Skip to main content

শশধর



- মাফ করবেন অনিকেতবাবু৷ এত রাত্রে আপনার ঘুম ভাঙালাম, আই অ্যাম রিয়েলি সরি৷
- আপনিই এই হোটেলের ম্যানেজার তো? চেক ইন করার সময় আপনিই কাউন্টারে ছিলেন না?
- হ্যাঁ। আমিই শশধর বাগচি, রিসেপশনিস্ট কাম ম্যানেজার, অর্কিড হোটেল৷
- এত রাত্রে হঠাৎ.. আগুন-টাগুন লেগেছে নাকি?
- না না৷ আসলে একা রাত্রে চেক ইন করলেন৷ তাই ভাবলাম একটু খোঁজখবর নিয়ে যাই৷
- রাত পৌনে দু'টোর সময় ঘুম ভাঙিয়ে আপনি খোঁজখবর নিতে এসেছেন? হোয়াট ননসেন্স!
- আসলে আপনি চেকইন করার সময় জিজ্ঞেস করা হয়নি..তাই ভাবলাম এখন একবার নক করে জেনে যাই৷
- কী ব্যাপার?
- বলছিলাম, আপনার ভূতের ভয় নেই তো?
- হোয়াট? আপনি কি উন্মাদ?
- আসলে আমাদের হোটেলটা একটু পুরনো তো৷ সামান্য ভাঙাচোরাও বটে৷ আর এলাকাটা এত নিরিবিলি৷ অনেকে হন্টেড হাউস বলে গুজব রটায়৷ তাই ভাবলাম একটু আশ্বাস দিয়ে যাই৷
- ফাজলামো পেয়েছেন? আপনার মতলবটা কী বলুন তো? আমায় ভয় পাইয়ে এক্সট্রা টাকা বাগাতে চাইছেন?
- ও মা৷ আমি তো অভয় দিতে এলাম৷ আরে ও'সব ভূতটূত বোগাস ব্যাপার৷ আপনি একজন স্মার্ট মানুষ, এ'সব ছিঁচকে ব্যাপার জাস্ট পাত্তা দেবেন না।
- আমায় এ'সব বলে আপনি নার্ভাস করতে চাইছেন?
- কম্পলিটলি উল্টো৷ বরং বলি রাতবিরেতে কোনও বিটিকেল চিৎকার মানেই ভূত নয়৷ বেড়ালের মড়াকান্না হতে পারে। অথবা কোনও আননোন সোর্স৷ বা ধরুন জানালার বাইরে দেখলেন সাদা শাড়ি পরা কেউ গাছের ডালে বসে ঠ্যাং দোলাচ্ছে৷ নিশ্চিত জানবেন চোখের ভুল। নিশ্চিত৷ বা ধরুন ঘাড়ের কাছে ঠাণ্ডা নিঃশ্বাস, স্রেফ মনের গোলমাল৷ আরে ভূতফুত বিশ্বাস করলে চলে এ যুগে? আপনি ঘাবড়াবেন না৷ আমাদের হোটেলে যে দু'একটা মিস্টিরিয়াস ডেথ ঘটেছে সেগুলো আর যাই হোক, ভূতের অ্যাটাক নয়। অবিশ্যি নিজে ভূত বিশ্বাসী না হলেও, কাস্টোমার কনফিডেন্স এনহ্যান্স করতে পুরো বাড়িটা আমি মাসে একবার ভগা তান্ত্রিককে দিয়ে ঝাড়ফুঁক করিয়ে নিই৷ মাইনর একটা সমস্যা আছে বটে৷ মাস চারেক হল ভগা আউট অফ স্টেশন৷ গোরখপুরের দিকে কোনও শ্মশানে বসে একটা স্পেশ্যাল কোনও তপস্যা করছে নাকি৷
- আমি চেক আউট করব৷ আর আপনাকে পুলিশে দেব৷
- এত রাত্রে, বাইরে যাবেন? রিস্কি হবে না তো?
- আ..আপনি এমন অসভ্য কেন?
- ভূত বলে আদৌ কিছু নেই, সে কথাটা বুক বাজিয়ে বলছি! সে'টা অসভ্যতা?
- দেখুন, এই আমি রিকুয়েস্ট করছি৷ আমায় আর ডিস্টার্ব করবেন না৷ আমি কাল ভোর ভোরই চেকআউট করে বেরিয়ে যাব৷ এই গোলমেলে হোটেলে আর এক একদিনও নয়৷
- আচ্ছা লোক তো মশাই আপনি! সাত দিনের বুকিং আপনার৷ কাল বেরোবো বললেই বেরোনো যায়? গেল বছর অনিন্দ্য সান্যাল নামে এক মালদার এক বিজনেসম্যান এই তাল করছিলেন৷ ভারি অমায়িক মানুষ, শুধু শুধু অকারণ নার্ভাস হওয়ার ধাত৷ অকারণ ভয়ে কাঠ হয়ে রইলেন, তারপর ভোরের দিকে হুট করে সুইসাইড করে বসলেন৷ সেই সুইসাইডকে কারা যে আবার ভূতের গলা টেপা কেস বলে চালালো, ডিসগাস্টিং৷ আরে বাবা গলায় সাসপিশাস দাগ দেখলেই হল? পুলিশ পোস্টমর্টেম করে ভূতের কেরদানির কোনও প্রমাণ পেল না কেন? আপনিই বলুন, এ'সব করা মানে জাস্ট হোটেলকে বদনাম করা নয়?
- আ..আমি..আমি পায়ে পড়ছি শশধরবাবু। আমি পুরো সাতদিনের হোটেল ভাড়া দিয়েই আমি যাব৷ আজ রাতটা শুধু যাতে কোনও..।
- বললাম তো...ভূতটূত সবই বদ লোকের ফাঁদা গপ্প আর খাজা গুজব৷ আপনি ঘুমোন৷ টাইগার আপনার উত্তরের জানালা পাহাড়া দিচ্ছে৷ এক্কেবারে বাঘের বাচ্চা। আর এ'দিকে আমি তো রইলামই৷ অ্যাট ইওর সার্ভিস৷
- ট..টাইগার? কুকুর বুঝি?
- না না৷ ও বেড়াল৷ মিশমিশে কালো, বুঝলেন৷ এক চোখ কানা হলেও ফেরোশাস৷
- আপনি প্লীজ আসুন৷
- সেই ভালো৷ দরজাটা জানালা প্লীজ বন্ধ করে রাখবেন ভালো করে৷ গুড নাইট অনিকেতবাবু৷ স্যুইট ড্রীমস৷
**
- বিনু।
- শশধরদা। কিছু বলবে?
- বদ লোকটাকে টাইট দিয়ে এসেছি৷
- সে কী! ঝামেলা করেছ কোনও? কাস্টোমারের সঙ্গে গোলমাল বাঁধালে? মারধোর করোনি তো?
- তার চেয়ে বেশি কাজ যাতে হয় সে ব্যবস্থা করে এসেছি৷ রুমসার্ভিসে গিয়ে তোকে এই অসভ্যতা ফেস করতে হবে আমি ভাবিনি রে৷ রিয়েলি সরি রে বিনু৷
- তোমার তো আর কোনও দোষ নেই৷ আর তাছাড়া আমার হাত থেকে ওর ব্যাগটা পড়ে গেল, তাতে নাকি দামী জিনিসপত্র ছিল৷ বড়লোক মানুষ, রাগের মাথায় না হয় একটা চড় কষিয়েই দিয়েছে৷ যাক গে৷ ও আমি কিছু মনে করিনি৷ তুমি খামোখাই এত...।
- এ'সব মানুষদের একটু কাঁপিয়ে দেওয়া দরকার৷ এমন বিটকেল বদলোকদের কান না মললেই নয়৷
- কিন্তু সাতদিনের বুকিং..কাল চলে গেলে তোমার হোটেলের লস হবে না?
- টাকাটাই তো সব নয়৷ তবে চাইলে সে ব্যাটা চোদ্দদিনের টাকা দিতেও রাজি এখন৷ কিন্তু ওই যে বললাম! অমন বদমাইসদের একটু গাঁট্টা না দিলেই নয়৷ যা, তুই শুয়ে পড় গিয়ে৷ আমি রিসেপশনে আছি৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু