Skip to main content

গান

“এসো এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে”, গাইছিলেন অনন্তবাবু, “বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছো অন্তরে”। আজ অফিস থেকে একটু বেশিই আগে বেরিয়ে পড়েছিলেন। সামান্য ফাঁকি আর কি! অনন্তবাবু তো কবিতা লিখতে পারেন না, তাই হিসেব লেখার কেরানীগিরির কাজে আলতো ফাঁকি দেওয়াটাই তার কাছে কবিতা লেখার মত আরামের।ব্যাচেলর হওয়ায় জীবনটায় একটা দরদী জেল্লা আছে। বাজারপত্তর নেই, বউয়ের ব্লাউজ কেনার বা বাপের বাড়ি যাওয়ার বায়না নেই, ছেলে-মেয়ের এটা দাও সেটা দাও নেই।  বিকেল পাঁচটার মধ্যে বাড়িতে ঢুকে লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে ঝুল বারান্দায় বসে পড়া। কাঠের চেয়ারে হেলান আর বেঁটে বেতের মোড়ার উপর পা। খাসা। হাতে এক কাপ লেবু চা, নিজের বানানো। এক বাটি মুড়ি মধ্যে এক পিস্‌ বেগুনী, অফিস ফেরতা নিধুর চপের দোকান থেকে আনা। আগে আনতেন দু’পিস্‌ করে। মাগ্যির বাজারে একটা বেগুনীই যথেষ্ট, তাছাড়া বয়স বাড়ছে- দু’খানা বেগুনী হজম করার দিন আর নেই।

অনন্তবাবুর সুর নেই তবে গলাখানা আবেগে ঠাসা। তিনি সত্যিই গান ভালোবাসেন, তিনি জানেন জীবনে আবেগটাই হচ্ছে আসল বেগ আর আবেগের ইসবগুল হচ্ছে গান। বাথরুমে, মিনিবাসে, রান্নাঘরে, ফুটপাথে, সর্বত্র গান গেয়ে চলেন তিনি। কখনো চাপা মিনমিনে গলায়, কখনো বাঁজখাই কণ্ঠে। তবে গান তাকে ছেড়ে যায় না। অনন্তবাবুর বন্ধু নেই, আত্মীয় নেই, গান আছে। রবীন্দ্রনাথ থেকে আধুনিক, সমস্তই চলে তার। এমনকি রফি মুকেশের হিন্দি গানেও বিশেষ পিছপা নন তিনি। তিনি জানেন যে গান আর কষা মাংসের কোন জাত হয় না, যে কোন ফর্মেই তারা সদা উপাদেয়। অবশ্য পাঁঠার মাংসের যা দাম হয়েছে আজকাল, মাসে একবারের বেশী ম্যানেজ করা মুস্কিল। গান গাওয়াটা অবশ্য ফ্রী।
  
সেদিন অলির কথা শুনে বকুল হাসে গানটার অন্তরার একটা বাঁকে এসে চোখে জল এসে গেছিলো অনন্তবাবুর।  “আকাশ পারে ওই অনেক দূরে”, এইখানটায় এসে গানের সুরের সে কী বাঁক নেওয়া। শিউরে উঠতে হয়।

**

-   অনন্ত, অ্যাই অনন্ত। হোয়াট আর ইউ থিঙ্কিং? অমন ভ্যাবলার মত বসে কী ভাবছিস। হারি আপ, মিটিং শুরু হল বলে।
-মিটিং?
-ওই। কী রে। পাঁচ কোটির ডীল সামনে আর তুই অমন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে বসে আছিস? ক্যুইক। ল্যাপটপটা বগল দাবা করে চল। টাইম নেই।
-ও।
- ও মানে? কী রে। জেগে স্বপ্ন দেখছিস নাকি?
-এক রকম তাই। স্বপ্নই দেখছিলাম।
-স্বপ্নে কী দেখলি? ডিল ক্র্যাক্‌ড? গুপ্তা আমাদের প্রপোজালে রাজী হয়ে গেছে? হাই ফাইভ?
-স্বপ্নে দেখলাম আমি গান গাইছি।
-হোয়াট?
-গান গাইছি। এসো এসো আমার ঘরে এসো। স্বপ্নে গুপ্তা বা পাঁচ কোটি ছিল না।  মুড়ি বেগুনী আর লুঙ্গী ছিল।সে অনন্ত আনন্দের ব্যাপারস্যাপার সমস্ত।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু