Skip to main content

হ্যারিস থেকে কেপি



জর্জ হ্যারিস সাহেব ১৮৯০ থেকে ১৮৯৫ পর্যন্ত বম্বে প্রেসিডেন্সির গভর্নর ছিলেন। তার আগে ছিলেন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন। এ দেশে ক্রিকেটকে দাঁড় করানোর ব্যাপারে হ্যারিস সাহেবের নাকি বিস্তর অবদান৷ কিন্তু সেই অবদানের গল্পগাছাগুলো রামচন্দ্র গুহ তাঁর 'আ কর্নার অফ আ ফরেন ফিল্ড' বইতে সুচারুভাবে খণ্ডন করেছেন৷ সাহেব নেহাতই বিদেশবিভুঁইয়ে এসে নিজেকে 'এন্টারটেনড'রেখেছিলেন দামী মদে আর ক্রিকেটে, তার খানিকটা প্রসাদ বড়জোর প্রজারা লাভ করেছিল। প্রজাদের ভালোমন্দ নিয়ে হ্যারিস সাহেবের তেমন মাথাব্যথা ছিল, এ বদনামও তাকে দেওয়া চলে না। তবে রাম গুহর বইটা নিয়ে লিখতে বসিনি, সে বই সবে পড়া শুরু করেছি।
এই হ্যারিস সাহেবের আত্মজীবনী ছাপা হয় ১৯২১ সালে, সে বইয়ের একটা অধ্যায় জুড়ে রয়েছে তাঁর বম্বে অভিজ্ঞতা। স্বাভাবিক কারণেই, রাজ্যশাসনের অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারস্যাপার নিয়ে নাকি সাহেব তেমন কালি-কাগজ খরচ করেননি, বরং সেই চ্যাপ্টার জুড়ে রয়েছে ক্রিকেট। সে'খানে সাহেব বলেছেন, "গাদাগুচ্ছের নেটিভ ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে বটে, কিন্তু ব্যাটাদের ধৈর্যের বড়ই অভাব। কাজেই গোটা দেশ মিলে চেষ্টা করলেও এরা কোনওদিন আমাদের কোনও কাউন্টি দলের সমকক্ষ হতে পারবে না" (অনুবাদটা রসালো করতে গিয়ে সামান্য রঙ জুড়তে হলো বটে, তবে সাহেবের মূল বক্তব্য এ'টাই ছিল)।
ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত গাইতে হল। আসল প্রসঙ্গে আসি। হ্যারিস সাহেবের আত্মজীবনী প্রকাশের তিরানব্বুই বছর পর আর এক ইংরেজ ক্রিকেট ক্যাপ্টেনের আত্মজীবনী ছেপে বেরোয়। কেভিন পিটারসেনের 'কে পিঃ দ্য অটোবায়োগ্রাফি'। তিরানব্বুই বছরের তফাতে থাকা দু'জন মানুষ বা দু'টো দেশের তুলনা টানা বাড়াবাড়ি, তবে বাড়াবাড়ি এড়িয়ে চলতে হলে এক্সেলে হিসেব কষতাম, ব্লগে বা ফেসবুকে পোস্ট লিখতাম না। কেপির বইজুড়ে জীবনটীবনের মত পাতি-বিলাসিতা নিয়ে তেমন খোলতাই কিছু নেই। গোটাটাই বিতর্কের গরমমশলায় ঠাসা। সঞ্জয় দত্তের জীবনী পড়েও এত গসিপের নাগাল পাইনি যতটা কেপির লেখা পড়ে পেয়েছি।
এমনিতেই যে লেখায় কোদালকে কোদাল বলা হয়, সে লেখা পড়ে বড় আরাম। কেপি মাঝেমধ্যে কোদালকে ডাবল ডেকার বাস বলেছেন, কাজেই এ বই এক্কেবারে যাকে বলে পপকর্ন-সম্মৃদ্ধ। যা হোক, কেপির বইয়ের যাবতীয় বিতর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ 'ট্রিগার' হল আইপিএলের প্রতি পিটারসেনের নিখাদ ভক্তি ও ভালোবাসা। পিটারসেন বলছেন 'আইপিএল খেলেগা', আর ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেট সমাজ চেঁচিয়ে চলেছে 'অমন আদেখলাপনা ভালো নয় ভাইটি'। এ নিয়ে যে কত চুলোচুলি আর কত খামচাখামচি! তবে, আমার মনে হয় এই সমস্ত মশলা পেরিয়ে, আইপিএলের গুরুত্ব খানিকটা ঠাহর করার জন্য অন্তত এ বই পড়াই যায়। হ্যারিস আর পিটারসেনের মধ্যে যে ক'সমুদ্র জল যে গঙ্গা আর থেমস দিয়ে বয়ে গেছে, তা ভাবলেও কেমন লাগে যেন।
এ বই ঠিক সে অর্থে আইকনিক বায়োগ্রাফি হয়ে না উঠলেও আমার পড়তে বেশ লেগেছে। প্রায় প্রতি পাতায় রিভার্স স্যুইপ চালিয়ে গেছেন ভদ্রলোক। কুক, স্ট্রস, ভন; কাউকে তেমন তোয়াক্কা করেননি। আর অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার আর ম্যাট প্রায়্যোরকে প্রায় 'তুই খারাপ, তোর গুষ্টি খারাপ' লেভেলে গিয়ে তুলোধোনা করেছেন। তবে, আমার অন্তত পড়ে মনে হয়েছে কেভিন হিসেব কষে নিজের হয়ে ঘটনা সাজানোর চেষ্টা করেননি। মারকুটে মেজাজে প্রাণ খুলে নিজের কথা বলেছেন, পাঠকের সে'টা মন্দ লাগার কথা নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, ইংল্যান্ড ক্রিকেটের একটা বেশ গোলমেলে অধ্যায় সম্পর্কে বেশ কিছুটা খবর এ বই থেকে আদায় করা যায়। আর পাঠকের যদি কেপির প্রতিটি 'বোমা' পড়ার পাশাপাশি সেই ঘটনার ব্যাপারে সামান্য গুগল করে নেওয়ার ধৈর্য থাকে, তা'হলে 'রীডিং এক্সপিরিয়েন্স' আরও জমাটি হবেই।
আর একটা কথা। আমার ধারণা, নিজের জীবনীতে সৌরভও যদি কেপির মত এমন ফ্রন্টফুটে খেলতে পারতেন, তা'হলে সে বই অনেক বেশি সুখপাঠ্য হত।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু