Skip to main content

শিশু দিবস

বন্দুকটার দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে খোকা।

কাঠের আলমারিতে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো। কালো চকচকে নল। কাঠের পালিশ করা বাট। ট্রিগারটা অল্প আলোতেও চকমক করে ওঠে। কার্তুজ ভরা নেই। বাবা যখন ছিল, তখন ও'তে কার্তুজ ভরা হত। দাদীর কাছে খোকা শুনেছে যে বাবা ওই বন্দুক হাতে লক্ষ্যভদে অব্যর্থ ছিল।

বাবা।
বাবা।

যাদের বোমায় খোকাদের বাড়িঘর সে'বার জ্বলে ছাই হয়ে গেছিল, সাথে পুড়ে মরেছিল মা; তাদের শায়েস্তা করতে এ বন্দুক পিঠে মরুভূমি পেরিয়ে যুদ্ধে গেছিল বাবা।

বন্দুকটার দিকে এক মনে তাকিয়ে থাকে খোকা। দাদী কাঁদে।  আলমারির অন্য কোনে মায়ের কাজলের ডিবে।  বন্দুকের পালিশে আর কাজলের ডিবের চকমকে খোকা বাবা-মা'কে মনে করা চেষ্টা করে।

খোকার থেকে দু'হাত দূরে সে বন্দুক।
তার থেকে পাঁচ হাতে ডাইনে গেলে দাদীর ছোট্ট ঘরের ভাঙাচোরা বারান্দা।
সে বারান্দা পেরিয়ে আধ মাইল ধুলো মাখা পথ হাঁটলে ছোটা পাহাড়। সে পাহাড় খোকার বড় প্রিয়। স্কুল ভাঙার পর সে পাহাড়েই তার দুপুর কেটে যায়।

ছোটা পাহাড়ের ও'পারে মরুভূমি। শুখা, খটখটে। মাইলের পর মাইল। সে মরুভূমির ও'পার থেকে কারা যেন উড়ে এসে বোমা ফেলে যায়। তারা শত্রু।

শত্রু। খোকার ঠোঁট কেঁপে ওঠে। শত্রু। বাবা মরুভূমি পেরিয়ে সে দেশে গেছিল, প্রতিশোধ নিতে। ওরা মাকে মেরে ফেলেছিল।

বাবা ফেরেনি, বাবার স্মৃতিমাখানো বন্দুকটা কীভাবে যেন ফিরে এসেছিল।

ছোটাপাহাড়ের ও'পাশের মরুভূমি পেরোলেই স্বপ্নের দেশ। সে স্বপ্নের গায়ে চাপ চাপ তাজা রক্ত। সে'খানে দেশনায়ক অশ্রুসজল কণ্ঠে আশ্বাস ঘোষণা করেন;

"ওরা আমাদের অসহায় ভাইবোনেদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। আমাদের ফুলের মত খোকাখুকুদেরও রেয়াত করেনি। সে অমানুষদের আমরা ছেড়ে কথা বলব না। তাদের উচিৎ শিক্ষা না দিয়ে আমরা জিরোব না। সহনাগরিকদের প্রতি এ আমার প্রতিশ্রুতি। তাদের আস্তানা যে ছোটা পাহাড়ের ও'পাশের গ্রামে, সে সম্বন্ধে আমাদের কাছে নিশ্চিত খবর রয়েছে। প্রতিশোধের যুদ্ধ এ'বার শুরু। আজ শিশু দিবসে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার যে এ দেশের আর একজন শিশুর জীবনও অকালে নষ্ট হবে না। হ্যাপি চিল্ড্রেন্স ডে"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু