Skip to main content

রামকুমার ও চিঠি

রামকুমার পরনের শার্টের বুক-পকেট হাতড়ে একটা কাগজের টুকরো পেলেন। এই হচ্ছে এক মুশকিল। বাসের কন্ডাক্টর ভাড়া চাইলে, কিন্তু তাঁর মানিব্যাগ রয়েছে প্যান্টের পকেটে - তিনি বুক পকেটে হাত দিলেন কেন ? কারণ তাঁর বুক পকেটে তো কিচ্ছুটি থাকার কথা নয়। এবার কথা হচ্ছে তাঁর বুক পকেটে যদি কিছু থাকার কথা নাই থাকে, তবে এই কাগজের টুকরোটি এলো কি করে ? দু ভাঁজ করে রাখা ডায়েরির ছেঁড়া পাতা। কাগজটা ভাজ খুলতেই দেখলেন সেটা একটা চিঠি। অস্বস্তিতে পড়লেন রামকুমার। চিঠিটা পড়বার আগে বাস ভাড়া মিটিয়ে দিলেন। রাত সাড়ে নটা বেজে গেছে- বাস প্রায় ফাঁকা, পাশের সিটে কেউ নেই। কন্ডাক্টর চলে যেতেই চিঠিটা মেলে ধরলেন তিনি।

প্রিয় রামকুমার,
আমাদের জগতে আপনাকে স্বাগত জানাই। মৃত্যু’র জগত মৃত নয়; মন্দ তো নয়ই। বরং বেশ রিমঝিম পরিবেশ। আপনার সময় বেশ কেটে যাবে।
ইতি,
সেক্রেটারি, মৃত্যুলোক

মেজাজ খাপ্পা হয়ে গেল রামকুমারের। চিঠিটাকে দলা পাকিয়ে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেললেন তিনি। এ কেমন সস্তা ও বাজে ঠাট্টা! অফিসের মন্টুটা দিন দিন ফাজিল হয়ে উঠছে। মনে মনে মন্টুটাকে বাপান্ত করবেন এমন সময় টের পেলেন বুকপকেটে আরেক পিস চিঠি এসে পড়েছে।

রামকুমার,
খারাপ লাগছে ? ‘অনলি ফিফটী টু’ নিয়ে চিন্তিত ? আরে ধুর, এই কিছুক্ষণ আগেই তো এক সতের বছরের ছেলের ওপর দিয়ে লরি চলে গেল। সে ব্যাটা এখন আমাদের জগতে এসে দিব্বি আছে। চিন্তা করবেন না।
ইতি,
সেক্রেটারি, মৃত্যুলোক

এ চিঠিও ছুঁড়ে ফেললেন রামকুমার। কিন্তু এবার ভেবড়ে গেলেন। এ কাজ অফিসের মন্টু’র নয়। কেউ কোনও কালো জাদু করছে নাকি ? যেই ভাবলেন, অমনি টের পেলেন ফের বুক পকেটে চিঠি এসেছে।

ভায়া রামকুমার,
আপনাকে নেক্সট্‌ চিঠিতে রাম বলে ডাকবো। কেমন ? অবিশ্যি, আমাদের দেখা হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই। চিঠির আর দরকার হবে বলে মনে হয় না।
আর শুনুন, আপনি না ফিজিক্স গ্র্যাজুয়েট ? আপনি ভাবছেন ব্ল্যাক্‌ ম্যাজিক নিয়ে ? ছিঃ।
ইতি,
সেক্রেটারি, মৃত্যুলোক

রামকুমার দরদর করে ঘামছেন। এ সব কি হচ্ছে ? কাকে বলবেন এসব কথা ? এ দিকে মৌলালি আসতে এখনও অন্তত আধ ঘণ্টা। ফের চিঠি।

রাম,
গুরু। আজ আর আপনার মৌলালি যাওয়া হবে না।  
ইতি,
সেক্রেটারি, মৃত্যুলোক

রামকুমার উঠে দাঁড়ালেন। থরথর করে কাঁপছেন তিনি। পরনের জামাটা ঘামে ভিজে গেছে। ঠিক করলেন এই ভুতুড়ে বাস থেকে এখুনি নেমে যাওয়া দরকার। দুদ্দাড় করে বাস থেকে নেমে পড়লেন তিনি। নেমে চট করে ট্যাক্সিও পেয়ে গেলেন।

ট্যাক্সিতে উঠে ঘাম মুছতে মুছতে ট্যাক্সিওয়ালা কে বললেন “মৌলালি চলুন দাদা”।
-   “ মৌলালি যাওয়া হবে না স্যার”, ড্রাইভারটি অম্লান বদলে জানালে।
-   “ যাবে না মানে ? তুমি না গেলে আমি পুলিশে কমপ্লেইন করবো। কাস্টমার গাড়িতে তুলে বলছ যাবে না ? সাহস তো কম নয় ?”, আগুন হয়ে বললেন রামকুমার।
-   “ আরে আপনি এই ট্যাক্সিতে করে মৌলালি যাবেন কি করে। আপনি তো সেই বাসেই পড়ে আছেন!”, হেসে বললে ড্রাইভারটি।
-   “ কি আবোলতাবোল বকছো হে ?”, রামকুমার দিশেহারা।
-   “ঠিকই বলছি স্যার, বুকপকেটের চিঠিটা পড়েই দেখুন না”
উদভ্রান্ত রামকুমার টের পেলেন বুকপকেটে সত্যিই নতুন চিঠি। টের পেলেন মাথাটা ফের টলছে।

রামবাবু,
বাস থেকে অমন হুড়মুড় করে নামতে আছে ? নামার আগে ভালো করে দেখে নেবেন তো; কিছু পড়ে রইল কি না! কি মুস্কিল! এখন দেখুন দেখি কাণ্ড; নিজের মড়াটাই ফেলে চলে এলেন বাসে। এখন সে বাস ডিপোতে পৌঁছলে আপনার ডেড-বডিটা নিয়ে কি ঝামেলা হবে বলুন তো ? আরে মশাই, আগের চিঠিটা পড়বার সময়ই তো হার্ট-ফেল করলো আপনার।
যাক, সেসব চিন্তা করে আর আপনার কি কাজ। ওয়েলকাম।
J
ইতি,
সেক্রেটারি, মৃত্যুলোক

-“ এবার নিশ্চিন্ত হলেন তো স্যার ?”, ট্যাক্সি ড্রাইভারের গলার স্বরে সম্বিত ফিরে পেলেন রামকুমার।
-“এ সব কি হচ্ছে! আপনি কে?”, কাঁপা গলায় জানতে চাইলেন রামকুমার।
ট্যাক্সি ড্রাইভার এক গাল হেসে উত্তর দিলে -  “রিয়েলি বলুন তো, আপনি এখনও বুঝতে পারছেন না এ সমস্ত চিঠি আমিই লিখেছি। আমিই সেক্রেটারি, আপনার বর্তমান দুনিয়ার। আর এ দুনিয়ায় আপনার মৌলালির ফ্ল্যাটের অস্তিত্ব নেই রামকুমারবাবু। ক্যাঁওড়াতলার পাশ দিয়ে আমরা বেরিয়ে যাব। আমাদের দুনিয়ায়। ইউ হ্যাভ লেফ্‌ট অল দ্যাট ইজ ব্যাড অ্যান্ড পেইনফুল রামকুমারবাবু। ওয়েলকাম টু অল দ্য গুড্‌নেস”     

Comments

Disha said…
Asadharon

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু