Skip to main content

ক্যাপ্টেন ক্ক্ব্র আর ঈশ্বর

- কী বুঝছ ভধ্রকিধস? 
- ক্যাপ্টেন ক্ক্ব্র, আমাদের এই মিশন ঐতিহাসিক সাফল্য লাভ করতে চলেছে।
- এই গ্রহ মড়া নয়?
- মরাদের গ্রহ, তব এ গ্রহ চিরকালীন মড়া নয়। আজ থেকে মাত্র দেড় লাখ বছর আগেও এখানে বাসযোগ্য পরিবেশ ছিল। প্রচুর অক্সিজেন, অফুরন্ত জল। আর প্রাণ।
- তুমি নিশ্চিত ভাই ভধ্রকিধস? এ'খানে প্রাণ ছিল? আমাদের টীম তো কোনও প্রমাণই যোগাড় করতে পারেনি। এ'দিকে স্পেসশিপ ফেরত নিয়ে যাওয়ার দিন সামনেই।
- ক্যাপ্টেন ক্ক্ব্র, প্রমাণ যোগাড় করতে পেরেছি বলেই তো আপনার কাছে আসা। এ গ্রহে শুধু বহু রকমের প্রাণিই ছিল না, রীতিমত উন্নত প্রজাতিও বাস করত।
- দেশে ফিরে এমন বাজে বাতেলা দিলে হবে না। যদি এতই উন্নত প্রাণীদের বাস ছিল তবে সে সব চিহ্ন কই? তাঁদের ফসিল? তাঁদের সৃষ্টি?
- আমি এই বিস্তীর্ণ প্রান্তর চষে ফেলেছি ক্যাপ্টেন ক্ক্ব্র, আর এ'খানে সে'সব চিহ্ন কিছু নেই বটে। তবে প্রতিটা বালুকণায় রয়েছে পারমাণবিক বিস্ফোরনের চিহ্ন, সে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ যে এ গ্রহের সমস্ত কিছু সাফ হয়ে গেছে। পাহাড়  নিশ্চিহ্ন,  সমুদ্র গায়েব, বাতাস হাওয়া। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ গ্রহের আয়তনও অনেক বড় ছিল। কিন্তু সে বিস্ফোরণ এতই খতরনাক ছিল যে গ্রহ থেকে কয়েক খাবলা উড়ে যায়। 
- পারমাণবিক বিস্ফোরণ? অত্যাধুনিক পারমাণবিক অস্ত্র?
- হ্যাঁ। 
- তার মানে ততটাও উন্নত বুদ্ধির প্রাণি নয়।
- সে'খানেই খটকা ক্যাপ্টেন ক্ক্ব্র, পারমাণবিক অস্ত্রে নিজেদের গ্রহ নিকেশ করে দেওয়া প্রাণীদের মগজ অত সুবিশাল আর ক্ষুরধার কী ভাবে হয়? দেহগঠনেই বা তাঁরা অত উন্নত কী ভাবে হয়েছিল? 
- যে'খানে পাহাড় সমুদ্রের নিশ্চিহ্ন, সে'খানে তুমি সে প্রাণীদের মগজ আর দেহগঠনের ব্যাপারে কী ভাবে জানলে হে ভধ্রকিধস?
- সে'টাই তো চমক! যে'খানে সমস্ত কিছুই ধুলো হয় গেছে, সে'খানে কোনও এক জাদু মন্ত্রবলে  একটা অতিকায় মূর্তি রয়ে গেছে। 
- বলো কী!
- স্পেসশিপ থেকে দেড় হাজার মাইল পশ্চিমে বালি খুঁড়ে এ'টা উদ্ধার করেছি ক্যাপ্টেন। স্পেসশিপের জানালা দিয়ে দেখুন, আপনার খিদমতে হাজির করেছি সেই মূর্তি।
- কই দেখি!
- এই যে। এ'দিকে!
- দুর্ধর্ষ,  দুরন্ত, দুর্দান্ত।
- কেমন দেখলেন? ক্যাপ্টেন ক্ক্ব্র?
- ঈশ্বর! আমার যে ঈশ্বর দর্শন হল হে ভধ্রকিধস!
- অতি উন্নত প্রাণী!
- আমাদেরই মত পা; পেশিবহুল,  মজবুত, ক্ষিপ্র। অথচ বুকের বাহুল্য নেই। হৃদয়ের টনটন নেই, অম্বলে বুকজ্বালা নেই। মগজ আর উদর মিলে...।
- যে সে উদর নয় ভধ্রকিধস! স্ফীতোদর। তা'তে মগজগুণ মেশাতে পারলেই ইভোলিউশনের চরম স্তর; ঈশ্বর। পাহাড়, সমুদ্র লোপাট হয়ে গেলেও, ঈশ্বর তাঁর নিজের চিহ্নটুকু বিলিন হতে দেননি। 
- ক্যাপ্টেন ক্ক্ব্র, আদেশ দিন।
- এসেছিলাম ভিনগ্রহে প্রাণের খোঁজে, ফিরে যাচ্ছি ঈশ্বরের চিহ্নটুকু নিয়ে। ও মূর্তিকে এখুনি স্পেসশিপে নিয়ে এসে ধূপদীপ দাও। 



Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু