Skip to main content

বালিশবাবুর অফিসে - ২

- এস ও এস। এস ও এস।
- এ কী! বলা নেই কওয়া নেই, এমন জরুরী তলব?
- 'এ কী' বলে তো আমার চমকে ওঠা উচিৎ। চেয়ার থেকে উলটে পড়া উচিৎ।
- চেয়ার থেকে উলটে পড়া? রিয়েলি?
- আই মিন, চমকে আমার ঘাড় লেতকে যাওয়া উচিৎ। মুখ দিয়ে এক গাদা থুতু বেরিয়ে আসা উচিৎ। 
- কেন! হলটা কী?
- এ'টা আমার গায়ে কী?
- জামা!
- ধেত্তের! এমন বিদঘুটে রঙচঙে কেন?
- বিদঘুটে? ট্রাইকলর তো!
- ট্রাই কী?
- তেরঙ্গা। ঝন্ডা উঁচা রহে হমারা।
- এ'সব কী?
- ভারতের পতাকার রঙের জামা। বুকে গেরুয়া। পেটে সাদা। নাভীতে অশোক চক্র। কোমরে সবজে। আজ দেশের স্বাধীনতা দিবস।
- সাদাটা ঠিক ছিল। গেরুয়া আর সবুজে চোখে কি ঝিলিক দিচ্ছে জানেন? ব্রেনে চাপ পড়ছে জানেন? ম্যাগোহ্‌!
- ব্রেনের কন্ডিশনিং দরকার। দেশকে চেনা দরকার।
- দেশ কে?
- কান্ট্রি। যেখানে আপনার জন্ম!। আমার জন্ম!। আপনার মায়ের জন্ম!
- দেশ হাসপাতাল?
- ম্যাক্রো লেভেলে যেতে আপনার সময় লাগবে।
- আপনার স্বপ্নে আমার অঢেল সময়। বলুন। কেয়া হ্যায় দেশ? দেশের জন্য চোখে ফোস্কা পড়া জামা পরব কেন?
- শাট আপ! স্টপ বিং ইনসেন্সিটিভ।
- জামায় বাহাত্তরটা রঙ থাকলে বেশি সেন্সিটিভ হত?
- এই ট্রাইকলর সিম্বলিক। আপনার দেশের। আপনার পরিচিতির।
- তাই তো জিজ্ঞেস করছি। দেশ কী? যেখানে আমার জন্ম? কলকাতার উডল্যান্ডস নার্সিংহোম?
- নাহ্। যে মাটিতে জন্ম। জননী জন্মভূমিশ্চ...না কী যেন।
- অপারেশন থিয়াটারে মাটি ছিল?
- ধ্যাত্তেরি। যে মাটিতে আপনার বাড়ি, হাসপাতাল! যে মাটিতে আমি টু পাইস করে খাচ্ছি, আপনাকে খাওয়াচ্ছি। বেসিক্যালি যে মাটি আপনাকে খাওয়াচ্ছে। সেই মাটি হচ্ছে দেশ।
- দেশের ব্রেস্ট মিল্ক আছে?
- মেটাফরিকালি আছে।
- রাইট অ্যান্ড লেফ্‌ট, বোথ?
- ইয়ে। টেকনিক্যালি। অ্যান্ড অলসো মেটাফরিক্যালি। ইয়েস।
- তো। দেশ হচ্ছে একটা এনটিটি যাকে মিল্ক করা যায়। রাইট আর লেফ্‌ট ইয়ে থেকে।
- না। ওয়েট। ভুল দিকে টানছেন।
- টানতে হয়। না টানলে ইট ডাজ নট ফ্লো।
- শাট আপ।
- এ কী! ফিজিক্স পড়েননি? আমিও পড়িনি। তবে আপনি দামড়া। যাক গে। রিফ্রেজ করছি। দেশ হচ্ছে লাইক আপনার ওয়াইফ।
- আরেকবার রিফ্রেজ করুন। নিজের মাকে বারবার 'আপনার ওয়াইফ' বলে ডাকাটা অসভ্যতা।
- উনি আপনার ওয়াইফ নন?
- আগে আপনার মা!
- আপনার বিয়ের আগেই আমি জাইগোটে ছিলাম?
- সরি। ইউ আর রাইট। দেশ হচ্ছে আপনার বাবার বৌ। করেক্ট।
- অরিজিনাল ব্রেস্ট মিল্কের জন্য আমায় হাবিজাবি কিছু পরতে হয় না। মেটাফোরিকাল মিল্কের জন্য অ্যাকচুয়াল চোখে সার্ফগুঁড়ো দেওয়া জামা পরতে হবে?
- উফ। জামাটা হচ্ছে আ টোকেন অফ রেস্পেক্ট।
- ফিজিকাল টোকেন অফ রেস্পেক্ট ফর সামথিং মেটাফরিকাল?
- ও'টা আমাদের পতাকা।
- নতুন টার্ম টেনে আনছেন স্যার।
- বাবা বলে ডাকতে পারেন।
- বাবা ডাক ফোটেনি এখনও আমার মুখে।
- বাতেলা ফুটেছে।
- বাঙালি হয়েছি আপনার দোষে। পতাকা কী?
- দেশের প্রতীক!
- বেশ। আমি আমার দেশের প্রতীক হিসেবে হালকা আকাশী নীল রঙ ঠিক করলাম। ও'টাই আমার দেশের রঙ। এবার আমায় ওই নীল জামাটা পরিয়ে দিন। বুকের প্যালপিটেশনটা কমুক একটু।
- না না। ইট ডাজ নট ওয়ার্ক দ্যাট ওয়ে।
- কেন?
- পতাকার রঙ প্রি ডিসাইডেড!
- কে করলে? কেন করলে? দেশ আমার, পতাকা আমার। মাহ্‌ লাইফ মাহ্‌  দেশ, মাহ্‌ রুলস মাহ্‌ পতাকা।
- নো স্যার।
- নো মানে? মগেরমুলুক নাকি?
- আরে এ'সব ন্যাশনাল আইডেন্টিটির ব্যাপার।
-ন্যাশনাল কী?
- দেশ সম্বন্ধীয়।
- দেশ কার?
- আমার। আপনার। সবার।
- আমারটুকুর পতাকা ফতাকা আমি বুঝে নেব।
- আরে বাবা তা হয় না। দেশের সবার পতাকা এক।
- কন্সেপ্টে গলদ আছে। আপনার পতাকা আমার কাছে ক্যাটক্যাটে। আমার দেশকে আমি ও পতাকায় স্ক্যান্ডালাইজ হতে দেব না। আমি বরং ভাবছিলাম স্কাই ব্লু ব্যাকগ্রাউন্ডে নেভি ব্লু ফ্লোরাল ডিজাইন। মাঝে মাঝে কার্টুন ডাইনোসর।
- এই ভাবে হয় না বস্ ।  আপনার মধ্যে ন্যাশনাল প্রাইড ইঞ্জেক্ট করার দরকার আছে। জন গন মন।
- জন গন মন কী?
- জাতীয় সঙ্গীত।
- তাতে কী?
- দেশের গান। দেশের পতাকার মত। জাতীয় গর্বের আধার।
- আমার দেশের গানও আমায় ঠিক করতে হবে।
- আরে বাবা আপনার দেশের গান পতাকা সবই ঠিক করা আছে। আগে থেকে। সবুর করুন, গর্ব জেনারেট হলো বলে।
- দেশের গান পতাকা নিয়ে গেল কাকে, আমি কাকের পিছনে দৌড়ব? তা'তে গর্ব হবে?
- নিয়ম।
- নিয়ম করে গর্ব?
- নিজের দেশ। গর্ব করবেন না?
- লে হালুয়া।
- লে হালুয়া কে শেখাল?
- দেবু কাকা।
- দেবুর কোনও সেন্স নেই। রাস্কেল।
- আজ আরেকটা শব্দ প্রথম শুনলাম। শিখলাম।
- কী?
- রাক্সেল।
- না। চোপ।
- রাস্কেল। রাস্কেল। এবার বলুন। দেশ কে নিয়ে কীসের গর্ব? আরও আছে তো? অন্য দেশটেশ?
- আলবাত। শয়ে শয়ে দেশ। কিন্তু সকল দেশের সেরা, আপনার দেশ।
- সকল দেশের সেরা? কে বলেছে? আমি বলিনি।
- গুনীজনে বলেছেন। সারে জঁহা সে অচ্ছা।
- বেসিস?
- ভায়ের মায়ের এত স্নেহ, কোথায় গেলে পাবে কেহ! গান আছে। শুনে দেখবেন, বুক চিনচিন করবে।
- দেবুকাকা ইয়ে কালি কালি আঁখে গাইলে আমার বুকে চিনচিন হয়।
- দেবুটা হারামি।
- আর একটা শব্দ। শিখলাম।
- উফফ। শুনুন। আপনি দেশকে ভালোবাসবেন। সে ভালোবাসা তৈরি করা আমার রেস্পন্সিবিলিটি।
- আলবাত ভালোবাসবো দেশকে। কিন্তু শয়ে শয়ে দেশ। একটু বুঝেশুনে নিতে হবে না?
- কী বুঝে নিতে হবে?
- কোন দেশকে ভালোবাসা দরকার। মানে..কার পতাকা ভালো, চোখে জ্বালা করে না। কার জাতীয় সঙ্গীতের সাথে কালি কালি আঁখের মিল আছে। সেই দেশ বেছে নিয়ে গর্ব করব'খন।
- আরে ধ্যার রে বাবা। ইট ডাজ নট ওয়ার্ক দ্যাট ওয়ে। আপনার দেশ ফিক্সড। পতাকা ফিক্সড।  ন্যাশনাল অ্যান্থেম ফিক্সড। গর্ব জেনারেট যা করার এই নিয়েই করতে হবে।
- হারামি। রাস্কেল।
- চোপ। চোপ। এ'টা কী হল?
- না মানে, দেশের চয়েসেও ফ্লেক্সিবিলিটি নেই?
- নেই।
- মানে। জাস্ট লাইক চয়েস অফ ফাদার।
- রাইট।
- লে হালুয়া।
- চোপ।
- জাইগোটেই মনে হচ্ছিল সামথিং ইজ অ্যামিস।
- সরি।
- ইটস ওকে। এই ক্যাটক্যাটে তেরঙ্গা নিয়ে তো আপনাকেও দাঁত বের করে চোখ ছলছল করে থাকতে হয়।
- না মানে, এত মিল্ক করছি, এ'টুকু অ্যাডজাস্ট করব না?
- হুঁ। তবে শুনুন। এবারে আমার অফিস ছেড়ে বেরোন। সোফায় ফিরে যান, যেখানে আমা কোলে নিয়ে বসে ঢুলছিলেন। এমার্জেন্সি।
- এক নম্বর? দুই?
- বমি। গেরুয়া সবুজ মিলে ব্রেন এমন ঘেঁটে গেল। জাগুন। জাগুন। জয় হিন্দ।

- ক্রমশ-

Comments

arthit said…
Porte porte mone holo " Kamalakanter Daptar" flavour pacchi . Excellent.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু