Thursday, April 3, 2014

পার্টির কাজ

-     “ পার্টির কাজ ? খুব পারবো বিনুদা। আমি খুব খাটবো, দেখো। কিন্তু চাকরিটা হবে তো ?”
-     “ ডিগ্রী দিয়ে তো কিস্যু করতে পারলি না, পার্টিকে ভরসা করে দেখ”
২।
-     “ জান লড়িয়ে দেব বিনুদা। দরকার হলে পাড়ায় প্রত্যেককে জনে জনে বোঝাব। আমাদের পলিসির কথা, আমাদের লক্ষ্যের কথা। কিন্তু ভোট এদিক ওদিক হতে দেব না। তুমি দেখো”
-     “ মুখের ভাষা সকলে বোঝেনা নীলয়। প্রয়োজনে…”
-     “ কিন্তু আইডোলজির কথা যদি…”
-     “ পেটের কথা ভাব। তোর মা’র ক্যানসারের কথা ভাব। আইডোলজিতে পেট ভরে না ক্যানসার সারে?”
৩।
-     “ ছাপ্পা ভোট ?”
-     “ ন্যাকা সাজছিস কেন নীলয় ?”
-     “আমায় এ সব করতে হবে তা তো তুমি বলনি…”
-     “বাকি ছেলেরা কাদা মাখবে আর তুই মাখন চাটবি ?”
-     “ এটা চুরি বিনুদা…”
-     “ চুরি করবি না দলকে বিট্রে করবি ?”
-     “বিনুদা…”
-     “তোর সাইকেলটা অনেক পুরনো হল। ভাবছি তোকে একটা বাইক জোগাড় করে দেব”
৪।
-     “ ভেঙ্গে পড়ছিস কোন সাহসে নীলয় ? পার্টি তোকে মচকাবারও পারমিশনও দেয় নি”
-     “বিনুদা আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে…”
-     “ভিখারির ছেলের বাড়তি দম নিয়ে কি কাজ ? পার্টির থ্রু তে চাকরিটা না পেলে তোর গুষ্টির দম আটকে আসবে; সে খেয়াল আছে?”
৫।
-     “ বোমা বাঁধবো বিনুদা ? আমি ফিজিক্সে অনার্স…”
-     “ বোনের বিয়ের দেওয়ার মুরোদ নেই। মা’র ওষুধ কিনিস পার্টির দয়ায়। হারামজাদা তুই অনার্স দেখাচ্ছিস ?”
৬।
-     “ মাধবটা খুন হয়ে গেল বিনুদা। আমরা খুন করলাম ওকে। জলজ্যান্ত জোয়ান ছেলেটা শেষ হয়ে গেল। এই সেদিনও ওর মা’র হাতের নাড়ু খেলাম…”
-     “ মাধব অপোজিশনের পোষা মাল ছিল। মনে রাখিস এটা বিপ্লবের সময়…
-     “ এটা বিপ্লব ?”
-     “ পার্টি তাই বলে”
৭।
-      “বিনুদা, চাকরিটা ?”
-     “ আর কয়েক মাস ধৈর্য ধর। ইলেকশনটা মিটে যাক”
-     “কিন্তু ভ্যাকেন্সিটা যে আর থাকবে না”
-     “ইলেকশন জিতলে অমন হাজার ভ্যাকেন্সি তৈরি হবে। তোদের জন্যে”
৮।
-     “ অসম্ভব বিনুদা”
-     “ তোর মাকে হসপিটালাইজ করতে হয়েছে। মনে রাখিস। পার্টি না থাকলে…”
-     “ রিভলভার তাই বলে?”
-     “ চালাবি না, সাথে রাখবি”
-     “এমারজেন্সি তে?”
-     “পার্টি সাথে থাকবে”
-     “ চাকরিটা বিনুদা ?”
-     “ গুড বয়”
৯।
-     “ বিনুদা, আমি খুন করিনি। প্লিজ বিশ্বাস করো”
-     “ আমি জানি। পার্টি জানে। কিন্তু দীপক-দা ফাঁসলে ভোটে আমাদের বিপদ আছে। দু মাসের তো ব্যাপার। ভোট মিটে গেলেই তোকে ঠিক আমরা…”
-     “ জেল ? চাকরির লোভ দেখিয়ে শেষে…কেন বিনুদা?”
-     “ পুলিশের সামনে পার্টির নাম একবারও মুখে আনলে তোর জিভ উপড়ে ফেলবো। তোর বোন রোজ এক কলেজ থেকে ফেরে। মনে রাখিস…”
-     “ বিনুদা…”
১০।
-     “ পাগল হয়ে গেলি নাকি নীলয় ? রিভলভারটা আমার সামনে থেকে সরা। ওটা লোডেড। নীলয় কি ছেলেমানুষি হচ্ছে…তুই আমায় খুন করলে চাকরি পাবি ভেবেছিস ?”
-     “ আমার চাকরি পাকা হয়ে গেছে বিনুদা। তপুদা কথা দিয়েছে”
-     “ তপু? তুই অপোজিশন পার্টির সাথে মিলে শেষ পর্যন্ত…”
-     “ দেড় লাখ টাকাও দেবে বলেছে জানো ? পঞ্চাশ অ্যাডভান্স করেছে…”
-     “ নীলয় প্লিজ, আমি তোকে সাইকেল চালাতে শিখিয়েছি…”
-     “ আর শিখিয়েছে বোমা বাঁধতে, খুন করতে”
-     “ নীলয় প্লিজ…”
-     “তুমি খুন হলে তোমার প্রফেসর বউ’ও একা হয়ে যাবে। তাই না ? তারপর সেও একা একা কলেজ থেকে ফিরবে, তাই না বিনুদা?
-     “নীলয়…”   

1 comment:

malabika said...

কি নির্মম সত্যি ভাবনার গল্প এটা। একটা বিশেষ সময় ও আজও এই দারিদ্র্যের থাবায় পড়ে কত ভাল ছেলেমেয়ে শেষ হয়ে গেল। গল্পের ভাবনাটা আমার অতীত অভিজ্ঞতার দুয়েকটি পাতাকে ছিঁড়ে খুঁড়ে রক্তাক্ত করে রেখেছে।