Skip to main content

হেবো গুণ্ডার হবু স্যাঙাৎ

- নাম?

- আজ্ঞে, অনিন্দ্য।

- ঝাঁজ নেই।

- আজ্ঞে?

- নামে ঝাঁজ নেই। অমন নেতানো নাম নিয়ে বড় জোর বেনামি জমির দালালি করা যেতে পারে,গুণ্ডামি নয়। হেবোগুণ্ডার স্যাঙাৎ হতে হলে নামে ধার চাই হে।

- অমন বলবেন না হেবোদাদা। অমন বলবেন না। বড় আশা করে এসেছি আপনার কাছে। গুগল দেখে বোমা বানানো শিখেছি, একলব্য হয়ে ঘরে বসে নিজের খাটের তোষকে ছুরি ঢোকানো প্র‍্যাক্টিস করেছি৷ সবই শুধু আপনার কথা ভেবে। বড় সাধ, একদিন আপনার চরণে নিজেকে সঁপে দেব। বড় সাধ। 

- সে কত লোকের কত রকমের সাধ হয়। কেউ চায় ওবামার সঙ্গে বসে লুডো খেলতে, কেউ চায় মুকেশ আম্বানির ক্যাশিয়ার হতে। চাইতে তো ক্ষতি নেই চাঁদ৷ কিন্তু রামকৃষ্ণ না অনুপম কে একটা বলে গেছে; সব পেলে নষ্ট জীবন।

- একবার যখন আপনার দেখা পেয়েছি হেবোদাদা , ওই শ্রীচরণের আশ্রয় ছেড়ে আমি আর নড়ছি না।

- আইআইটির ক্যাম্পাসে ঘুরতে গেলেই কি আইআইটির একজন হওয়া যায় রে পাগলা? সবুজ ঘাসে গড়াগড়ি খেলেই কি জন্টি রোডস হওয়া যায়? যায় না। আমার আশ্রয়ও ঠিক তেমনই৷ কত খতরনাক খুনী মাস্তান আমার পিছন পিছন ঘুরঘুর করছে। এই তো সে'দিন এক সিরিয়াল কিলার এসে হত্যে দিয়ে পড়ল। কিন্তু..।

- কিন্তু?

- ঘুরঘুর করলেই হল নাকি? আমার স্যাঙাৎ হতে চাইলে থাকতে হবে হাইভোল্টেজ কিলার ইন্সটিঙ্কট৷ মামুলি দশ বিশটা খুন করলেই হল না, ঘ্যাম থাকতে হবে৷ 

- ও নিয়ে ভাববেন না। এ তুলোতুলো নাম পাল্টে ফেলে জংধরা পেরেক মার্কা কিছু একটা রাখব'খন। ফাটাবাঁশ বা আসমানিবেল্লিক গোছের কিছু চলবে?

- বেশ। নামের ব্যাপারটা না হয় কিছু একটা ভেবে দেখা যাবে। কিন্তু শোন, স্যাঙাৎ গভীরভাবে নৃশংস না হলে আমার   চলবে না যে।

- আমি প্রচণ্ড নৃশংস তো। প্রচণ্ড।

- প্রচণ্ড?

- মাইরি হেবোদাদা। মাইরি।

- নৃশংসতায় আমার মন গলানো সহজ নয়৷ ওই যে বললাম, খুনোখুনি ভাংচুর করলেই হবে না৷ 

- আমি যে কী চিজ..।

- শুনি...।

- আমি বিরিয়ানিতে কড়াইশুঁটি আর শসাকুচি ফেলে খাই।

- ইইইইকী...।

- আমি গল্পের বইয়ের পাতায় মাসকাবারির ফর্দ লিখি। তাও স্কেচপেন দিয়ে। 

- না না..না..না। না!

- আমি কেসি দাসের রসগোল্লা চেবানো তৃপ্ত মানুষের কানে ফিসফিস করে কেসিনাগের খটরমটর অঙ্ক আবৃত্তি করে শোনাতে পারি। 

- কেমন একটু অস্বস্তি হচ্ছে এ'বার।

- আমি প্রিয় ব্যটসম্যানের উইকেটের তোয়াক্কা না করে পয়া বসবার জায়গা পাল্টে ফেলতে পারি।

- থাম, থাম, থাম।

-  বাইশটা লম্বা ওগো-হ্যাঁগো চিঠির উত্তরে একটা কাঠকাঠ পোস্টকার্ড পাঠিয়ে দায়িত্ব সেরে নিতে পারি।

-  এদ্দিন কোথায় ছিলি বাবু। বুকে আয় ভাই, বুকে আয়।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু