Skip to main content

ছবি বিশ্বাস



ছবির ভালো-মন্দ বুঝিনা। সুন্দর-অসুন্দর বুঝি না। আমার ফ্রেম-বোধ আমার ভাষাজ্ঞানের মতই গোলমেলে। আলোর জ্ঞানের দিক দিয়ে আমার মনের মধ্যে প্রকাণ্ড একদলা অন্ধকার। আই-এস-ও, অ্যাপারচার; এই'সব শুনলে পেটের মধ্যে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ হয়। ইন্সটাগ্র্যাম ঘেঁটে দমাদম ফিল্টার চাপিয়ে দিয়ে ফটোর গায়ে জুনের গরমে কম্বল চাপিয়ে থাকি।
তবু।
আমার ছবি তোলার অন্ত নেই৷ বিশেষত গাড়ি সিগনালে দাঁড়ালেই অজস্র সাবজেক্ট খুঁজে পাই। আদতে সে'সব আগাগোড়াই গুরুত্বহীন। তবু, সুযোগ পেলেই রাস্তায় মোবাইল ক্যামেরা বের করে ঘ্যাচাং-ঘচ। রাস্তার পাশে ফুল, মেট্রোর পিলারের গায়ে মধুবনী মাছের ঝাঁক, অথব অন্ধকার আলো করে হুস করে বেরিয়ে যাওয়া এক উজ্জ্বল লাল টোটো; ক্যামেরার কবল থেকে কারুরই রক্ষে নেই।
ক্যামেরা বাটনে ক্লিক করবার আগে পর্যন্ত মনে হয়, "আহ্, কী চমৎকার একটা ক্যাপচার হতে চলেছে। হাইক্লাস৷ মাপা। এলিগ্যান্ট। লাখটাকার মুহূর্ত"। অথচ ছবি তোলার পর দেখি বাঁকাচোরা একটা ছবি, বেমক্কা জরুরী ব্যাপারস্যাপার সব কেটেকুটে গায়েব। সে ছবি হয় বাড়তি আলোয় ঝলসেছে অথবা অঙ্কে ফেল খোকার মুখের মত অন্ধকার।
তা সেই ভাঙাচোরা ছবির দল অদরকারী। তবুও, গুগল ফটোসে তারা টিকে থাকে। আর, বছরখানেক পর সে'সব ছবি ফিরে আসে বুকমার্ক হয়ে।
এই যে সন্ধের আবছা আলোয় একটা অদরকারী ল্যাম্পপোস্টের ছবি। সে ছবির অন্যের কাছে হিজবিজবিজ কিন্তু আমার কাছে স্মৃতির কোড। সে'দিন হয়ত কোনও বন্ধুর সঙ্গে জোর আড্ডা জমেছিল৷ ওই গোবেচারা ল্যাম্পপোস্টের মধ্যে লুকিয়ে আছে সে বন্ধুর " আরে ব্যাটা আর আধঘণ্টা বস না, অত হুড়মুড় কিসের"! বন্ধুটি আজও হয়ত আছে, কিন্তু আড্ডার অবসর বড় সহজে জোটে না।
অথবা ধরা যাক কেউ চপ ভাজছেন। কাঁপা ছবি, কিন্তু স্মৃতি স্পষ্ট৷ সে দোকানের চপ আমি কোনওদিনও চেখে দেখিনি। তবে সেই চপভাজিয়ের ছবি যে'বিকেলে তুলেছিলাম, সে'দিন রাত্রেই অকারণ মনকেমন। সেই মনকেমনের সুরাহা হয়েছিল বাবুঘাটের হাওয়ার ঝাপটা মুখে লাগিয়ে দু'জোড়া ডিমসেদ্ধ খেয়ে। বছর চারেক পরও সেই চপ-ভাজিয়ের ছবিটা সহজেই বাবুঘাটের ফুরফুরে হাওয়ার আমেজ ফিরিয়ে আনে।
আসলে, কোনও ছবিই বোধ হয় মিথ্যে নয়। কোনও ছবিই ফেলনা নয়। ছবি পুরনো হলেই সে'টার বাজে ফ্রেম, ঝাপসা রঙ বা অন্যান্য যাবতীয় ভুলত্রুটি হাপিস হয়ে যায়। পড়ে থাকে জবরদস্ত ভালোবাসা, নিজের প্রতি। আমরা বোধ হয় প্রত্যেকেই নিজের ব্যাপারে নিজের কাছে বিভূতিভূষণের ভাষায় জবাবদিহি করে থাকি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু