Skip to main content

রাগ অভিমান

- বাবা! ও বাবা!
- কিছু বলার আছে তোমার বৌমা?
- নয়তো এলাম কেন?
- যা বলার বলে ফেলো।
- ওষুধের ডিবেতে লেবেল করে রেখেছি। জলখাবারের পরে আর রাতে খাওয়ার পরে। ভুল হলেই কিন্তু প্রেশার আবার হাই।
- আমার প্রেশার। আমার ওষুধ। আমি বুঝবো।
- আলমারির চাবি, বিছানার তোষকের নিচে। ওই মাথার দিকে।
- চাবি তোষকের তলে থাক। পাতালে থাক। তোমার কী?
- কমলাকে রান্নায় তেলের মাপ বুঝিয়ে দিয়েছি। চিন্তা নেই। শুধু সময় করে ডিনার সেরে নেবেন। দশটা বাজে না যেন।
- তেলে চুপচুপে বেগুন ভাজা খাবো রাত বারোটার পর। তা'তে কার কী? যে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তার গালভরা কথা শুনতে আমি রাজী নই। তোমার আর কিছু বলার আছে?
- রাগ করেছেন?
- আমি কে ? রাগ করার?
- বাবার অধিকার নেই? মেয়ের ওপর রাগ করার?
- বাপ? কীসের বাপ! যে বাপকে এমন দুম করে ছেড়ে চলে যেতে বাধে না, সে আবার কীসের বাপ? আর খবরদার! আমায় প্রণাম করতে এসো না। যেতে হলে এখুনি বিদেয় হও বাজে কথা না বাড়িয়ে।
- আমার যে আর থাকার উপায় নেই বাবা।
- কেন? উপায় নেই কেন?
- যার হাত ধরে এ বাড়িতে আসা, সেই যখন আর মেনে নেয় না...আমি থাকি কোন অধিকারে? কোন নিয়মে?
- কী বলছো মা! সে ভুলেছে ভুলুক, আমি তো তোমায় ভুলিনি। এ সংসার তো তোমায় ভোলেনি মা। বরং তুমি আছ বলে তাও তাঁর সাথে যোগাযোগের রেশটুকু আছে। তুমিও যদি চলে যাও, স্মৃতির শেষ সুতোটুকুও ছিঁড়বে।
- না গিয়ে আমার উপায় নেই বাবা।
- সে তো আলাদা হয়ে সব ভুলেছে অনেকদিন হল। তবে এদ্দিন পরে তোমার সে বেদনা অনুভূত হল কেন?
- আমি তো মনে করতে চাইনি। যেতে চাইনি। হঠাৎ এদ্দিন পরে চারদিক দিয়ে লোকে বলতে শুরু করেছে। আর লোকের কথা একবার যখন শুরু হয়েছে তখন আমি মুখ বুজে থাকি কী করে? আমায় যেতে দাও বাবা। যেতে দাও।
- কিছুতেই থাকবে না মা? আমার এ বাংলা ঘর আলো করে, থাকবে না কিছুতেই?
- পূর্বের হাত ধরে পশ্চিম হয়ে এ ঘরে এসেছি। পূবের পাশে পশ্চিম, পশ্চিমের পাশে পূব, চিরকালের নিয়ম। তা পূবই যখন নেই, তখন পশ্চিম হয়ে থাকি কী করে আর বাবা? আমায় যেতে দাও। সময় হয়ে এলো।

Comments

Anonymous said…
👌🏻
Anonymous said…
Khub bhalo laglo :)

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু