Skip to main content

খুনের গল্প

- ক'টা?
- কী ক'টা?
- বন্দুকে গুলি। ক'টা বাকি?
- চারটে। দু'টো চুনোপুঁটিতে নষ্ট হল।
- লাশ ইজ লাশ, তাঁকে চুনোপুঁটি বলে ছোট করতে নেই।
- যে আজ্ঞে।
- এ'বার শোন। এই যে চারটে গুলি, বুঝলে জনার্দন, সাবধানে খরচ করবে।
- আজ্ঞে।
- একটা আমার ডান কানে, একটা বাঁ কানে। বাকি দু'টো আমার মুখে নল গুঁজে। ইন দ্যাট অর্ডার। কেমন?
- আজ্ঞে।
- আর শোনো বাবা, আমার সিকুইরিটি দু'টোকে মাত্র দু'টো বুলেটেই নিকেশ করেছ বলে ভেবোনো যে আমার মত স্টলওয়ার্ট বডিতে মাত্র একটা বুলেট নিয়ে নিকেশ হবে। চারটেই আমার চাই, ডায়রেক্ট মগজে।
- আজ্ঞে দু'টো কানের মধ্যে দিয়ে আর দু'টো মুখের ভিতর দিয়ে।
- বাহ। বেশ ব্রাইট খুনি তো হে তুমি জনার্দন।
- উচ্চমাধ্যমিকে সেকেন্ড ডিভিশন ছিল আজ্ঞে।
- বেশ। তাহলে চালাও গুলি।
- আজ্ঞে, তার আগে একটা প্রশ্ন ছিল। যদি অনুমতি দেন।
- তোমার হাতে পিস্তল। আমার ঘাড়ে সিঙ্গেল মাথা। অনুমতি দিলাম।
- টাকা দিয়ে নিজেকে খুন করাচ্ছেন কেন?
- গুরুর আদেশ।
- গুরু সুইসাইড করতে বলেছেন?
- আলবাত। ঠিক এখনই, এই টুবয়েন্দাগো তিথিতে।
- টুবয়ে...য়ে...য়ে।
-  টুবয়েন্দাগো তিথি। আমার গুরু তিব্বতের মানুষ কিনা। তিনি এ'দেশে এসে রয়ে গেছেন স্রেফ মাটনের ঝোলের কোয়ালিটির জন্য। নয়তো বছর কুড়ি আগেই নাকি তার আজারবাইজানে চলে যাওয়ার কথা।
- তিনি সুইসাইড করতে বলেছেন?
- আত্মহত্যা মহাপাপ নরকে গমন, শুনিসনি? এ'টা তো খুন, তুই খুন। অতএব তুই পাপী। আরে দু'কানে একটা করে গুলি আর মুখে দু'টো বুলেট নেওয়া মৃত্যু অতি পবিত্র।
- আজ্ঞে, গুরুমশাই তেমনটা বলেছেন?
- আলবাত। তেমন ভাবে মারা গেলে পরজন্মে রোজ রোজ এবেলা ওবেলা ইলিশভাত। চোরাকারবার না করেও।
- পরজন্মে রোজ ইলিশ খাওয়ার জন্য নিজেকে খতম করছেন?
- তুমি কি ইলিশের আদত মূল্য আজও অনুধাবন করতে পারোনি জনার্দন? আমার বারোটা সিন্দুক ভরা হীরেতেও এ যুগে এবেলাওবেলা ইলিশ জোটানো যাবে ভেবেছ? বাজারের দরদামের খবর রাখো বাবা জনার্দন?

**

দীনবন্ধু শেঠ অতি ধুরন্ধর ক্রিমিনাল। চোরাকারবার, স্মাগলিং, তোলাবাজি; তিনি সর্বত্রস্থিত। তাঁর তিরিশ বছরের দৌরাত্ম্যে পুলিশও রাশ টানতে পারেনি। অথচ সমাজকে তাঁর শয়তানির মাশুল নির্মম ভাবে গুনতে হত অনবরত।

পুলিশের ব্যর্থতায় তিতিবিরক্ত বটু গোয়েন্দা বুঝেছিলেন যে তাঁকেই কিছু করতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ায় অবশ্য তাঁর ঘোর আপত্তি কিন্ত দীনবন্ধুকে নিকেশ করায় বিলম্বটাও অসহ্য ঠেকছিল।

অতএব,
লড়াইয়ে মাঠে নামো রে।
তুখোড় মেকাপে সাধু সাজো রে।
শেঠের অশিক্ষা আর অন্ধবিশ্বাসে খেলে তাঁকে বশ করো রে।
ইলিশের লোভে তাকে সুইসাইডের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাও রে।

সেদিন সন্ধ্যেবেলা মেকআপ রিমুভ করার সময়ই টিভি নিউজে শেঠ দীনবন্ধুর খুনের খবর পেলেন বটুগোয়েন্দা।
"টুবয়েন্দাগো তিথির আইডিয়া বটু গোয়েন্দা ছাড়া কার মাথায়ই বা আসতো"?।
এ'সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হেসে খানিক গড়িয়ে পড়লেন বটু।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু