Skip to main content

বংপেন, ওয়ারেন হেস্টিংস এবং গুপ্তধন



প্রকাশকের অফিস থেকে ফোন।

- তন্ময়?
- বলুন।
- একটা জরুরী ব্যাপার!
- বংপেন ৭৫য়ের এই এডিশন শেষ?
- হে হে হে। রিল্যাক্স৷
- বংপেন আরও ৭৫য়ের এই এডিশন খতম?
- মুড়ি চপ নিয়ে বসেছি ভাই, অমন হাসিও না প্লীজ৷
- তা'হলে ওই জরুরী ব্যাপারটা..।
- বলছি৷ ব্যাপারটা ইয়ে..একটু কনফিডেনশিয়াল..।
- ও।
- গুপ্তধনের ব্যাপারে ইন্টারেস্ট আছে?
- ইয়ে, কীসের ব্যাপারে?
- গুপ্তধন৷ বাক্স বাক্স হীরে, বস্তা বস্তা স্বর্ণমুদ্রা..।
- হ্যাঁ মানে, সে তো বেশ রহিসি ব্যাপার৷
- ওয়াল্টার হ্যামন্ডের গুপ্তধন সম্বন্ধে কোনও দিন কিছু শুনেছ?
- ওয়াল্টার হ্যামন্ড? ওই নামটাই আমি শুনিনি৷
- স্বাভাবিক৷ কারণ তার নাম মুছে দেওয়া হয়েছে ইতিহাস থেকে৷ স্বয়ং হেস্টিংস তাকে মুছে সাফ করে দিয়েছেন৷
- হে..হেস্টিংস?
- ওয়ারেন হেস্টিংস৷ গভর্নর জেনারেল। এই ওয়াল্টার সাহেব হেস্টিংসের পার্সোনাল সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছে বছর তিনেক৷ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের মানুষ৷ ভারী করিতকর্মা৷ অবশ্য, সরকারি দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে দেখলে সে নাম আর দেখতে পাওয়া যাবে না।
- হেস্টিংস৷ হ্যামন্ড৷ গুপ্তধন৷ কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে৷
- স্বাভাবিক৷ সহজে বুঝিয়ে দিই৷ এই ওয়াল্টার হ্যামন্ড সাহেব গুপ্তধনের হদিস পেয়েছিলেন। জগৎ শেঠের পরিবারের কেউ সে গুপ্তধন কোনও গোলমেলে জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলেন৷ ওয়াল্টার খুড়ো কী'ভাবে সে সম্পত্তির হদিস পেয়েছিলেন, সে'টা অবিশ্যি কেউ জানে না৷ কিন্তু সে'সব কথা তিনি হেঁয়ালি বেঁধে নিজের ডায়েরীতে লিখে গেছিলেন৷
- বটে৷
- ওয়াল্টার সাহেবের ডায়েরী হেস্টিংসের হাতে পড়ে৷ আর তারপর যা হয়৷ লোভে অন্ধ হয়ে ওয়াল্টার সাহেবকে সরিয়ে ফেললেন হেস্টিংস৷ ভাবলেন সমস্ত সোনাদানা নিজেই হজম করবেন। এমন কি সমস্ত সরকারি দলিল থেকেও ওয়াল্টার সাহেবের নাম উড়িয়ে দেওয়া হল৷ পাছে সেই গুপ্তধনের খবর ছড়িয়ে পড়ে৷ বহুদিন বন্দী রেখে শেষে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল ওয়াল্টারকে৷
- সে'সব আপনি জানলেন কোথা থেকে?
- কোতল হওয়ার আগে পর্যন্ত আধো-অন্ধকার কুঠুরিতে বসে অনেক হিজিবিজি লেখালিখি করে গেছেন ওয়াল্টার সাহেব৷ হেস্টিংসের বাপ-মা তুলে খিস্তি করেছেন এন্তার৷ নতুন করে গুপ্তধনের সংকেতও লিখে রেখে গেছেন৷ লিখেছেন নেটিভদের সম্বন্ধে তার অনেক মতামত৷ ভাবতে পারো যে ভদ্রলোক সে'সময় বসে প্রেডিক্ট করে গেছিলেন যে নেটিভরা একদিন ক্রিকেটের মাঠে সাহেবদের নাকে দড়ি দেবে?
- আরিব্বাস৷
- আর একটা ব্যাপার বলে গেছেন সাহেব তার দ্বিতীয় সেই ডায়েরিতে৷ তিনি নাকি নিশ্চিত যে হেস্টিংসের চোদ্দপুরুষের ক্ষমতা নেই সে গুপ্তধনের হেঁয়ালি ভেদ করার৷ ধুরন্ধর নেটিভরাই পারবে সে হেঁয়ালিতে দাঁত ফোঁটাতে৷
- সে ব্যাপারটা আপনি জানলেন কী করে?
- কারণ..কারণ সে ডায়েরি আমাদের অফিসে আছে৷
- অ্যাঁ?
- হ্যাঁ! অবশ্য ব্যাপারটা মাপা সিক্রেট৷ গুপ্তধন উদ্ধারের সম্ভাবনাটা যেহেতু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না..।
- সে তো বুঝলাম..কিন্তু হঠাৎ এ'সব কথা আমায় জানাচ্ছেন কেন..।
- বাধ্য হয়ে৷
- মানে?
- ওই ডায়েরিটা আমরা কয়েক কপি ছাপিয়েছিলাম৷ নিজেদের টীমের মধ্যে বিলি করব বলে৷ সবাই মিলে মগজ খাটিয়ে যদি ওয়াল্টার সাহেবের ধনসম্পত্তির খোঁজ পাওয়া যায়৷ ব্যাপারটা যেহেতু সেনসিটিভ তাই একটু গোপনীয়তা মেন্টেন করতেই হয়েছে৷ বংপেন ৭৫ আর বংপেন আরও ৭৫য়ের কয়েকটা বাড়িতে জ্যাকেট ছাপাখানায় পড়েছিল। কাজেই ওয়াল্টার সাহেবের ডায়েরিটা বইয়ের আকারে খানকুড়ি কপি ছেপে আমরা ওই বংপেনের মোড়কেই মুড়ে রেখেছিলাম৷ টপ সিক্রেট কোড আর কী৷
- ওহ, কিন্তু আমি তা'হলে..।
- একটা মাইনর সমস্যায় পড়া গেছে৷
- কীরকম?
- ইয়ে, ওই কয়েকদিন পর ওয়াল্টার সাহেবের ডায়েরি ছাপা বইগুলো তাক থেকে নামিয়ে বিলি করতে গিয়ে আকাশ থেকে পড়লাম৷ তাকে যেগুলো পড়ে রয়েছে সেগুলো বংপেনের মধ্যে বংপেনের লেখা৷ কী বিরক্তিকর! এ'দিকে ওই কুড়ি কপি ওয়াল্টার হ্যামন্ডের ডায়েরী বংপেনের জ্যাকেটে বাজারে চালান হয়ে গেছে৷ আমাদের শোরুমে রাখা তোমার বইগুলোতেই সে দুর্লভ ডায়েরির কপিগুলো নেই৷ ও'গুলো এখন খোলা বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
- মাই গুডনেস!
- ক্যালামেটি ভাই৷ একেই বলে ক্রাইসিস। তা বলছিলাম, কেউ কি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে? বংপেন ৭৫ বা বংপেন আরও ৭৫ কিনে তোমার লেখার বদলে কোনও হিজিবিজি ডায়েরি পেয়েছে বলে অভিযোগ করে?
- এখনও তেমন কোনও খবর পাইনি৷
- একটু চোখ কান খোলা রেখো ভায়া৷ গুপ্তধন বলে কথা৷ রিসেন্টলি যারা কিনছে তাদের মধ্যেই হয়ত কেউ..।
- বুঝেছি৷ কোনও খবর পেলেই আমি জানাব। কেমন?
***
ইদানিং যদি কেউ 'বংপেন ৭৫' অথবা 'বংপেন আরও ৭৫' কিনেছেন? বা কেনার প্ল্যান করছেন? আর সে বই হাতে পেয়ে পাতা উলটে যদি বংপেনের গল্পের বদলে ওয়াল্টার সাহেবের ডায়েরি আর গুপ্তধনের হদিস খুঁজে পান, আমায় প্লীজ ইনবক্সে জানাবেন৷ আমি ওয়াল্টার সাহেবের ডায়েরির কপি সংগ্রহ করে আপনার হাতে আদত বংপেন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব৷
আর, বই দু'টো কেনার লিঙ্ক কমেন্টে দেওয়া রইল৷ ইয়ে, মানে বুঝতেই পারছেন৷ ব্যাপারটা একটু সিরিয়াস।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু