Skip to main content

পুজোর ছুটির দরখাস্ত



**সেপ্টেম্বর ১৮**

- স্যার৷
- বলে ফেলো ভাইটি।
- বিশ্বকর্মা পুজো ওভার৷
- বাঁচা গেছে৷ ফ্যাক্টরি শপফ্লোরে ওই হইহল্লা সহ্য করা দায়৷
- সেপ্টেম্বর শেষ হতে চলল৷
- করেক্ট। কোয়ার্টার এন্ড৷ মারমার কাটকাট সিচুয়েশন৷ প্রডাকশনে জান লড়িয়ে দিতে হবে৷
- তা তো বটেই৷ অফ কোর্স। জানটান লড়িয়েটড়িয়ে দেব'খন৷
- দ্যাটস দ্য স্পিরিট ভাইটি। জীবনের দু'টো সত্য, বুঝলে। পারলে নোটবুকে লিখে রাখো৷ নাম্বার ওয়ান, জন্মিলে মরিতে হবে৷ নোট করছ তো? গুড৷ নাম্বার ট্যু, প্রডাকশন টার্গেট মিট না করলে কেস খেতে হবে।
- পোয়েট্রি স্যর৷ পোয়েট্রি৷
- গুড। এ'বার তা'হলে এসো৷
- আসি৷ ইয়ে, তবে তার আগে৷ স্যার আসল কথাটাই বলা হয়নি৷
- বলে ফেলো।
- না মানে, সামনে পুজো।
- সামনে কোয়ার্টার এন্ড৷ তারপর ক্যালেন্ডার ইয়ার এন্ড৷ তারপর ফিনান্সিয়াল ইয়ার এন্ড৷
- স্যার, দিন চারেকের ছুটির বড় দরকার৷ সপ্তমী টু একাদশী৷ মাঝে বিজয়াটা অটোমেটিকালি ছুটি৷
- সর্বনাশ৷ ভাই, পারলে শরীর থেকে দু'চার পিস হাড়গোড় খুলে দিয়ে দিতে পারি, ডাংগুলি খেলো৷ কিন্তু ছুটি চেওনা৷
- ওকে স্যার৷ পুজোটো তা'হলে জলে গেল৷
- ব্রাভো৷ ইউ আর আ সোলজার ভাইটি৷ সেল্যুট।
**
**অক্টোবর ৩**
- এই যে ভাইটি৷ তুমি বাড়ি ফেরার টিকিট কবে কেটেছ?
- বাড়ি ফেরার টিকিট?
- ওই যে৷ সপ্তমী টু একাদশী৷
- আপনি ছুটি রিফিউজ করলেন তো৷
- এই নেদু বুদ্ধি নিয়ে তুমি ফ্যাক্টরি শপফ্লোর সামলাচ্ছো কী করে ব্রাদার?
- মানে?
- আমি বস! তুমি জুনিয়র৷ আমার কাজ তোমায় টাইট দেওয়া৷ টাইট না দিলে টীম গোল্লায় যাবে৷ ডিসিপ্লিন ঘেঁটে যাবে৷ প্রডাকশন লাটে উঠবে৷ এ তো কমনসেন্স৷ আর ছুটি চাইলেই যদি হরির লুটের মত বিলিয়ে দিই, তা'হলে তো তোমার মত জুনিয়ররা মাথায় উঠে নাচবে হে৷
- আমি ঠিক বুঝছি না স্যার৷
- তোমার কাজ প্রয়োজনে ছুটি চাওয়া৷ মাইন্ড ইউ, অপ্রোয়োজনে নয়৷ প্রয়োজনে ছুটি চাইবে৷ আমার কাজ সেই হকের ছুটি রিফিউজ করা৷ ক্লীয়ার?
- জলের মত৷
- তারপর তোমার কাজ সে রিফিউজালে আটকে না পড়ে ছুটি ম্যানেজ হবেই ধরে নিয়ে সমস্ত প্ল্যান প্রগ্রাম সেরে ফেলা। আরে! বাপ ধমকে জিওগ্রাফি পড়তে বসাচ্ছে বলে লুকিয়ে কমিক্স পড়বে না?
- কমিক্সটা পড়াই উচিৎ বোধ হয়৷ তাই না?
- হান্ড্রেড পার্সেন্ট৷ তারপর শেষ মুহূর্তে দেখবে ছুটি ঠিক ম্যানেজ হয়ে গেছে৷ ওই যে বললাম৷ কমনসেন্স৷
- হেহ্৷ মানে কী বলে যে আপনাকে স্যার...থ্যাঙ্কিউ৷ আসলে পুজোয় বাড়ি ফিরতে না পারলে মনটা কেমন..। বুঝতেই পারছেন৷ বলছি স্যার, আপনার বাড়িও তো এখানে নয়৷ আপনি পুজোয় বাড়ি ফিরবেন না?
- ভাইটু৷ হেড অফ ফ্যামিলি হওয়ার যে কী জ্বালা। এ ফ্যাক্টরিতে আমার উপরে কেউ নেই, আমার ছুটি রিজেক্টও তাই কেউ করে না৷ আর যে ছুটির আবেদন নাকচ করার কেউ নেই, সে ছুটি আদায় করা যে বড় মুশকিল ভাই৷ তোমরা ক'জন বাড়ি যাও৷ ঘুরে এসো, আই উইল হোল্ড দ্য ফোর্ট৷ কিন্তু মনে রেখো, ছুটি থেকে ফিরে এসে কিন্তু তুমি প্রডাকশনের জন্য বলি প্রদত্ত। মনে থাকবে?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু