Skip to main content

আলোচনা

- বলেন কী মশাই, সুইসাইড?
- ইচ্ছে আছে।
- হঠাৎ?
- ইচ্ছে হল।
- চাকরী নট?
- প্রমোশন হচ্ছে এবার।
- প্রেম?
- বেড অফ রোজেস।
- কবিতা লিখছেন?
- দাঁতে ব্যথা।
- লাঞ্চে লাউ ছেঁচকি ছিল?
- কাতলার কালিয়া। সাথে হাফ কোয়া লেবু। গতকাল ছিল পাঁঠা। আজ ফিরব গড়িয়াহাট হয়ে, পাবদা মনে টান দিচ্ছে।
- তবে?  রশখ?
- স্রেফ।
- নিহিলিস্ট?
- ডেফিনিশন জানি না।
- এক্সট্রিম ল্যাদ?
- হতে পারে।
- লাগবে না?
- কীসে?
- মারা যেতে? লাগবে না? ঝাঁপ, ঝুলে পড়া, পোড়া...।
- আমার আবার সেন্সিটিভ স্কিন। সে'টাই বদার করছে।
- কোন ভাবে স্পেসে গিয়ে স্পেস্ক্র‍্যাফট থেকে ফ্লোট করে বেরিয়ে যেতে পারলে বেশ হত.. ভাসতে ভাসতে এক্কেরে গ্র‍্যাভিটি পুলের বাইরে..কাজ হতে পারে।
- লাইক ক্যাপ্টেন্ড হ্যাডক? তবে ওই...বর্দ্ধমান ইউনিভার্সিটি। বিকম। অনার্স বাদে। নাসা নেবে? নাহ!
- ঘুমের ওষুধ?
- থ্রিল নেই। টুপটাপ মরে গেলেই হল? ইম্প্যাক্ট চাই। মেট্রো আটকে যাবে। বাড়িতে আগুন। মেঝেতে রক্ত।
- চা খাবেন?
- দুধ চা ভাই। আড়াই চামচ চিনি।
- ওয়েটার ভায়া, এদিকে। হাঁ, দু'টো চা। বাড়তি চিনি দিয়ে যাবেন। আর চিকেন ওমলেট দু'টো। নহি। অউর কুছ নহি। হুঁ। এবার বলুন।
- কী বলব?
- সুইসাইড। হঠাৎ এমন ইচ্ছে হল কেন?
- শখ। বললাম যে।
- এমন শখ কেন?
- শখের প্রাণ গড়ের মাঠ, শোনেননি?  শখ থ্রাইভস অন বেসলেসনেস।
- কিন্তু এই যে আপনার ডেলি প্যাসেঞ্জারি থাকবে না, আলুর চপ থাকবে না, নিউজচ্যানেল থাকবে না, চায়ে আড়াই চামচ চিনি থাকবে না, মন খারাপ হবে না?
- ধুরধুর। সব বিষ। বিষ।
- প্রেমিকা থাকবে না। মায়ের ভাত বেড়ে দেওয় থাকবে না।
- প্রেমিকার নতুন প্রেমিক হবে, তার অনার্স থাকবে। মা দাদাকে ভাত বেড়ে দেবে।
- হুঁ। তাহলে ডিসাইডেড?
- কনফার্ম। টোটালি।
- মেথড?
- চায়ে আড়াই চামচ করে। প্রত্যেকবার। দিনে দশবার। ক্রমশ রক্ত ক্রিস্টালাইজ করে যাবে।
- সিরিয়াসলি?
- সিরিয়াসলি? মাথায় আসছে না। মানে প্রসেসটা সাংঘাতিক কিছু হওয়া উচিৎ।  সাপও মরবে আবার লাঠিও দিব্যি চুরমার হবে  গোছের।
- বুঝলাম না।
- মানে ধরুন, একটা এক্সপ্লোশন! সে'টা একটা অর্গ্যাজম হতে পারে, জিভে একটা দুরন্ত স্বাদ হতে পারে, অবিস্মরণীয় কোনও দৃশ্য হতে পারে। এমন একটা বিস্ফোরণ যাতে হৃদযন্ত্র যাবে আটকে।
- কিন্তু তার জন্য আপনার আমায় দরকার হল কেন? এমন হুড়মুড় করে আমায় এই কেবিনে ডেকে আনার কী মানে? আমি কী করে সেই বিস্ফোরক সুইসাইড টেকনিক আপনাকে বাতলে দেব?
- আপনি বাতলে না দিলে কে দেবে? আপনার মত অ্যাপ্টিচিউড বা সেনসিটিভিটি আমার চেনা আর কারুর আছে বলে মনে হয় না।
- ফ্ল্যাটার্ড। কিন্তু ইউটোপিয়ান সুইসাইডের টিপ দেওয়া আমার কাজ নয়। বললাম তো।
- অমন ডিসমিস করে দেবেন না। বড় আশা করে আপনাকে ডেকেছি।
- আচ্ছা আপনার ব্যাপারটা কী বলুন তো? প্রত্যেক মঙ্গলবার কোন না কোন অদ্ভুতুড়ে সাব্জেক্ট আলোচনা করতে আমাকে ডাকেন এই কফি কেবিনে। কোনওবার সিরিয়াল কিলার হওয়ার ব্যাপারে সাজেশন চান, কোনওদিন প্ল্যানচেট নিয় গল্প, কোনওদিন অর্গি, কোনওদিন জিরাফ পোষার প্রস অ্যান্ড কনস। আজ সুইসাইড। আরে মশাই আপনি পেয়েছেনটা কী বলুন তো?
- চটবেন না প্লিজ। চটবেন না। আপনি ছাড়া আর কে আছে বলতে পারেন? যে শুনবে? যে বুঝবে? যার মুখোমুখি বসে দু'চারটে মনের কথা আগুপিছু না ভেবে বলা যায়? আছে কি কেউ? নেই। নেই। নেই। আপনি চটবেন না প্লিজ।

**

ওয়েটার ১ -  এগারো নম্বর টেবিলে ফের সেই মাল এসেছে! ওই যে! ছিটগ্রস্ত!

ওয়েটার ২ - ওই সেই উদ্ভট স্যাম্পলটা তো? ওই একটানা বিড়বিড় করে যাওয়া ভদ্রলোক? প্রতি মঙ্গলবার এসে যে নিজের জন্য জোড়া চা আর জোড়া অমলেট অর্ডার করে?

Comments

Anonymous said…
শেষ ভাল তাই ........ ।
S Banerjee said…
Bhalo laglo.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু