- কেমন আছেন স্যার?
- কেমন দেখছো অনিকেত?
- এক্স রে বলছে বারোটা ফ্র্যাকচার।
- তেরো নম্বরটা ডিটেক্ট করতে পারেনি।
- তেরো?
- কনফিডেন্স।
- আমি সেক্রেটারি। ছোট মুখে বড় কথা আমার সাজে না। আপনি যাকে বলে; ফিল্দি রিচ...। এ বয়েসে নতুন কিছু শেখার শখ হয়েছে। ভালো কথা। হর্স রাইডিং শিখুন, চাইনিজ শিখুন। তাই বলে পাইপ বেয়ে উঠে চুরি? এ'টা কোন শেখার শখ হলো?
- তুমি এত ডিসকারেজিং কেন হে ছোকরা? সব ব্যাপারেই এমন পেট রোগা মুখ করে ওপিনিওন দাও কেন?
- বেশ। বলবো না। তবে ওই। বারোটা ফ্র্যাকচার জুড়ে যাবে। তেরো নম্বরটা খুবলে থাকলেই আপনার মঙ্গল।
- তোমার স্যালারি আমি দিই।
- আজ বারোটা হাড় ভেঙেছেন। কাল খুলি গুঁড়ো হলে কীসের স্যালারি, কীসের কী?
- আরে গণ্ডগোল হত না। তরতর করে পাইপ বেয়ে উঠে গেছিলাম চার তলা। আর এক তলা বাইলেই ঢনঢনিয়ার পাঁচ তলার অ্যাপার্টমেন্টের খোলা জানালা। কী মনে হল, পকেট থেকে ক্লোরোফর্মের ন্যাকরাটা বের করে শুঁকে দেখতে গেলাম ঠিকঠাক রেডি কি না। তারপর জ্ঞান ফিরতে দেখি এখানে শুয়ে। সে'বার কোল্ডস্টোরেজের ব্যাবসায় নুকসান করে এমন পেটখালি একটা ফিলিং এসেছিলো।
- ঢনঢনিয়া সাহেব দেখে গেছেন আপনাকে। তখনও আপনি অজ্ঞান। ইন ফ্যাক্ট, উনিই আপনাকে হস্পিটালে নিয়ে আসেন।
- ছি! ছিঃ! কী বেইজ্জতি। একটা চুরি করতে পারলাম না।
- চুরি করারই যখন শখ চেপেছিল তখন সামন্তবাবুর রিকুয়েস্টে ভোটে দাঁড়ালেই পারতেন। পাইপ বেয়ে ওঠা, ক্লোরোফর্ম, এ'সব আপনাকে মানায় না।
- সেক্রেটারি হিসেবে এত বাজে কথা বলাও তোমায় মানায় না। আমায় কবে ছাড়বে বলছে?
- দেড় মাস। মিনিমাম।
- সে কী! আগামী শনিবারে দাসগুপ্তর বাড়ির সিন্দুকে চড়াও হব ভাবছিলাম।
- দাসগুপ্ত?
- অনুপ দাসগুপ্ত।
- আপনি ছাড়া আর ক'টা অনুপ দাসগুপ্ত আছে স্যার?
- জানি। ভাবের ঘরে চুরি।
- নিজের বাড়িতে চুরি করবেন?
- তিন তলার ঘরে সিন্দুক। জলের পাইপ বেয়ে তিন তলার বারান্দায়। তারপর তার দিয়ে ঘরের তালা খুলে..এন্ট্রি। আমার গোপন সোর্স আমায় সিন্দুকের কম্বিনেশন ইতিমধ্যেই জানিয়ে রেখেছ।
- সিন্দুক আপনার। কম্বিনেশন আপনার। আপনার সোর্স আপনিই।
- আমি কি এলাবোরেশন চেয়েছি তোমার কাছে? সেক্রেটারি, সেক্রেটারির মত থাকবে।
- তা বেশ।
- হুঁ। খালি দাসগুপ্তর ডোবারম্যানগুলোকে নিস্তেজ করে রাখতে হবে। সে হবে'খন।
- স্যার।
- অনিকেত।
- চোদ্দ নম্বর ফ্র্যাকচারটা সবচেয়ে পুরোনো, না?
- চোদ্দ?
- চোদ্দ। অনেক পুরোনো, না বাবা?
- বড় চাকরী বা ব্যবসা তো দূর অস্ত। সেক্রেটারির কাজও তোমার দ্বারা হলো না কোনওদিন। স্যার বলে ডাকবে। বাবা নয়। স্যার।
- আসি। কেমন?
- এখনই? ভোর হয়ে গেছে?
- হলো বলে। আই হ্যাভ টু গো।
- ওই সিন্দুক তোর মা আগলে রেখেছে। ঢুকতে দেয় না সে ঘরে আমায়। ঢুকতে দেয় না। সিন্দুক ছুঁতেও দেয় না। তোকে দেখব কী করে? তাই তো। তাই তো চুরি প্র্যাক্টিস করতে চাইছি। চাইছি। পারছি না।
- বাবা। সেদিন অ্যাক্সিডেন্টের পর আমার বডিটাকে শ্মশানে না নিয়ে গিয়ে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করে সিন্দুকে পুরে রাখাটা যতটা বোকামি, এই তোমার চুরি প্র্যাক্টিসও ততটাই।
- খোকা।
- অনিকেত বলুন স্যার। সেক্রেটারি মানুষ বলে কথা।
- হে হে। রাইট। অনিকেত।
- আসি স্যার। ভোর হল বলে। আর...উম...হাউ ইজ শি?
- সিন্দুকের ভিতরে একটা লাশ। আর বাইরের লাশটা তোর মায়ের। নেহাত এখনও শ্বাস নেয়, তাই তোর সাথে সিন্দুকে ঢুকে বসে থাকতে পারে না।
- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না। - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো। - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত। - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র। - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...। - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা
Comments