Skip to main content

সকলই তোমারই


- মন্টুদা! 
- উঁ।
- ও মন্টুদা! 
- কী! ঘ্যানঘ্যান করছিস কেন।
- এ'বারে ভাসাতে হবে তো।
- মনে সুরটা এখনও ফ্লোট করছে রে..।
- সুর?
- আমার মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন। গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
- সুর বোধ হয় না মন্টুদা, বিলু বলল গাঁজার ডোজটা একটু কড়া হয়ে গেছিল নাকি...। আর গায়ে কাঁটা দিচ্ছে ঠাণ্ডায়, গঙ্গার ভেজা হাওয়া তো।
- গঞ্জিকা বল। ভক্তিভাব থাক।
- ভাসাতে হবে যে এ'বার।
- রংমশালগুলো কই?
- মিঠুদা ফুলবেলপাতার ঝুড়ির সঙ্গে তুবড়ি রংমশালের পেটিটাও জলে দিয়ে দিয়েছে।
- আহাম্মক।
- ঠিক।
- তবে মিঠু কবিতা লেখে ভাই। মিঠুকে আহাম্মক বললে ধর্মে সইবে না।
- স্কাউন্ড্রেল বলো। ম্লেচ্ছ খিস্তি হিন্দু শাস্ত্রে ইন্টিগ্রেট করা নেই বোধ হয়। এ'বার চলো, তুমি না এলে ভাসান লীড করার কেউ নেই।
- মন রে এমএস এক্সেল জানো না...মন রে...।
- ক্লার্কপ্রসাদী মন্টুদা?
- হেহ্, তুই বুঝিস। আরে ভাসাতে যাব! ভাসালে তো ভেসেই গেল। মা দু'চার মিনিট প্ল্যাটফর্মে ওয়েট করছেন,  করুন। সী অফ করতে এসে অত লাফালাফি করলে হয় না। আমরা পান্নালালের জাত, মিউজিক ইজ আওয়ার ধর্ম। চাই না মা গো রাজা হতে, রাজা হওয়ার সাধ নাই মা গো, দু'বেলা যেন পাই মা খেতে।
- আহা, তোমার গলায় মায়া আছে মন্টুদা। চোখে জল আসে।
- একটান দিবি নাকি?
- আমার আবার সয় না।
- শিবের চ্যালাগিরি না করে মায়ের পেয়ারের ছেলে হওয়া যায় না। সয় না আবার কী?নে টান।
- কড়া! 


- কেমন?
- মন্দ না। মন্টুদা, ভাসাবে না?
- কালো মেয়ের পায়ের তলায়, দেখে যা আলোর নাচন!
- আহা! আর দু'টান দাও দেখি।
- মায়ের রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব যার হাতে মরণ বাঁচন।
- দেখে যা আলোর নাচন। আহা, মন্টুদা, আমায় দীক্ষা দাও।
- আমি দীক্ষা দেব রে? আমি কে? সকলই তোমারই ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি...।
- মায়ের মেসেজ ট্রান্সমিট করে দিও। তাহলেই হবে।
- কয়েকটানেই বেশ ফ্লোট করছিস।
- প্লাস গায়ে কাঁটা। 
- গুড বয়। নে, কল্কেটা দে।
- আর দু'টান।
- মায়ের একটা মেসেজ এসছে, তোর জন্য।
- কমিউনিকেট গুরুদেব।
- কালীপুজোর ভাসানে গাঁজা টানার বান্দা তো তুমি নও চাঁদু! 
- ইচ্ছে। ইচ্ছে।
- ইচ্ছে? তা ইচ্ছে কি গতকাল লাল পেড়ে গরদের শাড়ি পরে মণ্ডপে এসেছিল? 
- গরদ দেখলে? জ্বলজ্বলে বিলিতি বর দেখলে না? গরদের ডান পাশ আলো করা?
- পান্নালালে ইন্ডাক্ট না হতে পেরেই তোদের জেনারেশন ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল। ফলপ্রসাদ সাজানোর সময় তোর দিকে এক জোড়া ছলছলে চোখ ঠায় তাকিয়ে রইল সে'টা ক্যাপচার করতে পারলি না। ক্রিমিনাল। 
- আসলে...। ইয়ে, আর দু'টান যদি...!
- কত রাত হল দেখেছিস! এখন না ভাসালেই নয়। চল, ক্যুইক! এ'বার কালী তোমায় ভাসাবো, বলো, এ'বার কালী তোমায় ভাসাবো! 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু