Skip to main content

বিশের সাহস



- বিশে, কী খাবি বল৷ ট্রীট কিন্তু আমার৷
- হেহ্৷ থ্যাঙ্কিউ।
- কই। মেনুটা দ্যাখ৷
- সাত পাতা৷ কদ্দিন যে ধৈর্য ধরে একটানা সাত পাতা বই পড়িনি৷
- এদ্দিন পর তোর সঙ্গে দেখা হয়ে যে কী ভালো লাগছে।
- আমারও৷
- শেষ বোধ হয় সেই থার্ড ইয়ারে দেখা হয়েছিল, তাই না?
- ট্যু থাউজ্যান্ড অ্যান্ড ফাইভ৷
- এক যুগ প্রায়৷
- তা বটে।
- কই, কী খাবি বল৷
- এত বড় মেনু..। আচ্ছা, এদের চিলি চিকেন নেই? আর হাক্কা চাউ?
- খুঁজলে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে৷ কিন্তু এই হাইক্লাস থাই রেস্টুরেন্টে এসে সেই কলেজ পাড়ার দিলবাহার রেস্টুরেন্ট মার্কা আইটেম অর্ডার করবি?
- সন্তু, তোর মনে আছে দিলবাহারের কথা?
- কলেজের প্রফেসরদের নামধাম তেমন মনে নেই বটে৷ তবে দিলবাহারকে ভোলার দুঃসাহস আমার নেই৷
- হেহ্৷
- তুই কি সত্যিই চিলি চিকেন আর চাউমিন অর্ডার করবি নাকি বিশে?
- অন্য কিছু অর্ডার করার ঠিক সাহস নেই৷ আসলে কী জানিস, এই সুখের চেয়ে সোয়াস্তি ভালো পলিসি আঁকড়েই জীবন কেটে গেল। ভয় হয়, যদি নতুন কিছু খেতে গিয়ে বিটকেল লাগে?
- ভয়?
- ওই৷ যে ভয়ে কলকাতা ছেড়ে যাওয়া হল না৷ পোস্ট অফিসের এই চাকরীটা ছাড়া হলো না৷
- এত ভয় না থাকলে সময় মত রিমির চিঠির উত্তরটাও দিতেই পারতিস৷
- হয়ত পারতাম৷
- আফশোস হয় না?
- আফশোস? আমি একটু নার্ভাস বটে, কিন্তু তৃপ্তির অভাব নেই জীবনে৷ বুঝলি৷ কড়া ঝাল চিলি চিকেন আর মিক্সড হাক্কা গিলে অতৃপ্ত থাকা কি আদৌ সম্ভব?
- বেশ৷ আজ তা'হলে আমারও ওই চিলিচিকেন আর মিক্সড হাক্কা৷
- ঠকবি না৷ গ্যারেন্টি৷
- তুই অদ্ভুত৷
-তেমন কিছু করা হলো না হয়ত। কিন্তু তেমন কিছু করার ডেফিনিশনটা কী সন্তু? 'দিব্যি আছি ভাই' - এ কথাটা মন থেকে বলতে পারাটা একটা সুপারপাওয়ার৷ জানিস?
- আচ্ছা, এই যে খানিকক্ষণ আগে বললি তুই নিয়মিত আরসালানে যাস৷ সে'খানে চিকেন স্ট্যুটা কিন্তু টেরিফিক৷ সে'টা চেখে দেখার রিস্ক নিসনি নিশ্চয়ই কোনওদিন৷
- স্পেশ্যাল মাটন বিরিয়ানি। স্টার্টার৷ স্পেশ্যাল মাটন বিরিয়ানক। মেনকোর্স৷ স্পেশ্যাল মাটন বিরিয়ানি৷ ডেজার্ট। অলওয়েজ৷ উইদাইট ফেল৷
- হেহ্৷ কিন্তু সেই স্ট্যুয়ের স্বাদ কোনওদিন জানতেই পারলি না তো।
- পারলাম না৷ কিন্তু দিব্যি আছি যে ভাই৷
- রিমি তোর চিঠির অপেক্ষা করেছিল কিন্তু৷
- দিব্যি ছিলাম যে রে ভাই৷
- তাতে মনে পড়ল৷ আসল কথাই তো জানা হয়নি৷ তুই বিয়েথা করেছিস নিশ্চয়ই?
- তুই কি সত্যিই চিলিচিকেন চাউমিন অর্ডার করতে দিবি না?
**
- কেমন লাগল দেখা করে?
- বিশে ব্যাটা ওই আগের মতই রয়ে গেছে।
- তাই?
- তা, তোমার ব্যথা আছে এখনও?
- তুমি একটা যাতা৷ এত বছর পর এইসব লেগপুল করার কোনও মানে হয়৷ একটা প্রেমের চিঠি না হয় লিখেইছিলাম ওকে। সে'টা জাস্ট ঝোঁকের মাথায়৷ প্রেমবিয়ে শেষ পর্যন্ত তো তোমার সঙ্গেই সারলাম৷
- নাহ্৷ তোমার ভাগ্যে সে স্বর্গসুখ ছিলই না৷ বিশের জীবনের চিলিচিকেন-চাউমিন হয়ে ওঠা চাট্টিখানি কথা নয়৷
**
সন্তুর সঙ্গে ডিনার সেরে বাড়ি ফেরার মুখে একটা ছোট বারে ঢুকে পড়েছিলেন বিশেকুমার। ওল্ড মঙ্ক ছাড়া কোনও মদ অর্ডার করতে কোনও দিনই সাহস হয়নি৷ তিন পেগ খেয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। খানিকক্ষণ পর দেরাজ থেকে পুরনো ফাইল বের করে বছর সতেরো আগের লেখা খানসাতেক চিঠি বের করে এনেছিলেন ভদ্রলোক৷ প্রতিটাই রিমিকে লেখা৷ সাতখানা চিঠিতে অন্তত চুয়াত্তরখানা 'ভালোবাসি'৷ তবে একটা চিঠিও রিমিকে দেওয়া হয়নি৷ কারণ সন্তুর বন্ধুত্বের কলকাতা-চাউমিন-পোস্টঅফিস স্বস্তি খোয়ানোর সাহস বিশেকুমারের সে'দিনও ছিল না, আজও নেই।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু