Skip to main content

সিলেকশন

- আমি অরূপ দত্ত।
- আমি সুনীল গাভাস্কার।
- আজ্ঞে?
- আপনার নাম জেনে আমাদের কী হবে?
- ও। সরি। আসলে ইন্টারভিউয়ের জন্য এসেছি তো..।
- কী ভাবলেন। আপনার নাম উত্তমকুমার বা হরিদেবপুর হলেই আপনাকে চাকরীতে বহাল করা হত?
- সরি।
- দেখুন। এপলজেটিক মানুষজনকে দিয়ে এ কাজ হবে না।
- ওহ, না না। ঠিক সরি বলতে চাইনি..। আসলে..।
- ফের আমতা আমতা। আবার দু'নম্বর কাটা গেল।
- কত নম্বরের পরীক্ষা?
- বাহাত্তর।
- বাহাত্তর?
- অপছন্দ?
- না না। বাহাত্তর বেশ তো। তা, কত নম্বরে পাশ?
- সাতানব্বই।
- বাহাত্তরে সাতানব্বই পেতে হবে?
- গেল বছর একজন দু'শো বাইশ স্কোর করেছিল।
- ওহ।
- নার্ভাস লাগছে?
- অল্প।
- ফের নম্বর কাটা গেল।
- আর কাটবেন না প্লীজ।
- যে কাজের জন্য আবেদন করেছেন, সে'টা সম্বন্ধে পড়াশোনা করে এসেছেন?
- অবশ্যই। হপ্তাখানেক ধরে নিয়ম করে বিভিন্ন বই জার্নাল ঘেঁটে।
- আপনার দ্বারা হবে না, বুঝলেন। আপনি আসুন।
- এ কী স্যার! পড়াশোনা করে ভুল করেছি?
- বাদ দিন। আপনার স্ট্যাটিসটিকসে আগ্রহ আছে?
- থাকা উচিৎ কি?
- উম। হিসেব কষে পালটা প্রশ্নের বাতিক আছে দেখছি৷ ফের নম্বর কাটা গেল।
- কিন্তু শুনুন...।
- ইতিহাসে আগ্রহ আছে?
- আছে। নেই। আছে। মানে..নেই। মানে...।
- উফ! আপনি মশাই ডোবাবেন। মনের মধ্যে লজিক সাজাতে চেষ্টা করছেন দেখি। এহ্। আপনি যান মশাই। অকারণ সময় নষ্ট করে কী লাভ। নেক্সট ক্যান্ডিডেট প্লীজ।
- স্যার। চাকরীটা আমার বড় দরকার৷ বড্ড দরকার। আর একটা চান্স দিন।
- দেব?
- প্লীজ।
- একটা গুল মারুন।
- গ..গুল?
- কষিয়ে।
-মারাদোনা আমার মেসোমশাই।
- প্রমাণ কী?
- প্রমাণ? ইয়ে, মানে..। এ'টা গুল ছিল তো।
- ও মা। এই আপনার মিথ্যের দম? একটা বাড়তি প্রশ্নেই কুপোকাত?
- কিন্তু প্রমাণ যে সত্যিই নেই।
- প্রমাণে কী হয় অরূপ দত্ত?
- মানে, দুম করে একটা ক্লেম করে বসলাম। প্রমাণ না থাকলে কেমন দেখাবে না?
- ধুর। ও'সব নেকু বুদ্ধি নিয়ে এ চাকরী আপনার জুটবে ভেবেছেন? আপনি জানেন কলকাতার মনুমেন্ট দেখে সম্রাট অশোক 'তোফা' বলেছিলেন?
- হে হে হে হে।
- এমনভাবে হেসে আপনি কাকে ইনসাল্ট করছেন? কলকাতাকে? মনুমেন্টকে? সম্রাট অশোককে? উড়িষ্যাকে? বৌদ্ধ ধর্মকে?
- যাহ্। কী সব বলছেন?
- জুতিয়ে মুখ ভেঙে দেব শালা।
- মানে..।
- হারামজাদা!
- শুনুন..এমন অকারণ..।
- এখুনি সরি বল্ নয়ত জুতিয়ে কলকাতা থেকে বের করে দেব।
- সরি।
- গুড।
- এ'বার আমি আসি।
- কী! প্রমাণ করার দরকার পড়ল? মনুমেন্ট আর সম্রাট অশোকের গুল প্রমাণ করার দরকার পড়ল কি?
- না মানে..।
- কোনও রাজনৈতিক দলের সোশ্যাল মিডিয়া সৈনিক হওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার না। এ চাকরী সবার জন্য নয়৷ কেমন? আসুন৷ নেক্সট ক্যান্ডিডেট প্লীজ।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু