Skip to main content

অমু ও অফিস

জামরুলের পাতার মত একটা ফিসফিসে ভালো লাগা গন্ধ অমুর মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। বসের সামনের চেয়ারে বসেই বেশ অফিস বিরোধী আরামে গা এলিয়ে আসছিল তার। কানের মধ্যে একটা নরম ঝিমঝিমকড়ে আঙুলের ডগায় এক ফোঁটা সর্ষের তেল নিয়ে কানের ভেতর আলতো করে বুলিয়ে নিলে যেমন ভালো লাগে- ঠিক তেমনটা। জিভে সামান্য শুকনো লংকার আদুরে রেশ রয়ে গেছিলোলাঞ্চে আজ অফিসের পাশের ফুচকাওলার থেকে আনা আলু কাব্‌লি ছিলোডাল,ভাতঅমলেটের পাশাপাশি। জিভের ঝালটাও ভালো লাগায় এসে মিশছিলো।

টেবিলের উলটো দিক থেকে ঝড়ের বেগে উড়ে আসছিলো খিস্তি, অফিসের পরিবেশের হিসেবে যা যথেষ্ট কাঁচা। বস আগুন। অমুর কাজ নিয়ে অবিশ্যি বস বিশেষ অনুযোগ করার সুযোগ পান না। তবে “মুখে মুখে তর্ক” করার অভ্যেসেটা যে অমুকে একদম কর্পোরেট ইতর বানিয়ে দিচ্ছে দিন দিন, এটা নিয়েই তলোয়ার শানাচ্ছিলেন ত্রিপাঠি সাহেব; অর্থাৎ বস। এটিকেট  জ্ঞানের অভাব নিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় হচ্ছিলে অমু।

প্রথমে অমুর মেজাজ গেছিল বিগড়ে। কান দু’টোর গরম হয়ে যাওয়া সে মোক্ষম টের পাচ্ছিল। বেফালতু ওয়ার্ক এথিক্‌স নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন মানে হয়! অমুর দোষ বলতে বসের টাইপ করা একটা অফিস মেমোর বানান ও ব্যাকরণ ভুলগুলোর ওপর লাল কালির কলম দিয়ে গোল্লা পাকিয়ে বসের কাছেই ফেরত পাঠিয়েছিল সে “প্লিজ   এডিট” কমেন্ট জুড়ে। সেই যে ত্রিপাঠি সাহেবের মেজাজে পেট্রোল আর জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি পড়ল, দু’ঘণ্টা পরেও সে দাউ দাউ নেভেনি।

অমুর রাগ অবশ্য সহজেই পড়ে গিয়েছিল। এরপর ঘুম পাওয়া শুরু হলো। বসের সামনে বসেও ঢুলুনিতে ভেসে যাওয়ার উপক্রম হলো। এক দিক থেকে ত্রিপাঠি সাহেবের এলোমেলো খিস্তি, আর অন্য দিকে অমুর কোদালে হাইয়ের জোরদার টক্কর।  দুপুরের ডাল, ভাত, অমলেটের বহর চলছে। অমুর ঝিমুনিতে ত্রিপাঠি সাহেবের গজরগজরের মোমেন্টাম গেল বেড়ে।

“আনপার্‌ডনেব্‌ল” বলে হুঙ্কার দিয়ে মৌখিক খামচা খামচিতে নেমে এলেন বস। অমুর চাকরিটা যে তিনি চাইলেই সামান্য অঙ্গুলিহেলনে নট করে দিতে পারেন সেটা বিভিন্ন ফরম্যাটে অমুকে জানাতে লাগলেন। ত্রিপাঠি সাহেবের নাচন কোঁদন দেখে অমুর মনে বেশ মজা হচ্ছিল। কালো কোট সাদা শার্টে ত্রিপাঠিবাবুকে অবিকল একটা পেঙ্গুইনের মত দেখায়, রাগ করার বিশেষ উপায় থাকে না।

“আমি তোমার রিজাইন করতে বাধ্য করবো, তোমার মত বেয়াদব কে কী ভাবে টাইট দিতে হয় তা আমি ভালো ভাবে জানি”।

মিচকি হাসলে অমু। টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালে।

“ কোথায় যাচ্ছ ?” – হুঙ্কার ঝাড়লেন ত্রিপাঠি, “অ্যাপোলজি লেটার না দিয়ে তুমি কোত্থাও যাবে না, ইট্‌স অ্যান অর্ডার”।

অমুর মুখের হাসিটা চওড়া হয়ে ঘরময় আলো ঢেলে দিলো। সামান্য ঝুঁকে বসের সামনে থেকে সাদা কাগজের প্যাডটা টেনে নিলে সে। খসখস করে দু’লাইন লিখে, সই করে, বসের সামনে মেলে ধরে বললে:
“আজকাল অফিস টফিসে বাংলায় চিঠি লেখা প্রায় বন্ধ, ইচ্ছে হল বাংলাতেই রেজিগনেশনটা দিই। কেমন?”

ত্রিপাঠি কলকাতার ছেলে, বাংলা ভালোই পড়তে পারেন। অমুর লেখা দু’লাইন পড়তে কোন অসুবিধা হল না তার –

“ ত্রিপাঠি সাহেব,
আপনি টাইট দিতে জানেন। আমি সুকুমার রায় জানি। বারো গোলে ম্যাচ হেরেছেন।
চলি”  


Comments

chupkotha said…
" ত্রিপাঠি সাহেব,
আপনি টাইট দিতে জানেন। আমি সুকুমার রায় জানি। বারো গোলে ম্যাচ হেরেছেন।
চলি”

Thik poshker holo na golpota..
Anuradha said…
thank you ... v inspiring, kokhono nishchoi korbo ... thank you very very much ... very apt, jiboner ekta chorom o porom shotyo

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু