Skip to main content

সার-কথা


অতিথি লেখক: কেলো


পরিচয়: কোলকাতা-বাসী




ভয়ানক কান্ডএই যে আমি বেঁচে অছি, শিয়ার গডস গ্রেস যাকে বলেট্যাক্সিটা মিনিমাম সত্তরে ছিল, হাফ-ইঞ্চির তফাতে হুশ করে বেরিয়ে গেল।মাইনর এদিক ওদিক হলেই অক্কা, ভাবতেই কেঁপে উঠছি। ঘটনাটার মিনিট পনেরো পরেও, গাএর সমস্ত লোম এককেবারে পারপেণ্ডীকুলার হয়ে আছেবোকা পাঁঠা ভাববেননা আমাকে, রীতিমত জেব্রা ধরে পার হচ্ছিলুমআফটার অল, জন্ম থেকে তো প্রায় কলকাতার রাস্তাতেই মানুষকলকাতা চিরদিনই একটু কেয়ারলেস, কিন্তু সিভিক-সেন্সএর এত অধঃপতনটা কিন্তু হালফিল বেশি দেখছি


ছেলেবেলা কেটেছে উত্তর কলকাতার অলি-গলি চষে, সেসব জাগায় হাত-টানা রিক্সাদের মুভমেন্ট যে ভারী প্রেডিক্টেবল ছিল তা নয়, তবে মোটর-চালিয়ে সায়েব বা ট্যাক্সিচালকরা ছিলেন অনেক বেশি সাবধানী

, ট্র্যাফিকের লাল-বাতি না হোক, অন্তত রাস্তার খান-খন্দদের রেস্পেক্ট দিয়ে স্টীয়ারিং ঘোরাতেন। আজ কাল যে পাবলিকের মাথায় স্পীড-ড্রাইভিংএর কী তুমুল হুলো চেপেছে।



আজকাল অফিস পাড়ায় যাতায়াত করতে হয় নেহাত পেটএর দায়ে, নয়তো কে আসে এই ভীড়ে পাবলিকের জুতোয় নিজের লেজ ইস্তিরি করতে? ( ও হ্যাঁ, ইয়ে, আমি কুকুর, সায়েবি লোম-ব্যাগ নয়, দেশী নেড়ি)। এখন যেখানেই যাওয়া হোক, ভীড়-ভার-ঘাম-দুর্গন্ধ, ধুর! এ জাগায় কুকুর থাকে? আরে এঁটো খাওয়ার খাব ঠিক আছে, কিন্তু তার তো একটা সিস্টেম আছেসিস্টেমটা কি? সোজা ডাস্টবিনে যাবো, অখাদ্য ফিলটার আউট করে, খাওয়ার-দাওয়ার খুঁজে, উদর ভরে চলে আসবো, এই তো? কিন্তু আজকাল মানুষএর সেন্স দেখুন, সমস্ত ডাস্টবিন আজকাল ফাঁকা অথচ যত নোংরা রাস্তায়।সমস্ত সিস্টেমটাই গুবলেট হয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তন যথেষ্ট নয়, নিউক্লিয়ার ফিসন ছাড়া এ শহরের খোল-নলচে পাল্টে দেওয়া অসম্ভব।


ওভার-অল যদি আমাকে ওয়ান টু টেন স্কেলে কলকাতাকে রেট করতে বলেন বাস-যোগ্যতার হিসেবে, আমি দেড় নম্বরের বেশি দিতে পারব না। এই দেড় নম্বর কেন দিলাম বলুনতো ? সিভিক-সেন্স কোসেন্ট তো এ শহরের গোল্লা।দেড় দিলাম এ শহরে সাম্য-বাদ ব্যাপারটা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে বলেওই একটাই পসিটিভ আমি দেখি এই সুপার-নেগেটিভ জগতে


কিরকম সাম্যবাদ? না ইকুয়ালীটি বিটুইন মানুষ এণ্ড পশু। এ জিনিসটা আগে তেমনটা ছিল না বুঝলেন, আগে দেখতাম এ শহরে রাস্তা-ঘাটে কোনও মানুষের সামান্য চোট লাগেল হাজার লোক এসে জুটে যেতে তার শুশ্রূষায়, অথচ আমার মত একটা কুকুর যদি মোটর-ঠোক্কর খেয়ে আধ-মরা হয়েও রাস্তায় পড়ে থাকত, কোনও মানুষই এগিয়ে আসতো না তার প্রাণ বাঁচাতেএটা ছিল আগের ব্যাপার, এবং আজকাল এই ব্যাপারটাতেই কলকাতা এগিয়ে এসেছে সাম্যের পথে। এখন রাস্তার ধারে কোনও মানুষ ভেঙ্গে-চুড়ে পড়ে থাকলেও; তাকে সাহায্য করতে অন্য কোনও মানুষই আর এগিয়ে আসে না উটকো ঝামেলার ভয়ে। ঠিক যেমন করে মানুষ রাস্তায় পড়ে থাকা কোনও আহত কুকুরকে আলতো করে পাশ কাটিয়ে কেটে পড়ে, তেমনি ভাবেই রাস্তায় কোনও বিপদগ্রস্ত সহ-মানবের আর্তনাদকে কুকুরের ঘেউ-ঘেউএর মতই ডিসমিস করে কাঠি রোল-চিলি চিকেনভাবতে ভাবতে আধুনিক কলকাতিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে যানএখানেই কলকাতায় এসেছে টোটাল সাম্য, মানুষ ও জন্তুর মধ্যেএইটুকু পাওনা বুকে করেই, আমি কলকাতা ছেড়ে উত্তরপাড়া চলে যাওয়ার রিস্ক নেব না




পুনশ্চ:


কলকাতাকে কালো কুত্তাবলে গাল দেওয়ার নোংরা অভ্যেসটা যদি কারুর থাকে, তবে তা এই ক্ষণ হইতেত্যাগ করলে ভারী খুশি হই। গালাগালটা অন্তত আমার চামড়ায় ভারী লাগে


ভেউ ভুক; অর্থাত্‍ ভালো থাকুন


Comments

Arjun M said…
এত কিছুর মধ্যেও শুনছি ব্রিগেড এ নাকি "পাগ্ লু" নাচ হচ্ছে। "চল আমরাই চল নিজেরাই বদলে যাই "
ব্যাপক লিখেছেন। স্মার্ট,ঝকঝকে,মেদহীন। দারুণ লাগলো।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু