Skip to main content

জিমনাস্টিকের কবলে

সে'বার। বলা নেই কওয়া নেই।

১৯৮৩র অলিম্পিকে দীপা১, দীপা২, দীপা৩, দীপা৪, দীপা৫, দীপা৬, দীপা৭, দীপা৮, দীপা৯, দীপা১০ আর দীপা১১ চমকে দিয়ে জিমনাস্টিকে সমস্ত মেডেলগুলো জিতে নিলেন। এর আগে দু'একটা টুকরোটাকরা জিমন্যাস্টিকস মেডেল যে এ দেশে আসেনি তা নয়, কিন্তু অলিম্পিকের সমস্ত মেডেল এক সাথে?

ব্যাস। গোটা দেশ হুমড়ি খেয়ে পড়লে জিমন্যাস্টিক্সে। খোকার ঘরের দেওয়ালে দীপা১য়ের পোস্টার, বিজ্ঞাপনে দীপা২, খবরের কাগজ আলো করে দীপা৩ ইত্যাদি।পাড়ায় পাড়ায় দীপাদের সংবর্ধনা। এর ওপরে জুটলো এসে বিসিজিআই, বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর জিমনাস্টিকস ইন ইন্ডিয়া। তারা করলে কী একটা মজবুত ব্যবসা ফেঁদে বসলে। ব্যবসা ফাঁদলে যা হয়, জিমন্যাস্টদের পকেটে টু পাইস এলো, তাদের রোয়াব বাড়লো। আর সস্তা পয়সায় কী না হয়? মানি বিগেটস মোর মানি অ্যান্ড সাকসেস। পয়সার জোরে, ব্যবসার জোরে জিমন্যাস্টিক্সে আরও সাফল্য আসতে লাগলো।

ফলত, তেলা মাথায় তেল। জিমনাস্টিকে টপাটপ মেডেল আর শিরোপা। নজর দিচ্ছি ভাববেন না ভাইটি, জিমনাস্টিকে পয়সা থাকুক, বিজ্ঞাপন থাকুন, সাফল্য থাকুক, কিন্তু সে সাফল্যের ট্যাক্স হিসেবে যে বাকি খেলাগুলো ধুয়ে মুছে যেতে বসেছে।

আমরা খুব সহজে নাম ভুলে যাই।  খুব সহজে। দুরন্ত মারাঠা শচীন তেন্ডুলকারকে মনে আছে? সেই যে সে'বার ২০০০য়ের বিশ্বকাপে টিমকে প্রায় একটা ম্যাচ জিতিয়ে ফেলছিল ছেলেটা। প্রায়। প্রায় জিতে ফেলেছিল আর কী! মনে রেখেছেন তার স্ট্রাগেলের কথা? কী খাটাখাটনি করে ছেলেটা কত অল্প বয়স থেকে ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিল। না।

আপনারা মনে রাখেননি। কারণ আপনাদের মন জুড়ে জিমন্যাস্টিক প্রিমিয়ার লিগের রোশনাই। হিংসে করছি না জিমনাস্টিককে। শুধু মনে করিয়ে দিচ্ছি।

জিমনাস্টিক বজ্জাতি করে স্রেফ সাফল্য আর ব্যবসা দিয়ে ভুলিয়ে রেখেছে আপনাকে আমাকে সবাইকে। অথচ ভিভিএস লক্ষণের যুদ্ধটা কেউ বোঝে না। কেউ না। হতে পারে তার তেমন কোনও সাফল্য আসেনি, কিন্তু তাই বলে তার স্ট্রাগলটা মিথ্যে হয়ে যাবে? সেই যে'বার তার বদান্যতায় ভারত পাপুয়ানিউগিনিকে হারিয়েছিল, সে'টা আজ আমরা কী সহজে ভুলে গেছি! আমরা মনে রাখিনি যে ক্রিকেটের স্বল্প সাফল্য ইজ নট বিকজ অফ আওয়ার সাপোর্ট বাট ডেস্পাইট আওয়ার অ্যাপাথি। কী ইনফ্রাস্ট্রাকচার দিয়েছি আমরা লক্ষণ শচীনদের? শুধু জিত দিয়ে ওদের বিচার করা যায়?

জিত। এই জিতের নেশায় আমাদের বুঁদ করে রেখেছে সর্বনাশা জিমন্যাস্টিকস। চার বছরে একবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ এলে আমাদের শচীন প্রেম উথলে উঠবে আর বাকি সময়টা দীপাই আমাদের ভগবান। বছরের অন্য সময়টা শচীন মুখে রক্ত উঠে মারা গেলেও আমাদের কিছু এসে যাবে না কারণ ভারত আগামী ক্রিকেট বিশ্বকাপের মূলপর্বের জন্য কোয়ালিফাই করতে পারেনি।  খেলাটাকে আমরা চিরকাল হারজিতেই দেখে আসব, স্ট্রাগলটুকুর রোম্যান্স বুঝবো না কোনওদিন।

শচীনরা বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডে হেরেছে কিন্তু বুক চিতিয়ে লড়াই করে। আমার কাছে শচীন একজন চ্যাম্পিয়ন,  সে বিশ্বকাপ খেলতে পারুক বা নাই পারুক।
দীপা শুধু মাত্র একদল ব্যবসাদারের ঘুঁটি, যার খাতায় সাফল্য হলো একমাত্র অস্ত্র; রোম্যান্সের যেখানে কোনও জায়গা নেই।

এ পোড়া দেশে ক্রিকেট নিজের দোষে মারা যাচ্ছে না, মারা যাচ্ছে টপাটপ জিমন্যাস্টিকস মেডেলগুলোর জন্য। মেডেলই সব নয়, জিতটুকুই শেষ কথা নয়। দীপার ভগবান হয়ে থাকাটাই শেষ কথা নয়।

শচীন না জিতুন, উনি প্যাডেল স্যুইপে বিশ্বের মন জয় করেছেন। ওনার স্ট্রাগল আমরা ভুলবো না। সে'টাই রোম্যান্স, জিমন্যাস্টিক্সের মত সসর্বগ্রাসী ব্যবসা নয়।

জয় হিন্দ।

Comments

Anonymous said…
লেখার মাধ্যমে চেতনার উদ্রেক হবে - এ দেশ কি এতই কম পোড়া।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু