Saturday, September 17, 2011

বং-প্যাকিং




-'প্যাকিং একটা আর্ট বুঝলি পচা, ইন ফ্যাক্ট খুবই আন্ডার-রেটেড আর্ট। তবে যেহেতু ঘুর-ঘুর করবার টেনডেন্সি বাঙালীদের মধ্যেই বেশি, সেহেতু কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে জিনিষপত্র গোছ-গাছ করবার ব্যাপারে আমাদের ফোকাসটা বেশি তীক্ষ্ণ হওয়া দরকার'- মেজোমামা ফি বছর পুজোর ছুটিতে ঘুরতে বেরোয়। ব্যাচেলর মানুষ, এক ঘুরতে বিশেষ ভালবাসে। এবার চলেছে সিক্কিম। দুপুরে খাওয়ার পর নিজের ব্যাগ গোছাতে গোছাতে আমার সাথে কথা হচ্ছিল। রাত্রি বেলা ট্রেন।


-'আর্ট কিরকম?', আমিও গ্যাঁজানোর মেজাজে ছিলাম।


-'ওয়েল, শিল্প, কারণ চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে, কী ভাবে তুই জিনিস পত্তর বয়ে নেওয়াটাকে অপ্টিমাইজ করতে পারবি যাতে তোকে মুটের মত না ঘুরতে হয়, আবার বেসিক জিনিস পত্রের অভাবে ঘুরে বেড়ানোর মজাটাও যাতে ঘষে না যায়। অবশ্য আর্ট শুধু ব্যাটাছেলের লাগেজের ক্ষেত্রেই হতে পারে। মেয়েরা আর্ট-টার্ট মনে না। ওরা বোঝে কোয়ান্টিটি। ইউসলেস, মেয়েদের সঙ্গে কক্ষনও ঘুরতে যাওয়া নয়, ফার্স্ট রুল অফ প্যাকিং, বুঝলি?'


-'সেই জন্যেই বুঝি তুমি বিয়ে করলে না?'


-'সেটা একটা ফ্যাক্টর তো বটেই।'


-'তো প্রথম রুলটা বুঝলাম, নারী সঙ্গে সর্বনাশ, তারপর?'


-'তারপর! তারপর তোকে দেখতে হবে ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যটা কি, তুই কি কোনও অফিশিয়াল ট্যুরে যাচ্ছিস নাকি ছুটি উপভোগ করতে। যদি অফিসিয়াল ট্যুর হয়ে, তবে অবশ্যই সঙ্গে একটা হালকা স্যুইট-কেস, এবং বাকি আবশ্যক জিনিস। ওটাও কোনও চ্যালেঞ্জ নয়, ধরা বাঁধা জিনিস পুরে নিলেই হল। আসল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যখন তুই যাচ্ছিস ভ্যাকেসনে, সাত-আট দিন জুড়ে, বাংলাদেশের এই শস্য-শ্যামলা কম্ফর্ট ছেড়ে কোনও তুবড়ি মার্কা জাগায়। যেমন আমি এবার চললাম সিক্কিমি বিরাশী-সিক্কার এক দুর্দান্ত ভ্রমণে। সাত দিনের ঘুরলি, চাট্টি-খানি কথা নয় পচা। যে লিষ্টি টা বানিয়েছি সেটা তোকে পড়ে শোনাই

'



বলেই মেজোমামা ফস করে পকেট থেকে একটা মুদির ফর্দ'র মত একটা লম্বাটে চিরকুট বের করল




-'মন স্থির করে অ্যানলাইজ করতে হবে, যে ঠিক কি কি দরকার হতে পারে, একটুও বেশি না ; একটুও কম নয়। বুঝলি রে গবেট?শুনে যা এবার :


-হোটেল বুকিং'এর রশিদ। টিক।


-ট্র্যাভেল এজেন্ট কে দেওয়া আমার পকেট কাটার রশিদ। টিক।


-ভোটার পরিচিতি পত্র। টিক।


-শীতের দেশ। প্রোটেকসন দুর্দান্ত চাই, অথচ স্পেস বেশি খরচ করলে চলবে না। উলের সোয়েটার বেশি জাগা নেয়। ক্যানসেল। বদলে রয়েছে চার খান উলিকটের গেন্জী; টু অ্যাট এ টাইম গায়ে চাপাবার জন্যে, লেদার জ্যাকেট, উলের মজা, দস্তানা, মাঙ্কি ক্যাপ।টিক।


-সাত দিনের জন্যে, তিন জোড়া প্যান্ট আর চার পিস শার্ট যথেষ্ট। ঘরের জনন্যে দু জোড়া পায়জামা। একটা বিপদকালীন ব্যবহারের জনন্যে লুঙ্গি। টিক।


-তোয়ালে বাদ। দু জোড়া গামছা ইন। নিপাট, ছিমছাম। টিক।


-ক্যামেরা। বেরিয়ে এলাম, তার দলিল রাখতে হবে তো? প্লাস দু জোড়া স্পেয়ার ব্যাটারি। টিক।


-বাপের দেওয়া ওয়াকম্যান অ্যাবানডান করে আই-পড নিয়েছি, বেশি কিছু স্কোয়ার মিলি-মিটার সেভ করা যাবে। পাহাড়ের গায়ে বসে দেবব্রতর আকাশ ভরা।ট্রীট।টিক।


-জল গরম করার ইলেকট্রিক ফ্লাস্ক প্লাস টী-ব্যাগ্স প্লাস সুগার পাউচ প্লাস ম্যাগী কাপ্পা-মেনিয়া ছয় প্যাকেট। পাহাড়ী-জঙ্গলী জায়গা। খাদ্য বিশ্বাসই আত্মবিশ্বাস।টিক।


-পকেট ডায়েরি, দুটো ডট পেন; একটা পকেটে, একটা স্পেয়ার। ইনফরমেসন গুলিয়ে ফেললে চলবে না। টিক।


-এক্সটেনশন কর্ড উইথ থ্রি সকেটস। চার্জিঙ্গ পয়েন্টের অভাবে মোবাইল বা আইপড ঠিকঠাক চার্জ করতে পারব না,সে বরদাস্ত করা যায় না। টিক।


-ব্যাক-আপ মোবাইল,অন্য সার্ভিস প্রোভাইডারের ব্যাক আপ সিম সহ, মোবাইল'এর জন্যে স্পেয়ার ব্যাটারি! মনে রাখিস পচা, কম্যূনিকেশন ইস দ্য কি। টিক।


-সিক্কিম'এর রোড ম্যাপ, এবং শিলিগুড়ি-তক বাস আর ট্রেন-সার্ভিসের লিষ্টি। টিক।


-গোল্ড-ফ্লেক প্যাকেট এক ডজন, সুখটানে ব্র্যান্ড গরবর অ্যালাউ করা যায় না।সাথে সদ্য গ্যাস ভরানো লাইটার। টিক।


-দাঁড়ি কামবার সরঞ্জাম, দাঁত-খড়কে, জনসনের ইয়ার-বাড, মার্গো সাবান, গায়ে মাখার সর্ষের তেল,কেওকার্পিন হেয়ার অয়েল, কোলগেটের ছোট টুথ-পেস্ট এবং ব্রাস।টিক।


-পুরনো খবরের কাগজ কয়েকটা। কে জানে কখন কোথায় কি লেগে যায়? টিক।


-নাইলনের দড়ি, পাঁচ গজ। ইয়ে, কে জানে। টিক।


-লিকুইড মসকিউটো রিপেল্যাণ্ট।


-প্যারাসেটামল, অ্যান্টাসিড, পেইন-কিলার, ক্রেপ-ব্যান্ডেজ,বদ হজমের গুলি, ব্যান্ড-এইড। ফিসিক্যাল কেলোর পাল্লায় পড়লে চলবে না।টিক।


-শীত-ছমছম দেশ, ভীষণ জরুরী; চ্যবনপ্রাশ।টিক।


-ইসবগুল। টিক।


-সান-গ্লাস। রে-ব্যান রে। এককেবারে চাবুক। পুজোর বোনাস থেকে নামলাম এবার। টিক।


-ফাইনালি, ক্যাশ এবং এ টী এম কার্ড।টিক।


কি বুঝলে বাবা পচারাম?’




-'ধন্য তুমি', সেলাম ঠুকে উঠে পড়লাম।


-'শুনে রাখ, ঠিকঠাক গোছগাছ করতে না পারলে শুধু ঘুরতে যাওয়া কেন? গোটা লাইফটাই মচকে যাবে রে। আর সঠিক গোছগাছ করতে কি চাই? কাগজে কলমে প্ল্যানিং। যেদিন নিজের মাথার গোবর গুলোকে অ্যাডজাষ্ট করে একটু বুদ্ধি-শুদ্ধি জেনারেট করতে পারবি, সেদিন বুঝবি যে প্ল্যানিং কি সাংঘাতিক জিনিষ', বলে পরতৃপ্ত হাসি বুলিয়ে মেজোমামা ফের ব্যাগ গোছানোয় মন দিল।


******


সন্ধ্যে আটটা বাজতেই মেজমামা বেরিয়ে গ্যাল বাক্স-প্যাঁটরা সহ। যদিও ট্রেন সেই রাত দশটায়।


রাত সোয়া নটায় মেজমামার ফোন।


-'পচা, তোকে তুরন্ত হাওড়া স্টেশনে আসতে হবে রে'


-'সে কি? কেন?'


-'ইয়ে, একটা ছোট্ট জিনিস আনতে ভুল হয়ে গ্যাছে'


-'তোমার ভুল হয়ে গ্যাছে? অ্যাত্ত প্ল্যানিং ছড়িয়েও ভুল, কি নিতে ভুলে গেছ?'


-'ওই, আর কি, মানে ট্রেনের টিকিট'টা রে, পচা! বেশি ত্যান্ডাই-ম্যান্ডাই করিস নি এখন। আমার দেরাজটা খুলে টিকিট টা নিয়ে ট্যাক্সি চড়ে জলদি আয়, ট্রেন যে এদিকে মিস হল বলে। আর হ্যাঁ, ভেবে দেখলাম কথাটা পাঁচ-কান করবার কোনও দরকার নেই রে, বহুদিন ধরেই তোর ওহ-ক্যালকাটার ডাব-চিংড়ি খাওয়ার শখ ছিল না? সিক্কিম থেকে ঘুরে এসেই দুজনে মিলে না হয় যাব? প্লিজ পচা, কাম সুন'












1 comment:

Joydeep said...

Namaskar Tanmay-babu,

Internet surf korte korte hothat kore apnar blog ta chokhe porlo. Ek niswas-ey anek gulo post pore fellam. Asadharon laglo- chaliye jan! Apnar lekhay besh ekta Narayan Gangopadhyay-er lekhar chap ache; chomotkar lekhen apni.

Dhonnyobadante,
Joydeep