Skip to main content

গুলবাজ ও সত্য



- বাজে কথা বলার আর জায়গা পাননি?
- ধর্মাবতার, বিশ্বাস করুন৷ আমি গুলবাজ নই।
- আপনি ২০২১ সাল থেকে এসেছেন?
- আজ্ঞে৷
- আপনি ২০২১ সাল থেকে টাইমমেশিনে চড়ে এই ২০৯৪তে এসেছেন? সরকারি ইনাম পাওয়ার লোভে এত বড় একটা গাম্বাট মিথ্যে বলে যাচ্ছেন?
- আর কতবার বলব ধর্মাবতার৷ এ কথা সর্বৈব সত্য৷
- আপনি মহা ফেরেব্বাজ মানুষ মশাই৷ খামোখা আদালতের সময় নষ্ট করছেন৷ আপনাকে জেলে বন্দী করে টানা দেড় মাস দিনে আড়াই ঘণ্টা করে কাতুকুতু দেওয়া হবে৷
- দোহাই ধর্মাবতার, আমার টাইমমেশিন আবিষ্কার মিথ্যে নয়।
- তা'হলে সেই মেশিনে করে আপনি ফেরত যাচ্ছেন না কেন?
- ও মা৷ একবার ট্র্যাভেল করেই জ্বালানির কেরোসিন শেষ তো৷ আর আপনাদের এ যুগে দেখছি কেরোসিন আর নেই৷
- আপনার ওই টিনের ডিবে কেরোসিনে চলে?
- সঙ্গে একটু রসুনবাটা আর অল্প কর্পূর মিশিয়ে নিতে হয়৷ ফর বেটার মাইলেজ৷
- আপনি গুলবাজিতে নোবেল পাবেন।
- ২০৯৪ সালে গুলের নোবেলও চালু হয়ে গেছে কি? বাহ্৷ শুনে গর্ব হচ্ছে স্যার৷ তবে আমি যাহা বলিতেছি, সত্য বলিতেছি৷ বলুন গীতা, কোরান, বাইবেল..কোনটা ছুঁয়ে বলতে হবে।
- ন্যাকামো করবেন না৷ হাইয়েস্ট রিলিজিয়নের বই ছুঁয়ে বলুন দেখি যে আপনি ২০২১ সাল থেকে টাইম মেশিন বানিয়ে এসেছেন৷ আপনার সামনে ওই যে বই রাখা আছে৷ ওটা ছুঁয়ে বলুন৷
- ইয়ে, আসলে আমি যেহেতু ২০২১ সালের মানুষ৷ আমার জন্য ওই বাইবেল-কোরান-গীতাই ভালো৷ সব কটাই আনিয়ে দিননা৷ সে'গুলো ছুঁয়ে আমি হলফ করে বলে দিচ্ছি আমার এই টাইম মেশিনের কথা৷
- বেশ তো। আমাদের এই সর্বোচ্চ ধর্ম যদি আপনার কাছে গুরুত্বহীনই হয়, তবে এই ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে আপনার যা বলার বলে দিন৷
- ইয়ে মানে...।
- আদালতের হাতে অত খাজা সময় নেই৷ ক্যুইক ক্যুইক৷ ওই বই ছুঁয়ে বলে ফেলুন যে আপনি টাইমমেশিনে চড়ে এ যুগে এসেছেন৷ নয়ত কয়েকমাস কাতুকাতুসহ কারাবাস৷
- আসলে..হয়েছে কী...।
- এখুনি ও বই ছুঁয়ে বলুন নয়ত কিন্তু গোটা বছর কাতুকুতু ডাইজেস্ট করতে হবে৷ ও'সব ওপরচালাকি আমরা বরদাস্ত করব না৷
- মাফ করুন ধর্মাবতার৷ পায়ে পড়ছি৷ আমায় ক্ষমা করুন৷ নেহাতই ইনামের লোভে এত বড় গুল ঝাড়তে গেছিলাম৷ টাইমমেশিন কেন, আমি ভালো করে দেওয়ালে পেরেকও ঠুকতে পারিনা৷ কাজেই আবোলতাবোল ছুঁয়ে এত বড় মিথ্যে আমি বলতে পারব না ধর্মাবতার। আমি গুলবাজ হতে পারি, কিন্তু ধর্মকে কাঁচকলা দেখানোর দুঃসাহস আমার নেই।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু