Skip to main content

খুনখারাপি আর মামলেট


 - ব্রাদার, একটু অপেক্ষা করা যায় না?

- চোপ শালা। বন্দুকের ছ'টা গুলিই গেঁথে দেব মুণ্ডুতে..।

- অপচয় করবে কেন? একটা গুলিতে যদি খেলখতম করা যায়, তা'হলে বাকি পাঁচটা নষ্ট করার কোনও মানে হয়?

- এই! মাইরি! বলছি...।

- ভাতের দানা হোক কি বুলেট। অপচয় দেখলেই বুকে বড় বাজে।

- কপালে পিস্তলের নল ঠেকিয়ে রেখেছি, তারপরেও এত ফটরফটর? আচ্ছা ত্যাঁদড় মাল মাইরি।

-  আমার বাপ, আমার অঙ্কের মাস্টার, আমার মায়া। সবার মুখেই আজীবন ওই এক কথা শুনেছি। আমি নাকি রাম-ত্যাঁদড়। তা ও'টাকে আমি কম্পলিমেন্ট হিসেবেই ট্রীট করি বুঝলে হে। কোনও কিছু একটু না বাজিয়ে আমি এক্সেপ্ট করতে পারিনি কোনওদিনই। 

- মায়া কে?

- আমার স্ত্রী। ওই যে..।

- কে? কে? কে ওখানে?

- আরে ধুর ধুর। এই কলজে নিয়ে মার্ডার করতে নেমেছ? লাশ নামানো কি অতই সস্তা? ও'দিকে কেউ নেই হে। ওই দেওয়ালের ছবিটা দ্যাখো। ওই যে। মায়ার ছবি। সে ফাঁকি দিয়ে সুট্ করে সরে পড়েছে অনেক আগে। মায়ার মত মেয়ে হয় না গো ব্রাদার। এই যে তুমি অসময়ে এলে, শুকনো মুখে তোমার সে কিছুতেই বসে থাকতে দিত না। ঘরে আর কিছু না থাকলে দু'টো ডিম অন্তত চট করে ভেজে দিত। আর কফি। আহা, মায়ার হাতের কফি ভায়া..প্রতি চুমুকে ইউরেকা। 

- ধুত্তোরি। তখন থেকে ভ্যাজরভ্যাজর। 

- তুমিই তো চান্স দিচ্ছ ব্রাদার। বন্দুক বাগিয়ে ঢুকেছ৷ সোজা ঠাই ঠাই চালিয়ে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। তা না করে যেই না ওই বাতেলা ঝাড়া শুরু করেছ তখনই বুঝেছি...স্কিলে খামতি আছে। তা এতক্ষণ যখন গালগল্প হলই, আর মিনিট দশেক দেবে নাকি? ব্রাদার?

- কোনও চালাকি নয় কিন্তু...খুব সাবধান।

- চালাকির দ্বারা মহৎ কার্য ইয়ে হয়না। শোনোনি নাকি?

- দু'মিনিট দেব। তার বেশি নয়।

- পাঁচে রফা কর ভায়া। উইন উইন।

- আমি ঘড়ি দেখছি,  পাঁচ মিনিট পরেই কিন্তু..।

- ঢিশুম। জাস্ট ফাইভ মিনিটস।

- কী হবে পাঁচ মিনিটে?

- পেঁয়াজ কুচোতে গেলে দেরী হয়ে যাবে। মামলেটের বদলে বরং পোচ করে আনি। আর ফ্লাস্কের কফি। 

- খাওয়ার শখ?

- আরে আমার জন্য না। ওই যে বললাম। মায়া নেই বলে তুমি শুকনো মুখে কেটে পড়বে। সে'টি হচ্ছে না। মায়ার খারাপ লাগবে। সে মরে গেছে বটে, কিন্তু উবে তো যায়নি। 

- দত্তবাবু। আমায় আর নার্ভাস করবেন না প্লীজ। আপনাকে খুন করাটা অত্যন্ত জরুরী।

- হাজরা পাঠিয়েছে? 

- আজ্ঞে। সোয়া লাখ পাবো। টাকাটার বড্ড দরকার।

- এ জন্যেই হাজরার মত বিজনেস রাইভাল আমার দু'চোখের বিষ। আর খুন করাবি করা, আমাদের ব্যবসার লাইনে এ'সব একটু না করলে চলবে কী করে৷ কিন্তু তাই বলে আমায় খুন করার রেমুনারেশন সোয়া লাখ? তুমিই বলো ব্রাদার, আমি কি অতই মামুলি?

- আজ্ঞে?

- হাজরা কী ভেবেছে। শুধু বিজনেস টার্নওভারে মেপে নিমাই দত্তের তল পাবে? হাজরা জানে যে নারায়ণ দেবনাথের কমিস্কের ব্যাপারে আমার চেয়ে বড় এক্সপার্ট গোটা দেশে নেই? জানে ও? ও জানে যে যে সতেরোটা ডায়েরী বোঝাই হয়ে আছে আমার লেখা গান? সে গানে সুরও নিজে বসাই আমি? ও জানে? রোজ রাত্রে হারমোনিয়াম নিয়ে ছাতে উঠে আমি নিমাইসঙ্গীত গাই! ব্যবসার খাতিরে খুন করছিস কর, তাই বলে সোয়া লাখের বিনিময়ে আমায় নিকেশ করবে? আটকালচারড ব্রুট কোথাকার। 

- আজ্ঞে দত্তবাবু, আমি ছাপোষা খুনি। ও'সবের আমি কী বুঝি বলুন। 

- ও মা। নারায়ণ দেবনাথ না বুঝলে চলবে কেন?

- খুনটা আমায় করতেই হবে।

- তাই বলে দেড় লাখে? না না। সে অন্যায় বরদাস্ত করা যায় না ব্রাদার।

- পাঁচ মিনিট কিন্তু শেষ হতে চলল।

- যাহ্। একটু ম্যানেজ করো ভাই। ডিমটা ভেজে না দিলে মায়া কষ্ট পাবে। 

- আচ্ছা। ইয়ে, দত্তবাবু। আমি পেঁয়াজ কুচিয়ে দেব? মামলেটই হোক বরং। পোচের বদলে। নিজের জন্যেও না হয় একটা ভেজে নেবেন।

- এই অসময়ে? আমিও খাব একটা? কড়া ভাজা অমলেট? জিভটা যে সুড়সুড় করছে না তা নয়...কিন্তু অম্বলটম্বল হলে..।

- কিছু মনে করবেন না। খুনটা কিন্তু আমায় করতেই হবে দত্তবাবু।

- তাই তো। তা'হলে আর অম্বলের ভয় কীসের বলো ব্রাদার। আচ্ছা, হাঁসের ডিমের অমলেট চলবে? ফ্রিজে এখনও বেশ কয়েকটা আছে।

- তাই হোক। তা..রান্নাঘরটা কোন দিকে? 

- কিচেন এ'দিকে। কিন্তু তুমি গেস্ট হয়ে পেঁয়াজ কুচোবে?

- আমি সুপার ফাইন পেঁয়াজ কুচোতে পারি দত্তবাবু। আমার বৌ হাতে ধরে শিখিয়েছিল। মামলেটের জন্য একেবারে নিখুঁত।

- বটে? 

- আজ্ঞে। ইয়ে..তার নামও ছিল..মায়া।

- ছিল? ব্রাদার?

- সেও এখন ফটো। আমাদের শোওয়ার ঘরের পশ্চিম দিকের দেওয়ালে, তারামা হার্ডওয়্যার স্টোরের ক্যালেন্ডারটার পাশে ঝোলানল। রোজ ঘুমোনোর আগে খোকা সেই ফটোফ্রেমের দিকে তাকিয়ে আমার কাছে গল্প শুনবে। শুনবেই। ওর মায়ের গল্প। মায়ার গল্প। 

- অ।

- আসলে..টাকাটা আমার বড় দরকার দত্তবাবু। খোকার একটা অপারেশন না করালেই নয়। 

- অ। খোকার জন্য। এ সোয়া লাখ তো সোয়া লাখ নয় ভায়া। সোয়া'শো কোটির সমান। শোনো, এখন ডিম ভাজি। তারপর আর দেরী নয়। 

- আমায় ক্ষমা করতে পারবেন দত্তবাবু?

- মায়ার কাছেই যাওয়া তো। আমার বরং একটা হিল্লে হয়ে গেল। একা একা রোজ নিমাইসঙ্গীত গাইতে বসে বুক ফেটে যায় ভায়া, সবটুকুই তো মায়ারই জন্য। কিন্তু তোমার খোকার গল্পগুলো শোনাটা জরুরী৷ আমি তোমায় বাড়তি টাকা দিতেই পারতাম, আমি তো আর ওই হাজরার মত চশমখোর নই৷ কিন্তু এ কাজে ফাঁকি দিলে হাজরা তোমার ছড়বে না হে।

- দত্তবাবু..। হাজরার দলের বাকি লোকেরা বাইরে দাঁড়িয়ে। কাজ হলে লাশ আর প্রমাণ লোপাট করবে বলে। বিশ্বাস করুন আমি যদি খুন নাও করি ওরা আপনাকে..।

- কেঁদো না ভায়া। মাঝেমধ্যেই মায়াকে বলি, আসছি গো। তোমার কাছে আসছি। শুধু সাহসের অভাবে এদ্দিন..। যাক, এই ভালো। তোমার খোকার জন্য আমার হারমোনিয়ামটা দিয়ে গেলাম। বসার ঘরেই রাখা আছে। নিয়ে যেও। আর শোনো, খোকাকে ওর মায়ের গল্পে রেখো, কেমন? দেখো একদিন সে মস্ত বড় মানুষ হবে।

- দত্তবাবু...।

- আর দেরী নয়। পেঁয়াজ কুচোও ব্রাদার। ওমলেটের ব্যাপারটা কুইকলি সেরে ফেলা যাক। নয়ত তোমার স্যাঙাৎরা এসে রসভঙ্গ করবে।

Comments

Souvik D said…
খুব ভালো লাগলো ।
Souvik D said…
খুব ভালো লাগলো ।
JILIN said…
দুঃখ কেনো, খুশির কলম প্রয়োজন

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু