Skip to main content

এটিএম ও সিদ্ধার্থবাবু

বাবার ডেবিট কার্ড নিয়ে এটিএমের সামনে লাইনে দাঁড়য়েছিলেন সিদ্ধার্থ।  ইয়ং চ্যাপ। মুখে স্মিত হাসি। সম্প্রতি পাঁচশো হাজারের নোট বাতিল হওয়ায় লাইন একটু লম্বা তবে ঘাবড়ানোর কোনও কারণ নেই। মোবাইলে জিও কনেকশন ব্যবহার করে ইউটিউবে বেস্ট অফ হিমেশ রেশমিয়া চালিয়ে দিলেন তিনি।

পনেরো নম্বর গানের মাথায় সিদ্ধার্থ টের পেলেন তাঁর সামনের ভদ্রলোক অসুস্থ বোধ করছেন। মাথা ঘোরা, বমি ভাব। ভিড় আর গ্লোবাল ওয়ার্মিং মাখানো নভেম্বর সহ্য করা চাট্টিখানি কথা নয়।
বত্রিশ নম্বর গানের মাথায় লাইনে দাঁড়ানো এক ছোকরা জানালে যে গত তিনদিন ধরে অন্তত আড়াইশো এটিএমের সামনে সে হত্যে দিয়ে পড়েছে কিন্তু প্রত্যেক বারই তাঁর সুযোগ আসার আগেই এটিএম খাঁখাঁ হয়ে গেছে। এ ট্রমায় নাকি তাঁর মনের বয়স অন্তত চল্লিশ বছর বেড়ে গেছে, ডায়াবেটিস হাইপারটেনশন কলার টেনে ধরল বলে। বাড়তি ট্রমা এড়াতে লাইন ছেড়ে বেড়িয়ে গেল সে ছোকরা।
প্লেলিস্টের বেয়াল্লিশ নম্বর গানের মাথায় লাইনে দাঁড়ানো এক ভদ্রলোকের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও ক্যাশ পাব কি পাব না; সে টেনশন সহ্য করা মামুলি নয়।
চুরাশি নম্বর গানের মাথায় লাইন ত্যাগ করে যিনি বেরিয়ে গেলেন, সে ভদ্রলোকের মুখে স্মিত তৃপ্ত হাসি। "এটিএমে আমার পয়সা আছে, শান্তি তো নেই। বয়ে গেছে আমার লাইনে পচতে"। তাঁর মুখে সন্ন্যাসীসুলভ আভা।

রেশমিয়ার দু'শো বাহাত্তর নম্বর গানে পৌঁছেও জিওর ফোরজি ডেটার হাঁফ ধরেনি। এটিএমের সামনের লাইনও শুকিয়ে যায়নি।

কিন্তু ততক্ষণে সিদ্ধার্থের মনের মধ্যে তোলপাড় ঘটে গেছে। সে স্পষ্ট দেখতে পেরেছে যে এটিএম কাউন্টারের পাশের অশত্থ গাছের নিচে কে যেন পায়েসের স্টল দিয়েছে।
পায়েস। সে সুবাস নাকে আসতেই ডেবিট কার্ড, পিন নাম্বার, দু'হাজার টাকার নোট; সমস্ত কিছু সিদ্ধার্থর মাথা থেকে গেলো উবে।

মন্ত্রমুগ্ধের মত লাইন ছেড়ে পায়েশের স্টলের দিকে হাঁটা দিলেন সিদ্ধার্থ।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু