!
- অমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন বলুন তো স্পীকারদা?
- এ আমি কী দেখছি! আপনি লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে পার্লামেন্টে এসেছেন?
- আরে ধুর। এ'তো স্বপ্ন। দেখেননি আকাশে ওই হরিহর নামের লোকটা কেমন পতপত করে উড়ছে?
- কিন্তু তাই বলে...পার্লামেন্টে লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে?
- গামছা পরে এলেও ক্ষতি হত না স্যার। সবটাই তো স্বপ্ন। 
- দু'দিনে জিডিপি ডকে উঠেছে! সে খেয়াল করেছেন? বিরোধীরা আপনার কলার টেনে ধরবে বলে বসে আছে। 
- যেমন কুকুর তেমনি মুগুর। প্রধানমন্ত্রীর কলার ধরবে, ধর এবার স্যান্ডো গেঞ্জির কলার। ন্যাকামো। যাক গে, জিডিপি নিয়ে চাপ নেব কেন? এ'টা তো স্রেফ স্বপ্ন। 
- লোকে না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে!
- স্বপ্নে বিরিয়ানি খেয়েই বা হবে। হরিহরবাবু উড়ছেন। 
- সীমান্তে সেনাবাহিনী ঘুমোচ্ছে। 
- আমিই বলেছি। পরের স্বপ্নে জেগে কুচকাওয়াজ করে কী লাভ? আমি সেনাপ্রধানকে বলেছি স্বপ্ন না ভাঙা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ছুটি। 

৫। 

কবিতার খাতাটা নদীর বুকে ছুঁড়ে ফেললেন কবি। একটানা স্বপ্নবাসে ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলেন। 
যুদ্ধ নেই। 
মতান্তর নেই। 
মন কষাকষি নেই। 
কফি হাউস বন্ধ। 

শুধু অপেক্ষা। স্বপ্ন শেষ হওয়ার অপেক্ষা। উড়ন্ত মানুষটার নেমে আসার অপেক্ষা। 

৬। 

খবরের কাগজের পাঁচের পাতার নিচের দিকে 'চাকরী গেল ঈশ্বরের' হেডলাইন দেখে বেশ ভেবড়ে গেলেন মনোজবাবু। ইভোলিউশনারি চমক দিতে গিয়ে নাকি ভদ্রলোকের চাকরী গেছে, ভাবা যায়? আর সে খবর বেরিয়েছে কলকাতার খবরের কাগজে। ভাবা যায়?  

তবে ভেবে না ওঠার কোনও কারণ নেই। স্বপ্নে কী না হয়। মানুষ ওড়ে, ঈশ্বরের চাকরী যায়। হতেই পারে। 

Comments

swarvanu said…
ei lekhata bhishon bhalo laglo.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু