Skip to main content

অপুর সংসার

কদিন ধরে এ সময়ে মেঘ করে আসছে নিয়মিত। বৃষ্টি হচ্ছে না। আকাশ দানা দানা গুমোট জমা করে; তারপর নিজের মনেই অবহেলায় নষ্ট করে দেয় নিজের মেজাজ। দোতলার এই ঘুপচি ঘরের এই সামান্য ফোঁকর; জানালা না বলে বেয়াড়া সাইজের ঘুলঘুলি বললেই মানায় ভালো। সে জানালার চার খানি শিক ঘরখানার মধ্যে কয়েদখানার গন্ধ সঞ্চার করে। ওই শিক গুলো পেরিয়ে দৃষ্টি স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়াল বেয়ে নেমে যায় কলকাতায়, অথবা জলের পাইপ বেয়ে উঠে যায় আকাশে।

এই আধলা জানলাখানা এই ঘুপচি ঘরে ভারি মানানসই। এই ঘুপচি ঘরখানাও আবার এই হাড়গিলে-বুড়ো বাড়িতে মানায় ভালো। ঠিক যেমন ভাবে এই বুড়ো বাড়ির দেওয়াল দিব্যি দাঁড়িয়ে যায় এই ঘিঞ্জি কলাকাতাইয়া গলিটিতে।  ভাবনাদের গায়ে হাত বুলিয়ে দেন অপূর্ব আর সিগারেটের ধোঁয়া মাখানো দৃষ্টি ছুঁড়ে দেন জানালার ওপারে।

ঘুপচি ঘরে আধ ভাঙা জলচৌকি। একটা কুঁজো। অল্প বাসন। দুটো হাত পাখা যার একটা ভাঙা। একটা আশি পাওয়ারের বাল্ব। সতের বছরের পুরনো একটা টেবিল ফ্যান; যার খাজনার থেকে বাজনার পরিমাণ দৃষ্টিকটু ভাবে বেশি।

অপূর্ব জানালায় মন বসান। বিকেলের আকাশ-মেঘ ফাঁকির তাল করছে। অপূর্ব নিজের সত্তর বছরের গালের খসখসে চামড়ায় হাত বুলিয়ে নেন। হাসি আসে, সঙ্গে কাশি। ওষুধের কথা মনে পড়ে যায় তাঁর। ওষুধের কথা মনে আসতেই কালচে দেওয়ালের কালচে ফ্রেমে বাঁধা লালচে ফটোয় চোখ চলে যায়। ঘরের আলো ঘোলাটে না তাঁর দৃষ্টি; স্থির বুঝতে পারেন না তিনি। না কি স্মৃতি টলমল করছে বলে এমন আবছায়া ?
অপর্ণা কে নিশ্চিত চিনতে পারেন না তিনি। অবশ্য তাঁর এই ঘুপচির ডাইমেনশনের তুলনায়; অপর্ণা কে বাদ দেওয়া  পঁয়তাল্লিশ বছরের আয়তন আকাশের মত ছড়ানো। উত্তাল।

দু সেকেন্ডের মধ্যেই তাঁর দৃষ্টি ফ্রেম থেকে জানলায় নেমে আসে। সিনথেটিক কাপড়ের ময়লা পর্দাটা এক দিকে টানা, কিন্তু তা সামান্য নড়ছে। এসেছে। হাওয়া এসেছে। অপূর্ব’র হাততালি দিতে ইচ্ছে করে। শহরের হাওয়াকে ঘরে বসিয়ে চা খাওয়াতে ইচ্ছে করে। অবশ্য আরথ্রাইটিসে যেভাবে কাবু তিনি, চৌকি ছেড়ে স্টোভের কাছে হেঁটে যাওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। সেই সন্ধ্যে সাতটায় কাজের মেয়েটা আসবে, তবে এক কাপ চা। তারপর সে দুটো রুটি আর একটা হাবাগোবা তরকারি রেঁধে বেড়ে রেখে যাবে তাঁর চৌকীর মাথায় রাখা এক পায়া ছোট টেবিলে।

অপূর্ব ধমক দিয়ে মনকে জানালায় ফেরত আসতে বলে। এ পাশে ঘুপচি, ও পাশে আকাশ আছে। রামমোহন এই মাত্র এসে বসলে জানালার কার্নিশে।> চড়ুই হলে কি হবে, তাঁর দেমাক বেশ। রোজ এখানে এসে বসলেও, অপূর্ব’র সাথে আলাপের বিন্দু মাত্র ইচ্ছা কোনোদিনই সে প্রকাশ করেনি।

তবে লিপি রামমোহনের মত অত চঞ্চল নয়। একে মেয়ে, তার ওপর কচি বয়স। সর্বোপরি সে চড়ুই যেহেতু নয়, দুমদাম উড়ে পালাতেও পারে না। লিপি কচি অশ্বত্থ গাছের চারা। জানালা গোঁড়ার দেওয়াল চিরে দিব্বি বেয়ে উঠেছে। টসটসে খান কুড়ি পাতা তাঁর বুকে। অপূর্ব’র গল্প-আড্ডা ফাঁকি দিয়ে উড়ে যাওয়ার জো তাঁর নেই। অপূর্ব অবাক হয়ে ভাবে, মেয়ে বলেই কি লিপির এমন বন্দিনী দশা ?

জানালার শিক দিয়ে হাত গলিয়ে দিলেই লিপিকে স্পর্শ করা যায়। তবে সন্ধ্যে নামার আগে পর্যন্ত রামমোহন আশেপাশে ঘুরঘুর করে। তাঁর সামনে লিপিকে ছুঁতে হাত কাঁপে অপূর্ব’র।  

সন্ধ্যে গাড় হতেই লিপির প্রতি সটান হাত বাড়িয়ে দেন অপূর্ব। কলকাতা, বাল্বের ঘোলাটে আলো, ফটো ফ্রেম; এ সবই বে-ফালতু হয়ে আসে তাঁর কাছে। ছোটবেলা ফিকে হয়ে আসে। তাঁর মায়ের কথা, দিদির কথা ছলছলে আবছা হয়ে যায়। পড়ে থাকে লিপির নারীত্ব।
অপূর্ব শিউরে ওঠেন লিপির বুকের ওপর হলহলে সবুজ পাতা জোড়ায় হাত দিতে গিয়ে। কচি বুক সে মেয়ের। বয়েসে তাঁর গোড়ালিরও নিচে। কিন্তু লিপি মেয়ে,  অপূর্ব’র হাতের মুঠোয় থাকা কার্নিশ বন্দী এক অসহায় মেয়ে। অপূর্ব বহুবার বকেছেন নিজেকে। আহা! ওই টুকু মেয়ে। কিন্তু সন্ধ্যের অন্ধকারে রামমোহন সরে যেতেই সমস্ত গোলমাল হয়ে যায় তাঁর। নিজের ডানের হাতের আদুরে মুঠোয় লিপিকে মুচড়ে চলেন অপূর্ব। লিপির শরীরের সমস্ত পাতা খাবলে চলেন তিনি; লিপি তখন পুঁচকে মেয়েটুকু নয় – নারী, পূর্ণ নারী। অপূর্বর ডান হাত কখনও বেসামাল হয়ে বোঁটা শুদ্ধু উপড়ে ফেলে লিপির বুকের কোনও পাতা।

ক্রমশ তাঁর বাঁ হাত নিজের কোমরের ধুতির বাঁধন আলগা করে দেয়।
  
     

Comments

Unknown said…
Awesome.. great
বড় হয়ে গেলি তো।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু